আমিরাতের মঙ্গল অভিযানের নেপথ্যে

মঙ্গলগ্রহে সফল মিশন পাঠিয়ে প্রথম আরব রাষ্ট্র হিসেবে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মঙ্গলে মিশন পাঠানোর তালিকায় বিশ্বে পঞ্চম দেশ হিসেবে গত মঙ্গলবার নাম লিখিয়েছে আমিরাত।
‘আশা’কে মঙ্গলে পাঠানো হয়েছিল ২০২০ সালের ২০ জুলাই, জাপানের তানেগাশিমা মহাকাশবন্দর থেকে। ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গলগ্রহে সফল মিশন পাঠিয়ে প্রথম আরব রাষ্ট্র হিসেবে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মঙ্গলে মিশন পাঠানোর তালিকায় বিশ্বে পঞ্চম দেশ হিসেবে গত মঙ্গলবার নাম লিখিয়েছে আমিরাত।

বিবিসি জানিয়েছে, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউরোপ ও ভারত মঙ্গলে এমন অনুসন্ধান চালিয়েছে।

মঙ্গলে আমিরাতের ‘আশা’ মিশন পাঠানোর নেপথ্যে কারণগুলো পর্যালোচনা করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সৌদি আরব-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া

এতে বলা হয়েছে, প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের এই অভিযান আমিরাতের তথা আরব বিশ্বের তরুণ প্রজন্মকে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমে আরবরা বিজ্ঞানচর্চাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ পাবে।

যুক্তরাষ্ট্রে আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল অতাইবা’কে আরব বিশ্বের ‘জন এফ কেনেডি’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, কেনেডি যেমন চাঁদে মিশন পাঠিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন তেমনি মঙ্গলে অভিযান চালিয়ে ইউসেফ আরব জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

আমিরাত মঙ্গলে মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ২০১৩ সালে। মধ্যপ্রাচ্যের ছোট এই তেলসমৃদ্ধ দেশটিকে এমন বিলাসী উদ্যোগ নিতে প্রেরণা জুগিয়েছিল যে বিষয়গুলো তার মধ্যে রয়েছে: স্থানীয়ভাবে আন্তঃগ্রহ শিল্পকেন্দ্র গড়ে তোলা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা বাড়ানো ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উৎসাহ দেওয়া।

আন্তঃগ্রহ শিল্পকেন্দ্র

আমিরাতের অন্যসব সাফল্যের মতো মঙ্গল অভিযানেও রয়েছে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অবদান। তবে এই অভিযানের উদ্দেশ্য হলো আমিরাতের তরুণদের এ বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা। পাশাপাশি, মহাকাশ চর্চায় স্থানীয় প্রকৌশলীদের যোগ্য করে তোলা।

অভিযানের মূল কাজ যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে হলেও এর অনেক কাজ দুবাইয়ের মোহাম্মদ বিন রশিদ মহাকাশ কেন্দ্রে হয়েছিল। সেখানে দুইশ’র বেশি আমিরাতি প্রকৌশলী কাজ করছেন।

মঙ্গলের কক্ষপথে ‘আশা’র প্রবেশের দৃশ্য এই কেন্দ্রে বসে উদযাপন করেছেন দেশটির নেতৃবৃন্দ ও মিশন কর্তৃপক্ষ।

আমিরাতের মঙ্গল অভিযান সম্পর্কে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি ফর অ্যাটমোসফেরিক অ্যান্ড স্পেস সায়েন্সের (এলএএসপি) প্রকৌশলী ব্রিট ল্যানডিন বিবিসি’কে বলেছেন, ‘মিশনটি উন্নয়নের পর এখন আমিরাতের প্রকৌশলীরা নিজেরাই মহাকাশযান তৈরি করতে পারবেন।’

বৈজ্ঞানিক গবেষণা

‘আশা’কে মঙ্গলে পাঠানো হয়েছিল ২০২০ সালের ২০ জুলাই, জাপানের তানেগাশিমা মহাকাশবন্দর থেকে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এর উৎক্ষেপণ দুইবার বাতিল করতে হয়েছিল। প্রায় সাত মাস পর এটি মঙ্গলের কক্ষপথে সফলভাবে প্রবেশ করে।

লাল গ্রহের ভূ-প্রকৃতি জানতে ‘আশা’য় তিন ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমটি এমিরেটস এক্সপ্লোরেশন ইমেজার (ইইআই) মঙ্গলের নিম্ন বায়ুমণ্ডলে থেকে গ্রহের ভূ-পৃষ্ঠের ছবি নেবে।

একই অবস্থানে থেকে দ্বিতীয় যন্ত্র— এমিরেটস মার্স ইনফ্রেরেড স্পেকট্রোমিটার (ইএমআইএস) গ্রহের ধূলা, বরফের মেঘ, বাষ্প ও তাপমাত্রা পরিমাপ করবে।

তৃতীয় যন্ত্র— এমিরেটস মার্স আলট্রাভায়োলেট স্পেকট্রোমিটার (ইএমইউএস) গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে কার্বন মনোক্সাইড ও অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করবে।

আমিরাতের বিজ্ঞানীরা এখন ‘আশা’ থেকে পাঠানো তথ্যগুলো নিয়ে গবেষণা করবেন।

তরুণদের উৎসাহ

মঙ্গলে ‘আশা’ অভিযান সফল হওয়ায় আমিরাতের নেতৃবৃন্দ তরুণদের সামনে আশা জাগানিয়া বক্তব্য রেখেছেন। তারা আশা করছেন মঙ্গল অভিযানের এই সাফল্য তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহ জোগাবে।

এই অভিযান আমিরাতের তরুণদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেও সংবাদ প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ দেশটির এমন সাফল্যের দিনে বলেছেন, ‘আগামী ৫০ বছরের মধ্যে আমিরাতের তরুণরা তাদের মেধা ও জ্ঞান নিয়ে দেশের উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবে।’

মঙ্গল অভিযান সফল হওয়ায় তারা মহাকাশ গবেষণায় যোগ্য হয়ে উঠবে বলেও আশা করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

8m ago