রিজার্ভ চুরি: অপরাধী ৬ দেশের

৫ বছর তদন্ত করে জানতে পেরেছে সিআইডি, যুক্তরাষ্ট্রে মামলা নিষ্পত্তি হলে অভিযোগপত্র

নিউইয়র্কে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশসহ অন্তত ছয়টি দেশের অপরাধীরা জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পাঁচ বছর তদন্ত করার পর পাওয়া এই তথ্য দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একাধিক কর্মকর্তা।

রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারের ঘটনায় নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিসট্রিক্টের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলাটি বর্তমানে চলমান। সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, নিউইয়র্কের আদালতের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে গেলে সিআইডি তাদের অভিযোগপত্র দেবে।

বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করে সিআইডি প্রধান, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান গতকাল বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির ঘটনায় করা মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু, চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে করা মামলাটি এখনো বিচারাধীন।’

‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রে একটি আইনি সংস্থা নিযুক্ত করেছি। কয়েকদিন আগেই আমরা ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছি এবং মামলার বিষয়ে কথা বলেছি। ওই আইনি সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন যে, এটিতে বেশি সময় লাগবে না এবং মামলাটি দ্রুতই নিষ্পত্তি করা উচিত। তারাও মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন’, বলেন তিনি।

সিআইডি প্রধান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে চলমান মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব আমরা আমাদের তদন্তের অভিযোগপত্র জমা দেবো।’

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে চলমান মামলার রায়ের অপেক্ষার বিষয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের জনগণ ও দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে চাই। এগুলো আমাদের জনগণের অর্থ।’

‘যুক্তরাষ্ট্রের ওই আইনি সংস্থার কর্মকর্তা ও বাংলাদেশের আইনজীবী প্যানেলের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, যদি প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান মামলাটি নিষ্পত্তি হয়, তাহলে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার করা সহজ হবে’, বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি করা হয়। ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক (অ্যাকাউন্টস ও বাজেট) জোবায়ের বিন হুদা বাদী মতিঝিল থানায় মামলা করেন।

 অভিযোগপত্র

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই মামলার তদন্তে জড়িত সিআইডির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির কাজটিতে যারা সরাসরি জড়িত ছিলেন, তারা মূলত চারটি দেশের নাগরিক। দেশগুলো হলো— ফিলিপাইন, চীন, শ্রীলঙ্কা ও জাপান।’

‘পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকও এই চুরিতে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থ প্রদানের নেটওয়ার্ক সুইফটে কর্মরত ভারতীয় নাগরিক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাও রয়েছেন’, বলেন তিনি।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘চীন ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে আমরা সাড়া পেয়েছি। শ্রীলঙ্কা ও জাপান ইন্টারপোলের অফিশিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে সাড়া দিয়েছে।’

অর্থ চুরির ঘটনায় কতজন জড়িত ছিলেন, সেই বিষয়ে সিআইডির আর্থিক অপরাধ বিভাগের বিশেষ সুপারিনটেনডেন্ট মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িত এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু, এই সংখ্যা বাড়তে পারে।’

শনাক্তদের মধ্যে অন্তত ২৫ জনই ফিলিপাইনের বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র তৈরি করছি।’ 

যেসব দেশের নাগরিকরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সেসব দেশের কাছে বিষয়টি কীভাবে উত্থাপিত করা হবে, জানতে চাইলে সিআইডি প্রধান বলেন, ‘যারা কাজটি করেছেন, তারা বিভিন্ন দেশে বসে সেটি করেছেন। সে কারণেই এসব দেশের নাম উঠে এসেছে। কিন্তু, এ বিষয়ে সেসব দেশের কিছু করার নেই।’

সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগপত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছয় থেকে সাত জন কর্মকর্তার নামও রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে সিআইডি এখনো আমাদেরকে কোনো তথ্য দেয়নি। এই মুহূর্তে আমরা কীভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করব?’

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা 

বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ চুরির ঘটনার প্রায় তিন বছর পর ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিসট্রিক্টের আদালতে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) ও কয়েকজন শীর্ষ নির্বাহীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আদালত মামলাটি পর্যালোচনা করেছেন এবং রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের যে নাগরিকদের নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।’ 

‘যুক্তরাষ্ট্রের ওই মামলাটির শুনানি শুরু হতে আরও এক থেকে দুই মাস সময় লাগতে পারে। আমরা শিগগিরই মামলাটির ফলাফল দেখব বলে আশাবাদী’, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago