ব্লগার-লেখক হত্যা: আরও ৬ মামলার রায়ের অপেক্ষা

ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার, লেখক ও এলজিবিটি অধিকারকর্মীদের হত্যার ঘটনায় দায়ের করা অন্য ছয়টি মামলা এখন রায়ের অপেক্ষায় বা বিচারাধীন রয়েছে।
অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাশ। ছবি: সংগৃহীত

ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার, লেখক ও এলজিবিটি অধিকারকর্মীদের হত্যার ঘটনায় দায়ের করা অন্য ছয়টি মামলা এখন রায়ের অপেক্ষায় বা বিচারাধীন রয়েছে।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় রায় দিতে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেছেন ঢাকার একটি আদালত।

ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ ও নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়, ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার নাজিম উদ্দিন সামাদ ও এলজিবিটি অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার চলমান।

পুলিশ ইতোমধ্যে এসব মামলায় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমটি আনসার আল ইসলাম নামেও পরিচিত। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের আল-কায়েদার বাংলাদেশি শাখা বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করে না।

প্রত্যেক ভুক্তভোগীকেই ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে একইভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এর মধ্যে চার জনকে ২০১৫ সালের সাত মাসের মধ্যে হত্যা করা হয়েছিল। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের বাসার সামনে ব্লগার আহমেদ রাজিব হায়দারকে হত্যার মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডগুলোর শুরু হয়।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়ার নেতৃত্বে ওই জঙ্গি গোষ্ঠীটি পরিচালিত হয় এবং তিনিই স্লিপার সেলের মাধ্যমে এসব হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছিলেন।

গতকাল পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেকটি মামলার অভিযোগপত্রের প্রধান আসামি জিয়া পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য গোয়েন্দা প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জিয়া দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় গতকাল জিয়াসহ আনসার আল ইসলামের আট সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এর আগে, ব্লগার আহমেদ রাজিব হত্যা মামলায় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার একটি আদালত দুই জনের মৃত্যুদণ্ড ও আরও ছয় জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন।

হত্যাকাণ্ড

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে বইমেলা থেকে বের হয়ে টিএসসির কাছে গেলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলাদেশি ব্লগার অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার ওপর হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই নিহত হন অভিজিৎ। আহত হন বন্যা।

এ ঘটনায় পরদিনই অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট এবং মামলার বিচারকাজও শেষ হয়।

ওই বছরের ১ আগস্ট ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তারা হলেন— জিয়া, আকরাম হোসেন আবির, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, আবু সিদ্দিক সোহেল, আরাফাত রহমান সিয়াম ও শফিউর রহমান ফারাবি।

আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

২০১৫ সালের ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় চাপাতিসহ তিন যুবক ওয়াশিকুর রহমান বাবুর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে। পরবর্তীতে বাবুর বোনের জামাই মনির হোসেন বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা এবিটির পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। ২০১৬ সালের ২০ জুলাই এই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার একটি আদালত। অভিযুক্তরা হলেন— জিকরুল্লাহ ওরফে হাসান, আরিফুল ইসলাম ওরফে মুশফিক, মো. সাইফুল ইসলাম (বর্তমানে কারাগারে), আকরাম হোসেন হাছিব ওরফে আবদুল্লাহ ও জুনায়েদ ওরফে তাহের (পলাতক)।

সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. সালাহউদ্দিন হাওলাদার বলেন, এ মামলায় ৪০ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

২০১৫ সালের ১২ মে সকালে সিলেট শহরের সুবিদবাজারে কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলে হত্যা করা হয় অনন্ত বিজয় দাশকে। পরবর্তীতে জঙ্গি সংগঠনর এবিটি এই হত্যার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২৯ জনের মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন সিলেটের একটি ট্রাইব্যুনাল।

২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর গোঁড়ানের ভাড়া বাসায় হত্যা করা হয় ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে। পাঁচ বছর তদন্ত করে গত বছরের ৪ অক্টোবর জিয়াসহ ১৩ জন সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাজধানীর পুরান ঢাকার হৃষিকেশ দাস লেনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজিম উদ্দিন সামাদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর গত বছরের ১৮ আগস্ট জিয়াসহ আনসার আল ইসলামের নয় সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট। এখন পর্যন্ত অভিযুক্তদের মধ্যে চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ইউএসএইডের সাবেক কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বি তনয়কে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই জিয়াসহ আনসার আল ইসলামের আট সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে পুলিশ। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের চলমান। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago