ম্রো ভূমিতে হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মন্ত্রী, সেনাপ্রধানকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের চিঠি

Mro.jpg
বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে গত রবিবার লংমার্চ করেন ম্রো সম্প্রদায়ের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানে ম্রো ভূমিতে পাঁচ তারা হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সেনাবাহিনী প্রধান এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

একইসঙ্গে, এ প্রকল্পে সব ধরনের সম্পৃক্ততা প্রত্যাহার করতে আন্তর্জাতিক হোটেল চেইন ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল বরাবরও চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের পক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বান্দরবান জেলার বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের ডান পাশে চিম্বুক পাহাড়ের কোলে ৩০২ নং লুলাইং মৌজা ও ৩৫৫ নং সেপ্রু মৌজায় কাপ্রুপাড়া, দোলাপাড়া, ইরাপাড়া ও শোং নাম হুংপাড়ায় (যা চন্দ্র পাহাড় নামে পরিচিত) অন্তত ১০ হাজার ম্রো জনগোষ্ঠীর বসবাস। ওই জনপদে সিকদার গ্রুপের অঙ্গ সংগঠন আর এন্ড আর হোল্ডিং লিমিটেড যৌথ উদ্যোগে একটি সুবিস্তৃত পাঁচতারা স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোক্তারা এটিকে “ম্যারিয়ট হোটেলস্ অ্যান্ড রিসোর্টস” (হোটেল ও বিনোদন পার্ক) বলে বিজ্ঞাপন বোর্ডে প্রচার করলেও ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল এর ভাইস প্রেসিডেন্ট তার স্বাক্ষরিত ১৯ জানুয়ারি, ২০২০ এর চিঠিতে হোটেল ও রিসোর্ট প্রকল্পে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি চূড়ান্ত নয় এবং তাদের নাম ও ব্র্যান্ড এর ব্যবহার অনুমোদিত নয় বলে স্পষ্ট জানিয়েছে।

নাগরিকদের পাঠানো চিঠিতে ম্রো জনগোষ্ঠীর স্বাধীন ও পূর্ব সম্মতি ছাড়া প্রতিবাদকারী ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং সাজানো কিছু অনুষ্ঠান/বক্তব্য/লেখনীর মাধ্যমে হোটেল ও বিনোদন পার্ক স্থাপনে ম্রো জনগোষ্ঠীর সম্মতি আছে বলে প্রচারের অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হোটেলের প্রয়োজনে ২০ একর জমি নেওয়ার কথা বলা হলেও কার্যত বিস্তৃত এলাকা জুড়ে চতুর্পাশে সীমানা খুঁটি স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে। যা শান্তিচুক্তির স্পষ্ট লংঘন বলে উল্লেখ করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। হোটেলের স্বার্থে ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবিকা অর্জনে, তাদের চলাচল ও যাতায়াতেও জোরপূর্বক বাঁধার সৃষ্টি করা হয়েছে বলে দাবি করা করেছেন তারা।

চিঠিতে সইকারীরা প্রথাগত জনগোষ্ঠীর অধিকার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি পূর্ণ সম্মান জানিয়ে এবং বান্দরবানের মতো সংবেদনশীল প্রতিবেশ ব্যবস্থার সুরক্ষার স্বার্থে “ম্যারিয়ট হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস” নামক প্রকল্প অবিলম্বে বাতিলের ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মতবিনিময়ের জন্য মন্ত্রী, সেনাবাহিনী প্রধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধও জানিয়েছেন তারা।

চিঠিতে সই করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসির নির্বাহী সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সিপিডির সম্মানীত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও ড. মুস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, নারী অধিকার কর্মী ড. হামিদা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন, ড. সি আর আবরার, ড. তাসনিম সিদ্দিকী, গীতিয়ারা নাসরিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের নির্বাহী পরিচালক সঞ্জীব দ্রং, পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার আন্দোলন বান্দরবান চ্যাপ্টারের জুয়ামলিয়ান আমলাই, সুরকার, যাত্রা বাংলাদেশের সৃজনশীল পরিচালক আনুশেহ আনাদিল, বেলার প্র্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ ৫৯ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

3h ago