সাইফ হাসানের তবে কি দোষ?
ওপেনার হিসেবেই মূল স্কোয়াডে ঠাঁই হয়েছিল তার। প্রথম টেস্টে সাদমান ইসলামকে দল বেছে নেওয়ায় ব্যাকআপ হিসেবেই থেকে গিয়েছিলেন সাইফ হাসান। সে টেস্টে পারফর্ম করা সাদমানের জন্য ঢাকা টেস্টেও জায়গা ছিল অবারিত। ইনজুরিতে তিনি ছিটকে যাওয়াতে স্বাভাবিকভাবেই সুযোগ আসার কথা সাইফেরই । কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মে যে চলে না বাংলাদেশের ক্রিকেট। প্রাথমিক স্কোয়াডের বাইরে থেকে হুট করে দলে আসা সৌম্য সরকারকে ঢাকা টেস্টের একাদশে নেওয়া হয়েছে তামিম ইকবালের ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে। এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠল সাইফের প্রতি কি ন্যায্য বিচার করা হলো? কোন দোষে উপেক্ষিত থাকলেন তিনি?
সাইফের একাদশে জায়গা হচ্ছে না আভাস মিলেছিল ম্যাচের আগের দিন। সাধারণ ম্যাচে যারা খেলেন অনুশীলনেও প্রাধান্য দেওয়া হয় তাদের। তামিমের সঙ্গে পাশাপাশি নেটে ব্যাট করেছেন সৌম্য। মিঠুনকে অনুশীলনে পাওয়া গেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়। তখন ফিন্ডিং আর ব্যাটসম্যানদের সহায়তাকারী হিসেবে অনুশীলনে ছিলেন সাইফ।
সাকিব-সাদমানের বিকল্প হিসেবে এই দুজনই যে খেলছেন অনেকটা পরিষ্কার ছিল তা। ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনেও অধিনায়ক মুমিনুল হক জানিয়ে রাখেন তেমন সম্ভাবনার কথা। সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে মাঝেমাঝে ভিন্ন কিছু করার প্রয়োজন হয় বলে যুক্তি দেন তিনি। সেই যুক্তি গ্রাহ্য হলে সৌম্যকে কেন টেস্ট সিরিজের প্রাথমিক স্কোয়াডে আগে রাখা হয়নি?
অধিনায়ক জানান, সৌম্যকে দলে নেওয়ার কারণ হিসেবে তার বোলিংটাকেও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। অথচ ১৫ টেস্টের ক্যারিয়ারে সৌম্য ১১ ইনিংস বল করেছেন। আরও নির্দিষ্ট করে বললে সব মিলিয়ে ৭৩ ওভারের কিছু বল করে মোটে ৩ উইকেট তার।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটেই নিয়মিত হাত ঘোরান না সৌম্য। সেখানে অনিয়মিত বোলার হিসেবে পরিচিতি তার। অথচ টেস্টে তাকে বিবেচনা করা হচ্ছে অলরাউন্ডার হিসেবে।
বাংলাদেশ দল যখন চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যস্ত, তখন মিরপুরে সাদা বলের অনুশীলন করছিলেন লাল বলের চুক্তিতে না থাকা সৌম্য। ১৮ জনের বিশাল স্কোয়াড দিলেও সাকিবের চোটে আচমকা টেস্টে ডাক পড়ে তার। দেড় বছর আগে সর্বশেষ টেস্ট খেলা সৌম্যকে হুট করে টেস্টে নামিয়ে দেওয়া, এবং অলরাউন্ডার বা দ্বিতীয় পেসার হিসেবে বিবেচনা করা তার প্রতিও কি সুবিচার?
এর আগে ওয়ানডে সিরিজেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার শিকার হয়েছেন সৌম্য। বরাবরই সাদা বলে ওপেনার বা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে পারফর্ম করা সৌম্যকে বানিয়ে দেওয়া হয় সাত নম্বর ব্যাটসম্যান। সেই সৌম্য টেস্টে এসে ফের হয়ে গেলেন ওপেনার এবং দ্বিতীয় পেসার।
দেড় বছর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজের সর্বশেষ টেস্টে সৌম্য দুই ইনিংসে নেমেছিলেন আলাদা দুটি ব্যাটিং অর্ডারে। প্রথম ইনিংসে ওপেনিং করা সৌম্য দ্বিতীয় ইনিংসে নেমেছিলেন আট নম্বরে।
টেস্টে ভাল করার মূলে আছে প্রক্রিয়া অনুসরণ। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের প্রক্রিয়া বলতেই কিছু নেই। কে কখন কোথায় ব্যাট করবেন, নির্দিষ্ট কয়েকজন ছাড়া কে কখন খেলবেন কিংবা বাদ পড়বেন তার কোন ছক নেই।
একজন খেলোয়াড়কে যদি নানান সময়ে নানান ভূমিকায় খেলতে বলা হয়, তার নিজের মনেই তৈরি হতে পারে প্রশ্নের ভিড়। প্রশ্ন, দ্বিধা নিয়ে কেউ কখনই টেস্টে ধারাবাহিক পারফর্ম করতে পারে না কেউ।
কয়েকজন সেরা ক্রিকেটারকে ছাড়া বাংলাদেশে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ হার এড়াতে মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে জিততেই হবে। সে পথে প্রথমেই এসেছে বাধা। গুরুত্বপূর্ণ টস জিতে আগে ব্যাট করছে ক্যারিবিয়ানরা।
‘আউট অব দ্য বক্স’ পরিকল্পনা নিয়ে নামা বাংলাদেশ এই টেস্ট থেকে ফল বের করতে পারে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
Comments