প্রবাসে

সুশৃঙ্খল যোগাযোগ ব্যবস্থার শহর মন্ট্রিয়েল

কানাডার মন্ট্রিয়েলে এসেছি প্রায় তিন বছর। এখানকার আবহাওয়া, শীতের তীব্রতা, অবিরামধারায় তুষারপাতের মাঝে নিজেকে মানিয়ে নিতে এখনো পেরে উঠেনি। তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।
কানাডার মন্ট্রিয়েলের একটি রাস্তায় স্কুলের বাচ্চারা রাস্তা পার হচ্ছে। ছবি: লেখক

কানাডার মন্ট্রিয়েলে এসেছি প্রায় তিন বছর। এখানকার আবহাওয়া, শীতের তীব্রতা, অবিরামধারায় তুষারপাতের মাঝে নিজেকে মানিয়ে নিতে এখনো পেরে উঠেনি। তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।

গত তিন বছরে এখানকার অনেক কিছুই ভাল লেগেছে। বিশেষত যোগাযোগ ব্যবস্থা। বলা হয়ে থাকে কানাডার সবচেয়ে সুশৃঙ্খল যোগাযোগ ব্যবস্থা মন্ট্রিয়েলে। এখানে আসার পর থেকে কোথাও কোন ট্রাফিক পুলিশ চোখে পড়েনি। কিন্তু তাই বলে কোন গাড়িচালক ট্রাফিক আইন অমান্য করে গাড়ি চালায় তাও শুনিনি, দেখিনি।

মন্ট্রিয়েলের ট্রাফিক সিস্টেম পুরোপুরি কম্পিউটারাইজড এবং ওয়েল কন্ট্রোল্ড। পথে পথে গাড়ির গতিসীমা নির্ধারিত আছে। সেই গতিসীমা মেনেই এখানে গাড়ি চালাতে হয়। একটু উনিশ বিশ হলেই চালককে বিশাল অংকের জরিমানা গুনতে হয়। শুধু জরিমানা গুনলেই হতো কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে পয়েন্ট কাটা পড়ায় চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স রক্ষা করা নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। তাই এখানে একটা কথা প্রচলিত আছে, সময় হলে পাসপোর্ট পাওয়া যতোটা সহজ কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া তারচেয়েও কঠিন। এরচেয়ে বড় কথা লাইসেন্স রক্ষা করা আরও কঠিন কাজ।

লেখা শুরু করেছিলাম ট্রাফিক পুলিশ নিয়ে। বাস্তবে এখানে কোন ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াই শহর চলে। আমি কৌতুহলি হয়েছিলাম স্কুলের বাচ্চাদের পথ পারাপারে সাহায্যকারী স্কুলগার্ডদের নিয়ে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আমার ক্লাস শুরু হলে খুব ভোরে ছুটতে হতো ক্লাসে। রয়েল মনট মেট্রো স্টেশনে নেমে ৭/৮ মিনিট হেঁটে ক্লাসে যেতাম। আসা যাওয়ার সময় স্কুল ক্রসিং লেখা কোন চার রাস্তার মোড়ে চোখে পড়তো লেমন কালারের ভেস্ট পরা তরুণী বা মধ্যবয়স্ক নারীদের। যাদের হাতে stop / arriet লেখা প্ল্যাকার্ড ধরা থাকে। তাদের কাজ হচ্ছে স্কুল শুরুর সময় থেকে ছুটির পর বাচ্চাদের রাস্তা পারাপারে সাহায্য ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এই সাহায্যকারীদের বিষয়ে কৌতুহলী হয়ে জানতে চেয়েছিলাম একসময়ের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক আসমা আহমেদের কাছে। তিনি কথা প্রসঙ্গে জানান, 'যারা এসব ভেস্ট পরে রাস্তা পারাপারে সহায়তা করে তারা আসলে বিভিন্ন  লঘু অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যাদের কমিউনিটির সহায়তায় এমন দায়িত্ব দেয়া হয় এবং এই দায়িত্ব পালনটা হয় আওয়ার বেসিস, এটা তাদের জন্য  মেন্ডেটরি। অবশ্যই এভাবে কমিউনিটির সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করে ক্রমশ তারা হয়ে ওঠেন আরো অনেক বেশি দায়িত্ববান এবং সমাজ সচেতন।'

দু-একদিন লক্ষ্য করেছি এরা হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে ট্রাফিকের মতন দাঁড়িয়ে গেছে stop প্ল্যাকার্ড হাতে। সাথে সাথে রাস্তার দু'পাশের চলন্ত গাড়ি থেমে যায়। এরপরই দেখতাম ৮/১০ জন বা ১৫/২০ জন ৪/৫ বছরের বাচ্চা সামনে পিছনে দু'জন শিক্ষক বা স্কুল ভলেন্টিয়ারের তত্ত্বাবধানে সারিবদ্ধ হয়ে রাস্তা পেরুচ্ছে। যতক্ষন বাচ্চারা রাস্তা না পেরুবে ততক্ষণ সমস্ত গাড়ি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।

লেমন কালারের ভেস্ট পরা নারী বা পুরুষ স্কুল চলাকালীন সময়ে তীব্র ঠান্ডায় বা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দায়িত্ব পালন করেন। বাচ্চাদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করাই এসব স্কুল গার্ডদের প্রধান ও একমাত্র কাজ। স্কুল শুরু ও ছুটির সময় ছাড়া মন্ট্রিয়েলের কোথাও ম্যানুয়ালি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ হতে দেখিনি।

আরেকটি বিষয় চোখে পড়েছে স্কুল বাসকে প্রায়োরিটি দিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার জন্য পথ ছেড়ে দেয়া এবং পেছন থেকে গাড়ি সব ধীরগতিতে চলা। এরা স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের চলাচলের নিরাপত্তার জন্য, স্কুলবাসের চলাচলের জন্য কতটা সচেতন ও সর্তক থাকে এ দুটো পর্যবেক্ষণে বুঝতে পারি। মনে পড়ে, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কী মারধর ও নিপীড়নটাই না তখন করা হলো!

লেখক: কানাডা প্রবাসী

Comments

The Daily Star  | English

Turning the tide: Critical reforms to correct 15 years of misrule

As Bangladesh enters a new era following the ouster of the Sheikh Hasina-led Awami League government, which ruled over the nation for 15 years and is responsible for countless financial wrongdoings, the need of the hour is to reform the overall system of governance.

14h ago