দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ হারিয়ে ইতিহাস গড়ল পাকিস্তান
একশোর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে লড়াইয়ের পুঁজি পেল ডেভিড মিলারের আগ্রাসী হাফসেঞ্চুরিতে। জবাব দিতে নেমে উড়ন্ত শুরু পাওয়া পাকিস্তানকে জোর ধাক্কা দিলেন তাবরাইজ শামসি। তাতে রোমাঞ্চ ছড়াল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে। তবে লোয়ার অর্ডারে মোহাম্মদ নওয়াজ ও হাসান আলীর জুটি জমে যাওয়ায় ৮ বল হাতে রেখে সিরিজ জিতলেন বাবর আজমরা।
রবিবার লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৪ উইকেটে জিতেছে পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার ৮ উইকেটে ১৬৪ রানের জবাবে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে ১৬৯ রান তুলে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
২-১ ব্যবধানে সিরিজ ঘরে তুলেছে পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচে তারা জেতার পর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সমতায় ফিরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের এটি ১০০তম জয়। ক্রিকেটের এই সংস্করণে প্রথম দল হিসেবে জয়ের সেঞ্চুরি পূরণ করে তারা গড়েছে ইতিহাস। এ পর্যন্ত ১৬৪ ম্যাচ খেলেছে তারা। দলটি হেরেছে ৫৯ ম্যাচে। টাই হয়েছে তিনটি। দুটিতে ফল আসেনি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এক পর্যায়ে একাদশ ওভারে তাদের স্কোর ছিল ৭ উইকেটে ৬৫। সেই মহাবিপাক থেকে একক নৈপুণ্যে দলকে টেনে তোলেন মিলার। শুধু তা-ই নয়, সম্মানজনক সংগ্রহের সীমা পেরিয়ে প্রোটিয়াদের রান দেড়শো ছাড়িয়ে আরও দূরে নিয়ে যান তিনি।
এক প্রান্তে ওপেনার ইয়ানেমান মালান ঝড় তুললেও পাকিস্তানের বোলাররা শুরু থেকেই তুলে নিতে থাকেন উইকেট। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রিজা হেন্ড্রিকসকে বোল্ড করেন মোহাম্মদ নওয়াজ। নিজের পরের ওভারে এই স্পিন অলরাউন্ডার ফেরান জেজে স্মুটসকে।
পাইট ভ্যান বিলিয়ন হাসান আলীর শিকার হওয়ার পর সপ্তম ওভারে টানা দুই বলে হেইনরিখ ক্লাসেন ও মালানকে বিদায় করেন জাহিদ মাহমুদ। আক্রমণে এসেই জোড়া শিকার ধরায় আন্তর্জাতিক অভিষেক নিঃসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে থাকল ৩২ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনারের।
মালান ১৭ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে করেন ২৭ রান। প্রোটিয়া অধিনায়ক ক্লাসেন রানের খাতা খুলতে পারেননি। আন্দিল ফেলুকওয়ায়ো ও ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসও দ্রুত মাঠ ছাড়লে তাদের দলীয় সংগ্রহ তিন অঙ্কে পৌঁছানোই হয়ে দাঁড়ায় বহু দূরের পথ। গুরুত্বপূর্ণ সেই পরিস্থিতিতে জ্বলে ওঠেন বাঁহাতি মিলার। সময় নিয়ে থিতু হওয়ার পর শেষে ঝড় তোলেন তিনি।
অষ্টম উইকেটে বিয়র্ন ফরচুইনের সঙ্গে ২৭ বলে ৪১ ও নবম উইকেটে লুথো সিম্পালার সঙ্গে ৩০ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৮ রান যোগ করেন মিলার। ইনিংসের শেষ ওভারে ফাহিম আশরাফকে ৪ ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি নেন ২৫ রান। শেষ পর্যন্ত টর্নেডো ইনিংস খেলে তিনি অপরাজিত থাকেন ৪৫ বলে ৮৫ রানে। তার ইনিংসে ছিল ৫ চার ও ৭ ছক্কা।
পাকিস্তানের হয়ে ৪০ রানে ৩ উইকেট নেন অভিষিক্ত জাহিদ। ২টি করে উইকেট দখল করেন নওয়াজ ও হাসান।
লক্ষ্য তাড়ায় পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট হারায়নি পাকিস্তান। সেসময়ে তারা স্কোরবোর্ডে জমা করে ৫১ রান। টানা তৃতীয় ম্যাচে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালান উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান।
বল হাতে নিয়ে প্রথম ডেলিভারিতেই হায়দার আলীকে বোল্ড করে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শামসি। রিজওয়ানকেও এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ৩০ বলে ৫ চার ও ২ ছয়ে তার সংগ্রহ ৪২ রান।
হুসাইন তালাত হন শামসির তৃতীয় শিকার। রিজওয়ানের পর স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকা বাবরের স্টাম্প উপড়ে যায় প্রিটোরিয়াসের সুইং হওয়া অসাধারণ এক ডেলিভারিতে। তার ব্যাট থেকে আসে ৩০ বলে ৪৪ রান। তার ইনিংসে ছিল ৫ চার ও ১ ছয়।
শামসি নিজের শেষ ওভারে আসিফ আলীকে আউট করলে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। ফাহিমও দ্রুত বিদায় নিলে খেলায় ছড়ায় উত্তেজনা।
শেষ ১৮ বলে পাকিস্তানের দরকার ছিল ২৮ রান। প্রিটোরিয়াসের করা ১৮তম ওভার থেকে ২ চারে নওয়াজ তোলেন ১২ রান। পরের ওভারে আঁটসাঁট বোলিং করে ম্যাচ শেষ ওভার টেনে নিয়ে যাওয়া তো দূরে থাক, রীতিমতো বাজে বোলিং করেন ফেলুকওয়ায়ো। প্রথম বলই নো। তাতে ছক্কা হাঁকান হাসান। তিন বল বিরতি দিয়ে টানা চার-ছয় মেরে খেলা শেষ করে দেন এই পেসার।
ব্যাটে-বলে নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচসেরা নওয়াজ অপরাজিত থাকেন ১১ বলে ১৮ রানে। তার সঙ্গী হাসানের ব্যাট থেকে আসে ৭ বলে ২০ রানের ক্যামিও। শামসি ৪ উইকেট নেন ২৫ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৬৪/৮ (মালান ২৭, হেন্ড্রিকস ২, স্মুটস ১, বিলিয়ন ১৬, ক্লাসেন ০, মিলার ৮৫*, ফেলুকওয়ায়ো ০, প্রিটোরিয়াস ৯, ফরচুইন ১০, সিম্পালা ৮*; শাহিন ০/২৮, নওয়াজ ২/১৩, আশরাফ ০/৩৮, হাসান ২/২৯, জাহিদ ৩/৪০, উসমান ১/১২)
পাকিস্তান: ১৮.৪ ওভারে ১৬৯/৬ (রিজওয়ান ৪২, হায়দার ১৫, বাবর ৪৪, তালাত ৫, আসিফ ৭, ফাহিম ১০, নওয়াজ ১৮*, হাসান ২০*; ফরচুইন ১/৩০, প্রিটোরিয়াস ১/৩৩, স্মুটস ০/২০, ফেলুকওয়ায়ো ০/৩৭, সিম্পালা ০/২৩, শামসি ৪/২৫)
ফল: পাকিস্তান ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: পাকিস্তান ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
Comments