প্রাথমিক স্কোয়াডের বাইরে থেকে কোন ভাবনায় দলে সৌম্য?
চট্টগ্রামে যখন বাংলাদেশ দল উইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে লড়ছে, মিরপুরের একাডেমি মাঠে তখন সাদা বলের অনুশীলনে সৌম্য সরকার। তার আগেই রাজশাহীতে খেলে এসেছেন একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ম্যাচ। লাল বলের চুক্তিতে না থাকা সৌম্যের মূল ফোকাসের জায়গা এখন সাদা বলই। কিন্তু সাদা বলের জগতে আর থাকতে পারলেন কোথায়! আচমকাই যে পেলেন টেস্ট দলে ডাক। সাকিব আল হাসানের বিকল্প হিসেবে দ্বিতীয় টেস্টের দলে নেওয়া হয়েছে তাকে। এই সিদ্ধান্ত দল নির্বাচনের প্রক্রিয়া আর দলের তালগোল পাকানো পরিকল্পনাকে করছে প্রশ্নবিদ্ধ। যার পরিষ্কার জবাব আসেনি অধিনায়ক মুমিনুল হকের কাছ থেকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টের জন্য ২০ জনের যে প্রাথমিক দল দেওয়া হয়েছিল সেখানে ছিলেন না সৌম্য। সেই ২০ জন থেকে বেছে নেওয়া হয় ১৮ জনের মূল স্কোয়াড। তাতে থাকার কারণ নেই সৌম্যের। অথচ সৌম্যকেই এখন খেলতে দেখা যেতে পারে ঢাকা টেস্টে। এমনকি তাকে তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেন করতে দেখার সম্ভাবনাও প্রবল।
এতবড় স্কোয়াড রাখা নিয়ে তখন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু জানিয়েছিলেন, ‘১৮ জনের স্কোয়াড দেওয়া হয়েছে মূলত কোভিড-১৯ মাথায় রেখে। কে কখন অসুস্থ হয় এটা মাথায় রেখেই আমরা স্কোয়াডটা বড় করেছি। তারপরেও যাদের নিয়েছি তাদেরকে আমাদের টেস্ট ক্রিকেটের কথা মাথায় রেখে যে পুল আমরা করেছি বেশিরিভাগকেই রাখা হয়েছে।’
অর্থাৎ চোটে পড়লে সমাধান ছিল ১৮ জনের স্কোয়াডেই। তাহলে ২০ জনের প্রাথমিক দলেও না থাকা সৌম্যকে কেন তলব?
বুধবার ঢাকা টেস্টের আগের দিন দলের অনুশীলন শেষ করে সৌম্যের অন্তর্ভুক্তির ব্যাখ্যায় অধিনায়কের ব্যাখ্যাটা বেশ নড়বড়ে, ‘জিনিসটা হলো পুরোপুরি... যেহেতু সাকিব ভাই নাই তখন আমার যখন আমি আরেকটা খেলোয়াড় নেব, সাকিব ভাইয়ের কারণে দুইটা খেলোয়াড় নিতে হবে। ব্যাটিং-বোলিং দুইটাই পারে এমন একজন খেলোয়াড় দরকার ছিল। যে কারণে ওকে (সৌম্য) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অনিয়মিত বোলার হিসেবে মাঝে মাঝে হাত ঘোরান সৌম্য। ওয়ানডেতে তাকে সাত নম্বরে খেলানোর চিন্তা করতেও বোলিংটা মাথায় রাখা হয়েছে। যদিও উইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচ মিলিয়ে কেবল ১৯টি বল করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
এমন অবস্থায় টেস্টে সৌম্যকে বোলার হিসেবে ভাবা তো রীতিমতো বাড়াবাড়ি। ১৫ টেস্টের ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত ১১ ইনিংসে বল করে ৩ উইকেট তার।
বুধবার সৌম্যকে তামিম ইকবালের সঙ্গে পাশাপাশি নেটে ব্যাট করতে দেখা গেছে। এর আগে সকালে প্রথম স্লিপে অনুশীলন করেন তিনি। প্রস্তুতি আভাস দেয় একাদশেও থাকছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। নেটে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাট করেছেন মোহাম্মদ মিঠুনও। সাইফ হাসানকে স্লিপ ফিল্ডিংয়ের অনুশীলন করতে দেখা গেলেও ব্যাটিং অনুশীলন গুরুত্ব দিয়ে করতে দেখা যায়নি।
তামিমের সঙ্গে সাদমানের জায়গায় সৌম্য ওপেন করতে নামলে, দলের ভেতরের আরেকটি প্রক্রিয়াও পড়বে প্রশ্নের মুখে। ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে সাইফ হাসানের ভূমিকা তাহলে কি?
মুমিনুল বলছেন ম্যাচের দিন সকালে এসে পিস পর্যবেক্ষণ করে একাদশ ঠিক করবেন তারা। একটা টেস্টের ম্যাচের উইকেট দেখে আগের দিনই দলগুলো সাজায় পরিকল্পনা। ঐতিহ্যগতভাবে চট্টগ্রামের চেয়ে মিরপুরেই স্পিনাররা পান বাড়তি সুবিধা, এখানে টার্ন থাকে আরও বেশি। বাংলাদেশ তিন স্পিনার না খেলালেই সেটা হবে বিস্ময়ের। একমাত্র পেসারের সঙ্গে (মোস্তাফিজ নাকি আবু জায়েদ?) সৌম্যকে দ্বিতীয় পেসারের ভাবনায় রেখেছে দল। অন্তত নির্বাচক আর অধিনায়কের কথায় তেমনই ইঙ্গিত।
Comments