ডিসি-এসপি-ওসি ও কাদের মির্জার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), কোম্পানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (ওসি) ও ওসি তদন্তের নামে দূর্নীতির অভিযোগসহ আরও বেশ কিছু দাবিতে বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার ডাকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়েছে। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো কাদের মির্জার অনৈতিক দাবি না মানায় তিনি এমন অভিযোগ তুলছেন বলে দাবি করেছেন ডিসি, এসপি এবং ওসি।
এছাড়াও চর কাঁকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম সবুজ, মিজানুর রহমান বাদল, নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরী এমপি ও ফেনীর নিজাম হাজারী এমপিকে আওয়ামী লীগের অপরাজনীতির হোতা দাবি করে তাদের দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে এই হরতাল পালিত হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরতাল চলাকালীন জরুরি পরিবহন ছাড়া সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। উপজেলা হেডকোয়ার্টার বসুরহাট পৌর বাজার এলাকার দোকানপাট বন্ধ থাকার পাশাপাশি বসুরহাট-দাঁগনভূঁইয়া, কবিরহাট ও চর কাঁকড়া আঞ্চলিক সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ করে কাদের মির্জার সমর্থকরা।
গতকাল বুধবার সকালে কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনের অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই হরতালের ডাক দেন আবদুল কাদের মির্জা।
এর আগে তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাতভর কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে অবস্থান করেন।
আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম, পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি, পরিদর্শক তদন্ত রবিউল হককে প্রত্যাহার এবং উপজেলা চর কাঁকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম সবুজকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান মির্জা কাদের।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের চর কাঁকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম সবুজ টেকের বাজার এলাকায় কাদের মির্জার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ প্রথমে সবুজকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দিয়েছে এমন অভিযোগ উঠলে কাদের মির্জা তার অনুসারীদের নিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেন। এসময় বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বসুরহাট থানার দুই পাশে বাস-ট্রাক দিয়ে অবরোধ করে রাখেন।
আজ দুপুরে কোম্পানীগঞ্জে অর্ধদিবস হরতাল পালন শেষে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী শুক্রবার ও শনিবার থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন মির্জা কাদের। দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্য বাস্তবায়নের জন্য আমি কাজ করে যাব। গ্রেপ্তার হলে জেলে থাকব, মেরে ফেললে কবরে থাকব।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই হরতাল পালন করেছে সবাই। বসুরহাট বাজারের ব্যবসায়ী, এলাকার মানুষ, বাস ও সিএনজি মালিক-শ্রমিক সবাই সম্মিলিতভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছে।’
সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশাসনের দুর্নীতি এবং আওয়ামী লীগে হওয়া অপরাজনীতির বিষয় উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। যদি করতে পারি ভালো কথা, তিনি ব্যবস্থা নেবেন। না পারলে আমরা পরবর্তীতে কঠিন কর্মসূচিতে যাবো।’
ডিসি, এসপি ও কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিদের প্রত্যাহার কেন দাবি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না। মানুষ ধরে নিয়ে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন। গ্রেপ্তার বাণিজ্য করাই তার কাজ।’
মির্জা কাদেরের অভিযোগ অস্বীকার করে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি বলেন, ‘মির্জা কাদেরের অযৌক্তিক আবদার না রাখায় তিনি পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন।’
পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন প্রসঙ্গে মির্জা কাদের বলেন, ‘আমি শপথ নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম যাওয়ার আগের রাতে নিরাপত্তা চেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি ও নোয়াখালী পুলিশ সুপারের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাকে কোনো সহযোগিতা না করায় ফেনীর দাগনভূঁইয়ায় নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর ইন্ধনে তাদের বাহিনীর লোকজন আমার গাড়ি বহরে হামলা করে। পুলিশ যথাসময়ে ব্যবস্থা নিলে এ হামলার ঘটনা ঘটত না।’
পুলিশ প্রটোকল পান কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আবদুল কাদের মির্জা দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান বাদল, তার ভাগিনা রাহাত ও চর কাঁকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম সবুজকে গ্রেপ্তার করতে থানার ওসি ও আমাকে চাপ দিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। মামলা ছাড়া কোনো নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার করা তো আর পুলিশের কাজ না।’
শপথ অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম যাওয়ার আগে কাদের মির্জা তার কাছে কোনো নিরাপত্তা কিংবা সহযোগিতা চাননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কাদের মির্জার অন্যায় আবদার রক্ষা না করলেই তিনি তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগেন।’
জেলা প্রশাসক প্রসঙ্গে কাদের মির্জা বলেন, ‘গত ১১ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের অধীনে ইউপি সচিব নিয়োগ হয়। সেই নিয়োগে তিনি ২০ লাখ টাকা করে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। আমার কাছে প্রমাণ আছে।’
এ অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘অত্যন্ত স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এই নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা প্রকৃত মেধাবী। আবদুল কাদের মির্জা দুজন ইউপি সচিব পদপ্রার্থীর জন্য তদবির করেছিলেন। অথচ তারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি। লিখিত পরীক্ষায় যারা পাশ করেননি তাদেরকে কী করে আমি নিয়োগ দেবো? কাদের মির্জার এই অনৈতিক আবদার রক্ষা করতে না পারায় তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।’
Comments