মিরপুর টেস্টের নিয়ন্ত্রণ ক্যারিবিয়ানদের হাতে

এনক্রুমাহ বনার ও জশুয়া ডি সিলভারা ভোগালেন বাংলাদেশের বোলারদের। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হওয়ায় তাদের কাছ থেকে এমন ব্যাটিং অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু টুকটাক ব্যাটিং করতে জানা আলজেরি জোসেফও যেন বিরাট কোহলি হয়ে দাঁড়ালেন টাইগারদের নির্বিষ বোলিং অ্যাটাকের বিপক্ষে। তাতে প্রথম ইনিংসের ৪০৯ রানের বিশাল সংগ্রহই পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রতিপক্ষের ফিল্ডারদের ক্যাচিং অনুশীলন করালেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। ফলাফল এখন ফলোঅন চোখ রাঙাচ্ছে স্বাগতিকদের।
চট্টগ্রাম টেস্টে অবিশ্বাস্যভাবে হেরে গেছে বাংলাদেশ। সিরিজে সমতা ফেরাতে হলে মিরপুরে জয়ের বিকল্প নেই টাইগারদের। তার জন্য হয়তো নিজেদেরকে কিছুটা আগ্রাসী করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিল দলটি। কিন্তু সেটা দেখা গেল ব্যাটিংয়েই। উল্টো অতি আগ্রাসন দেখাতে গিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনে ব্যাটসম্যানরা। প্রতিপক্ষকে আর উইকেটের জন্য কষ্ট করতে হয়নি। টাইগাররাই উপহার দিয়েছেন। অন্যদিকে ক্ষুরধারহীন সাদামাটা বোলিংয়ে আগেই প্রতিপক্ষের বিশাল রানের পাহাড়ের নিচে মুমিনুল হকের দল। নিঃসন্দেহে মিরপুর টেস্টের নিয়ন্ত্রণ ক্যারিবিয়ানদের হাতে।
লাল বলের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের মূলত ধৈর্য ধারণ করতে হয়, লোভ সামলাতে হয়। কিন্তু সেটা করতেই ব্যর্থ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের প্রথম ওভারেই সৌম্য সরকার (০) আউট হলেন স্বাভাবিক ওয়ানডে স্টাইলের ব্যাটিংয়ের নজির দেখিয়ে। ফ্লিক করতে গিয়ে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ তুলে দেন কাইল মেয়ার্সের হাতে। আর নাজমুল হোসেন শান্ততো (৪) লোভই সামলাতে পারেননি। অফস্টাম্পের বাইরে রাখা ফুলার লেংথের বলটিতে চেয়েছিলেন ব্যাটসম্যান ড্রাইভ করতে এগিয়ে আসুক। এলেনও। ফলাফল গালিতে বোনারের হাতে ক্যাচ তুলে দিলেন। ১১ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে তাই বড় চাপে বাংলাদেশ।
সে চাপ কাটাতেই হয়তো ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং শুরু করেন তামিম। দারুণ কিছু শটে রানের গতি সচল রাখেন। দলীয় ফিফটি পূরণ হতে লাগেনি ১২ ওভারও। চার নম্বরে নামা অধিনায়ক মুমিনুল হকও (২১) দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন। পেসারদের বলে দৃষ্টিনন্দন আপার কাট ও ফ্লিক করে কিছু বাউন্ডারিও আদায় করে দেন অধিনায়ক। তাতে টাইগারদের প্রত্যাশাটা বড় হচ্ছিল। কিন্তু দীর্ঘদেহী স্পিনার রাহকিম কর্নওয়ালের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। ভাঙে ৫৮ রানের জুটি।
অবশ্য অধিনায়কও নিজের উইকেট দিয়েছেন ওই লোভ সামলাতে না পেরে। অফস্টাম্পের বাইরে বলটি ব্যাটসম্যানকে ড্রাইভ করতেই উদ্দীপ্ত করেছিলেন কর্নওয়াল। আর নিজের দীর্ঘ দেহের সুবিধা আদায় করে তুলে নেন বাড়তি বাউন্স। তাতেই লাইন মিস করেন টাইগার অধিনায়ক। তার শট ব্যাটে হালকা চুমু খেয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক জশুয়ার হাতে। বাংলাদেশ আবারও পড়ে যায় চাপে।
আর সে চাপ সামলে নেওয়ার মূল দায়িত্ব ছিল সেট ব্যাটসম্যান তামিমের। কিন্তু উল্টো দলকে আরও বড় চাপে ফেলে যান এ ওপেনার। মূলত জোসেফের বলে আগে ৬টি বাউন্ডারি তুলে নেওয়ায় হয়তো আত্মবিশ্বাসটা তুঙ্গে ছিল। কিন্তু এবার আর ঠিক মতো হয়নি। ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়ানো শেন মোসলেকে ক্যাচিং অনুশীলন করিয়ে সাজঘরে ফিরে আসেন। ফলোঅনে পড়ার শঙ্কাটা তখনই তীব্রভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ৫২ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৪ রান করেন তামিম।
এরপর অবশ্য মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজে নেমেছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। অবিচ্ছিন্ন ৩৪ রানের জুটিতে বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছেন এ দুই ব্যাটসম্যান। দিনশেষে ৪ উইকেটে ১০৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ। মুশফিক ২৭ ও মিঠুন ৬ রানে ব্যাট করছেন। ফলোঅন এড়াতে এখনও ১০৫ রান করতে হবে টাইগারদের।
এর আগে প্রথম দিনের ৪ উইকেটে ২২৩ রান নিয়ে খেলতে নামা উইন্ডিজ শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে আরও ১৮৬ রান যোগ করে। আগের দিনই হুমকি হয়ে দাঁড়ানো বনারকে অবশ্য প্রথম ঘণ্টাতেই ফিরিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর টাইগারদের ভোগান জশুয়া ও জোসেফ। তাদের জুটি যখন থামে, ততক্ষণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ চারশো ছুঁইছুঁই। শেষদিকে আবু জায়েদ রাহি ও তাইজুল ইসলাম জ্বলে উঠলেও বড় স্কোর গড়া থেকে সফরকারীদের থামাতে পারেনি বাংলাদেশ।
এদিন বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাওয়া বনারকে ফিরিয়ে ৮৮ রানের জুটি ভাঙেন তিনি। অবশ্য লেগ স্লিপে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন মিঠুন। কিন্তু টাইগারদের ভোগান্তি বাড়িয়ে জোসেফকে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়েন জোসেফ। স্কোরবোর্ডে ১১৮ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। জশুয়া বোল্ড করে এ জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। এরপর খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি জোসেফও। তাকে ফেরান আবু জায়েদ রাহী। এরপর ক্যারিবিয়ানদের বাকী দুই ব্যাটসম্যানকে ভাগাভাগি করে তুলে নেন তাইজুল ও রাহী।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯২ রানের ইনিংস খেলেন জশুয়া। ১৮৭ বলে ১০টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। জোসেফের ব্যাট থেকে আসে ১০৮ বলে ৮২ রান। তার মারমুখী ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ৫টি ছক্কা। ২০৯ বলে ৭টি চারের সাহায্যে বনার করেন ৯০ রান। বাংলাদেশের পক্ষে তাইজুল ও রাহী পেয়েছেন ৪টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: (আগের দিন ২২৩/৫) ১৪২.২ ওভারে ৪০৯ (বনার ৯০, জশুয়া ৯২, আলজারি ৮২, কর্নওয়াল ৪*, ওয়ারিকান ২, গ্যাব্রিয়েল ৮; রাহি ৪/৯৮, মিরাজ ১/৭৫, নাঈম ০/৭৪, তাইজুল ৪/১০৮, সৌম্য ১/৪৮)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৫.৫ ওভারে ১০৫/৪ (তামিম ৪৪, সৌম্য ০, শান্ত ৪, মুমিনুল ২১, মুশফিক ২৭*, মিঠুন ৬*; গ্যাব্রিয়েল ২/৩১, কর্নওয়াল ১/১৮, জোসেফ ১/৩৪, মেয়ার্স ০/১২, ওয়ারিকান ০/১০)।
Comments