নিভে গেছে একটি পরিবারের স্বপ্ন প্রদীপ
‘মাত্র একদিন আগেও পারিবারিক যে ছবিতে আমরা চার জন ছিলাম, একদিনের ব্যবধানে ছবির তিন জন এখন অতীত। এটি নিয়তির বিধান বলে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করলেও আসলে এটি নিয়তির নির্মম পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়। একটি সড়ক দুর্ঘটনা মুহূর্তে একটি পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে, নিমিষেই নিভে গেছে পরিবারটির স্বপ্ন প্রদীপ।’
দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন বাস ও ট্রাকের রেষারেষিতে পিষ্ট হয়ে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে হারানো মো. মাসুদুর রহমান (৫০)। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ শহরের এসবি ফজলুল হক সড়কের কালাচাঁন মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বনবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মিরপুর দক্ষিণ মহল্লার মৃত ইসাহাক তালুকদারের মেয়ে ইফরাত সুলতানা রুনী (৩৮), তার ছেলে মাশবুবুর রহমান (১২) ও মেয়ে সোয়াইবা রহমান (৬) প্রাণ হারায়।
নিহত স্কুল শিক্ষিকার স্বামী মো. মাসুদুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে সিরামিক শিল্পের কাজে ঢাকার সাভার এলাকায় বসবাস করেন। ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কালেঙ্গা গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে মাসুদুর রহমান ২০০৭ সালের দিকে ইফরাত সুলতানা রুনীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে, চাকরির স্থান সিরাজগঞ্জে হওয়ায় রুনী তার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে সিরাজগঞ্জে বাবার বাসায় থাকতেন।
রোববার দুপুরে ব্যক্তিগত কাজের জন্য ছেলে-মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে রিকশায় করে সিরাজগঞ্জ শহরে যাওয়ার পথে এসবি ফজলুল হক সড়কের কালাচাঁন মোড় এলাকায় একটি বাস ট্রাককে ওভারটেক করতে যেয়ে রিকশায় ধাক্কা দিলে রুনী, তার ছেলে ও মেয়ে প্রাণ হারায়। দুর্ঘটনায় আহত হন রিকশার চালকও।
নিহত রুনীর বড় ভাই মুসফেকুস সালেহীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার বোনের সংসারে আনন্দের কোনো কমতি ছিল না। ছেলেটা থাকত চুপচাপ, আর মেয়েটা ছিল উল্টো। তার স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু, সড়ক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।’
‘রোববার বেলা ১২টার দিকে চশমা মেরামতের জন্য অটোরিকশায় শহরে যাওয়ার পথে এসবি ফজলুল হক সড়কের কালাচাঁন মোড় এলাকায় বেপরোয়া বাস ও ট্রাকের রোষানলে পিষ্ট হয়ে সবাই মারা যায়। কে জানত, ওটাই ছিল ওদের বাড়ি থেকে শেষ বের হওয়া’, কানা বিজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন মুসফেক।
স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হারিয়ে অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে গেছেন মাসুদুর রহমান। ‘এটা তো দুর্ঘটনা না, আমার স্বপ্নকে চুরমার করে দেওয়ার যন্ত্রণা। এভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় যেন আর কোনো বাবার কোল খালি না হয়, আর কোনো পরিবার এভাবে ধ্বংস না হয়’, বলছিলেন মাসুদ।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পুলিশ বাসটি জব্দ করেছে। তবে, বাসের চালক ও হেলপার ঘটনার পর পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।’
Comments