শাহবাগে গণসমাবেশ

মে মাসে ধর্ষণ ও বিচারহীনতা বিরোধী জাতীয় কনভেনশন কর্মসূচির ডাক

Shahbag.jpg
সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য-সচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ছবি: স্টার

আগামী মে মাসে ধর্ষণ ও বিচারহীনতা বিরোধী জাতীয় কনভেনশন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী গণসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচির ডাকা দেওয়া হয়।

দেশব্যাপী ধর্ষণ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা আজ ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে এই সমাবেশ করেন।

সমাবেশে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য-সচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ধর্ষণের মতো অপরাধগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপরাধীরা ক্ষমতাসীন দলের লোক ও পুলিশের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। শুধু ধর্ষণ নয়, এই লোকেরা জমি দখল, চাঁদাবাজির সঙ্গেও জড়িত। এসব ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ধর্ষণের ঘটনা কেবল ঘটনার পরে মামলার ভিত্তিতে করা হয়। ধর্ষণের ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা প্রাপ্ত তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ।’

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় আমরা ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকে অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখি। আমরা দেখি ওয়াজ মাহফিলে বক্তারা নারীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। আমরা তাদেরকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে, নিপীড়কদের বিরুদ্ধে, খুনিদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে অনুরোধ জানাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার দেশে অনেক উন্নয়ন করেছে বলে দাবি করে। তবে তারা এখনও নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ নিশ্চিত করতে পারেনি।’

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ও সিলেটের এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর অক্টোবর থেকে দেশের বিভিন্ন বামপন্থী দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃত্বে দেশব্যাপী ধর্ষণ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে।

এর অংশ হিসেবে আজ বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত এ গণসমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, প্রীতিলতা ব্রিগেডসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দিলরুবা নুরী প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা সরকারকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে অভিহিত করেন এবং ধর্ষক ও নিপীড়করা ক্ষমতাসীনদের বেশ ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ক্ষমতাসীন দল দেশে অনেক উন্নয়নের দাবি করলেও, এখনও নারীদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত সমাজ নিশ্চিত করা যায়নি, যেখানে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।

বক্তারা পাহাড় ও সমতলে ধর্ষণের ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে নয় দফা দাবিও উত্থাপন করেন। দাবিগুলোর মধ্যে আছে- এভিডেন্স আইনের সংস্কার, নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ কনভেনশন সনদ বাস্তবায়ন (সিইডিএডব্লিউ) এবং পাহাড় ও সমতলে নারীর প্রতি নির্যাতনের অবসানে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

দেশকে আরও নারী-বান্ধব করে তোলার জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সমাবেশে বক্তারা নারীর প্রতি সহিংসতায় জড়িত ধর্ষণকারী ও অপরাধীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান।

বগুড়ার তুফান সরকারের মামলার কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ন্যায়বিচার পান না। অথচ তুফান সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন।

ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধে ব্যর্থতার জন্য সমাবেশে বক্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়ী করেন।

সমাবেশ শেষে জেলায় জেলায় ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ, বিভাগীয় শহরে ধর্ষণবিরোধী কনভেনশন এবং ঢাকায় আগামী মে মাসে ধর্ষণ ও বিচারহীনতা বিরোধী জাতীয় কনভেনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

A captain cannot abandon ship, especially when the sea is turbulent

8h ago