চা-শ্রমিকদের ভালোবাসার প্রতীক ‘গদনা’

অভাব অনটনে একরকম দাসের মতো জীবন কাটান চা-শ্রমিকরা। তাই জীবন সম্পর্কে শুধু আক্ষেপই ঝরে তাদের কণ্ঠে। তবে ভালোবাসার কমতি নেই তাদের জীবনেও। পরপারেও যেন প্রিয় মানুষটির সঙ্গে দেখা হয় সেই বিশ্বাস থেকেই চা-বাগানের নারী শ্রমিকরা ‘গদনা’ দিয়ে থাকেন।
Godna
চা-শ্রমিক নারীদের হাতে ‘গদনা’র নকশা। ছবি: সংগৃহীত

অভাব অনটনে একরকম দাসের মতো জীবন কাটান চা-শ্রমিকরা। তাই জীবন সম্পর্কে শুধু আক্ষেপই ঝরে তাদের কণ্ঠে। তবে ভালোবাসার কমতি নেই তাদের জীবনেও। পরপারেও যেন প্রিয় মানুষটির সঙ্গে দেখা হয় সেই বিশ্বাস থেকেই চা-বাগানের নারী শ্রমিকরা ‘গদনা’ দিয়ে থাকেন।

শাহবাজপুর চা-বাগানের চা-শ্রমিক ৪৭ বছর বয়সী কলতি রবিদাশ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা এ নকশাকে “গদনা” বলি। আমি বিয়ের এক বছরের মাথায় এই নকশাটি আমার হাতে দিই। প্রিয় মানুষটির কথা মাথায় রেখেই আমরা দিয়ে থাকি। যেন পরপারে তার সঙ্গে আবার দেখা হয়। এই চিহ্ন দেখেই যেন সে আমাকে চিনতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তখন যারা “গদনা” দিতেন তারা এলাকায় এসে বলতেন “গদনা দেবাগো চুলবুয়িয়াকে মাই” অর্থাৎ গদনা দিবেন নাকি মায়েরা।’

তার মতে, শরীরের রঙ উজ্জ্বল হলে নকশাটিও ফুটে উঠে গাঢ় হয়ে। রঙ কালো হলে নকশাটি অস্পষ্ট হয়ে লুকিয়ে থাকে।

কখনো ফুল, কখনো ত্রিশূল, আবার কখনো বা গাছপালা বা প্রিয়জনের নামসহ এমন নানান প্রকারের নকশা হয় উল্লেখ করে তিনি আরও জানিয়েছেন, অনেকে হাতে, আবার অনেকে কপালেও এই ‘পীত’ রঙের নকশা ধারণ করেন।

একই রকম কথা জানালেন ৪৫ বছর বয়সী চা-শ্রমিক সাবিত্রি বাউরিও। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চা-শ্রমিক নারীদের শরীরে অঙ্কিত এমন সব অদ্ভুত নকশাই তাদের ঐহিত্য, কৃষ্টি আর পরম্পরার কথাই মনে করিয়ে দেয়।’

‘অনেক আগে, আমাদের শৈশবে দেখেছি এসব নকশা শরীরে খোদাই করে আঁকা হতো,’ যোগ করেন তিনি।

‘সাতটা সুঁচ একসঙ্গে করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এগুলো আঁকা হয়েছিল। খুব ব্যথা লেগেছিল তখন। প্রায় দুই ঘণ্টার মতো সময় লেগেছিল এগুলো আঁকতে।  তবে পরে খুব প্রশান্তি লেগেছিল,’ বললেন সাবিত্রি বাউরি।

সব নারী চা-শ্রমিকদের একই রকম কথা।

বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদের সভাপতি মনোজ যাদব ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটা আমাদের চা-শ্রমিক নারীদের একটি ঐতিহ্য। অনেক প্রবীণ নারীদের শরীরে এই গদনা আঁকা আছে। এতো অভাব অনটনের ভেতর যে ভালোবাসা টিকে আছে এটাই বেশি।’

তবে যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে এই ‘গদনা’ ঐতিহ্য অনেকটাই বিলুপ্তির পথে বলে আক্ষেপ করেছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাখন কর্মকার ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই দাগ শরীরে থাকলে মৃত্যুর পর স্বামীর সঙ্গে দেখা হলে চিনতে কোনো অসুবিধা হবে না— এমন বিশ্বাস থেকেই চা-শ্রমিকদের মধ্যে “গদনা” শিল্পের উৎপত্তি।’

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago