‘যারা আজ বিবৃতি দিলেন, এত বছর তারা কোথায় ছিলেন’

নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পৌরনীতি ও নাগরিকতা পাঠ্যবইয়ে গুরুতর অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে তা অনতিবিলম্বে সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন দেশের ২১ নাগরিক। তারা জানান, বইটিতে রাজনৈতিক দলের পরিচিতিতে যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী’কে রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দলটির ঘৃণিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো উল্লেখ নেই।
Professor Harun-Or-Rashid-1.jpg
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। ছবি: সংগৃহীত

নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পৌরনীতি ও নাগরিকতা পাঠ্যবইয়ে গুরুতর অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে তা অনতিবিলম্বে সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন দেশের ২১ নাগরিক। তারা জানান, বইটিতে রাজনৈতিক দলের পরিচিতিতে যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী’কে রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দলটির ঘৃণিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো উল্লেখ নেই।

বইটি লিখেছেন ড. সেলিনা আক্তার, ড. সাব্বির আহমেদ ও মো. রফিকুল ইসলাম। সম্পাদনা করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।

এ বিষয়ে বুধবার রাতে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয়।

অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘এটা বড় ধরনের একটি ভুল, অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তবে এটা হয়ে গেছে, কীভাবে হয়েছে তা আমি বলতে পারব না।’

‘বইটি ২০১২ সালের দিকে লেখা। যারা লিখেছেন তাদের একজনের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, জানতে চেয়েছি বইটি কারা কারা লিখেছেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাকে বলেছি, বইটি আমাকে পাঠাবেন শিগগির। সব দেখে যেখানে যেখানে পরিবর্তন দরকার, সেটি আমি ঠিক করে দেব’, বলেন তিনি।

বইতে কী আছে না আছে বা তথ্যগত ভুল বিষয়ে কি আপনি জানতেন?

তিনি বলেন, ‘আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। নবম-দশম শ্রেণির বইতে কী হলো না হলো, সে খবর কি এখন আমি রাখি? আমি আমার গবেষণা করি, আর যখন একটি বই আমার কাছে আসে, সেটি দেখে দিই।’

‘একটি বই যখন এডিট করতে দিয়েছে, হয়তো ওই অংশ আমার হাতে আসেইনি, কর্তৃপক্ষ নাম দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বইয়ের অংশবিশেষ হয়তো আমি দেখেছি। আমার নজরে আসলে অবশ্যই আমি অন্তর্ভুক্ত করতাম যে, জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধী দল’, বলেন তিনি।

বইটির সম্পাদক আপনি। আংশিক দেখে পুরো বইতে সম্পাদক হিসেবে আপনার নাম ব্যবহার করতে দিলেন কেন?

অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘২০২০ সালের আগে কর্তৃপক্ষ শুধু একবার আমাকে বলেছে যে, বইটি তারা ছাপাতে যাচ্ছে। কিন্তু সেসময় আমাকে সেটি আর দেখানো হয়নি। বইটির কোথাও আমার সাইন করা কোনো ডকুমেন্ট আছে কি না দেখেন। আমি বইটি পুরো দেখেছি বলে স্মরণ করতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, পাঠ্যপুস্তক যারা রচনা করায়, তারা এক শ্রেণীর লোককে দিয়ে তা রচনা করায়, পরে আরেকজনকে দিয়ে বলে যে, একটু এডিট করে দেন। এতে সময় পাওয়া যায় কম এবং সব অংশ অনেক সময় আসেও না।’

‘আমাকে বিতর্কে ফেলার জন্য কেউ চক্রান্ত করেছে সেটি মনে করছি না। বইটি প্রথমে যেভাবে লেখা হয়েছিল, তারপর সংশোধন-পরিমার্জন করা উচিত ছিল। যারা বইটি লিখেছেন তারা বলতে পারবেন, কেন এ কাজ করেছেন’, যোগ করেন তিনি।

এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি মনে করি যে, তারা বড় ধরনের একটি ভুল করেছেন। অনতিবিলম্বে এই বইগুলো ফিরিয়ে নিয়ে সেখানে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা দরকার এবং এটি পাঠ্যপুস্তক বোর্ডেরই দায়িত্ব। পাঠ্যপুস্তক বোর্ড যেটি করে, পাঁচ জনকে দিয়ে একটি বই লেখায়, এটি তাদের ভুল সিদ্ধান্ত।’

সম্পাদক হিসেবে আপনার দায় নেই?

অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘এর দায় স্বাভাবিকভাবেই আমার ওপর পড়ার কথা। তবে আমার বক্তব্য হলো, জামায়াত একটি যুদ্ধাপরাধী দল এবং সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত। আমি সজ্ঞানে মনে করতে পারছি না যে, বইটির এই অংশ আমি দেখেছি বা আমাকে দেখানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা আজ বিবৃতি দিলেন, এত বছর তারা কোথায় ছিলেন, এর আগে তারা এ বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হলেন না কেন? এই বই তো ২০১২ সাল থেকে আছে, তারা ২০২১ সালে এসে এ কথা বললেন কেন? সঠিক সময়ে কি তারাও তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন?’

‘তবে বিবৃতিদাতাদের আমি ধন্যবাদ জানাই’, বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পৌরনীতি ও নাগরিকতা পাঠ্যবইয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয় পর্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নাম লিখেছে। ২০১২ সালের অক্টোবরে প্রথম প্রকাশের পর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বইটির পরিমার্জিত সংস্করণ বের হয়। তবে সর্বশেষ ২০২০ সালে পুনর্মুদ্রিত বইটিতেও বিষয়টি থেকে যায়।

যদিও ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আরও পড়ুন:

নবম-দশম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ের অসঙ্গতি সংশোধনের দাবিতে ২১ নাগরিকের বিবৃতি

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago