৮৮ শতাংশ কিশোরী পথে নিপীড়ণের শিকার হয়: জরিপ

দেশের ৮৮ শতাংশ অবিবাহিত কিশোরী পথে এবং ১৯ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় যৌন নিপীড়ণের শিকার হয় বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
ধর্ষণ
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

দেশের ৮৮ শতাংশ অবিবাহিত কিশোরী পথে এবং ১৯ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় যৌন নিপীড়ণের শিকার হয় বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রথম জাতীয় কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্য ও কল্যাণ জরিপের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

বাংলাদেশ এডোলেসেন্ট হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিইং সার্ভে ২০১৯-২০ তে দেশের কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে আনা মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে জানানো হয়।

জরিপের মূল প্রতিবেদনে কিশোর-কিশোরীর গণমাধ্যম ব্যবহার, বিয়ে, ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি, জেন্ডার-সম্পর্কিত সামাজিক আচরণ, সহিংসতা, মানসিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও খাদ্যবৈচিত্র্য  এবং পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সংযোগ বিষয়ক ১২টি অধ্যায়ে জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে।

এতে দেখা যায়, বেশিরভাগ কিশোরীদের মধ্যে ঋতুকালীন স্বাস্থ্যকর আচরণের প্রবণতা এখনো অনেক কম। বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে ৯ শতাংশ এবং অবিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে ১২ শতাংশ। কিশোরীদের অধিকাংশই ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগে এই পরিবর্তন সম্পর্কে জানতো না। বিবাহিত ও অবিবাহিত কিশোরীদের প্রায় সবাই (৯৮ শতাংশ) ঋতুকালীন সময়ে একবার ব্যবহারযোগ্য প্যাড বা সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে বহুবার ব্যবহার করা যায় এমন উপাদান ব্যবহার করেদেশের ৭৩ শতাংশ অবিবাহিত কিশোরী এবং ৬৬ শতাংশ অবিবাহিত কিশোর বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। আর এই তথ্যের জন্য কিশোরীরা বইয়ের উপর নির্ভর করে এবং কিশোরদের তথ্যসংগ্রহের মূল মাধ্যম ইন্টারনেট।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এর অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর এডোলেসেন্ট হেলথ ২০১৭-৩০ তৈরি ও বাস্তবায়ন করছে। স্বাস্থ্য সেবায় বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করলে ও বাল্যবিবাহ, কৈশোরে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণের হার এখনো বেশি। স্বাস্থ্যখাতে অর্জিত উন্নয়ন সমুন্নত রাখতে বাল্যবিবাহ রোধকরা, কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পর্যাপ্ত তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

অনুষ্ঠানে মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি-র পপুলেশন, হেলথ, নিউট্রিশন এন্ড এডুকেশন অফিসের পরিচালক জার্সেস সিধওয়া বলেন, জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কিশোর-কিশোরীরা তাদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে আরো তথ্য চায়। এখন আমাদের ভাবতে হবে এই কিশোর-কিশোরীদের আমরা কতটা কার্যকরী ভাবে এইসব তথ্য দিতে পারি। আর এ জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন সেক্টরের একীভূত পদক্ষেপ।

এছাড়াও জরিপে আরও উঠে এসেছে, দেশের প্রতি পাঁচটি পরিবারের একটিতে কমপক্ষে একজন কিশোর/কিশোরী আছে। ৯০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধাপ্রাপ্ত। প্রতি দশ জন অবিবাহিত কিশোর-কিশোরীর মধ্যে এক জন কৃশকায় বা কম ওজনের, এবং অন্য দশ ভাগের এক ভাগ স্থুলকায় বা বেশি ওজনের। ৭৬-৮৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীরা খাদ্যের পাঁচটি গ্রুপ যেমন শাকসবজি, স্টার্চ জাতীয় খাবার, দুগ্ধ, প্রোটিন এবং ফ্যাটযুক্ত খাবারের মধ্যে চারটি গ্রূপেরও বেশি খাবার গ্রহণ করে থাকে। তবে মাত্র এক চতুর্থাংশ কিশোর- কিশোরী ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করছে।

প্রতিনিধিত্বশীল ৭২,৮০০ পরিবারকে জরিপের নমুনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। যার মধ্যে ৬৭ হাজার ৯৩ পরিবারে সফলভাবে জরিপ পরিচালনা করা হয়। মোট ৪,৯২৬ বিবাহিত কিশোরী, ৭,৮০০ অবিবাহিত কিশোরী এবং ৫,৫২৩ অবিবাহিত কিশোরের এই জরিপের আওতায় সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।

জরিপের তথ্য সংগ্রহের মান নিশ্চিত করতে আইসিডিডিআর,বি ১৮ জন কর্মকর্তা এবং চারটি মান নিয়ন্ত্রণ টিমের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ, পরিবার ও ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার গ্রহণের বিভিন্ন পর্যায়ে তারা নির্দেশনাও দিয়ে থাকে বলে জানানো হয়েছে।

দেশব্যাপী এই জরিপ পরিচালনা করে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ পপুলেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং (নিপোর্ট) এবং টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদান করে আইসিডিডিআর,বির রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকার্স (আরডিএম) প্রকল্প এবং ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনার ডাটা ফর ইম্প্যাক্ট (ডিফরআই)। জরিপে অর্থায়ন করেছে ইউএসএআইডি, যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা এফসিডিও এবং বাংলাদেশ সরকার।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago