আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মেলন ২০২১

শিক্ষার সর্বস্তরে মাতৃভাষা চালুর তাগিদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত

মাতৃভাষা রক্ষায় শুধু সংকল্প নয়, পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি। সেইসঙ্গে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও গবেষকেরা।

গতকাল শুক্রবার অনলাইনে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘পৃথিবীর সব ভাষা বেঁচে থাকুক আপন মহিমায়’ প্রতিপাদ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে মুক্ত আসর ও ছায়ানট (কলকাতা)।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারতের শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও গবেষক অধ্যাপক পবিত্র সরকার বলেন, 'মাতৃভাষা রক্ষায় শুধু ভালো উচ্চারণ নয়, কতগুলো পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। আমাদের শিক্ষার সর্বস্তরে মাতৃভাষার, বিশেষ করে বাংলা ভাষার মতো সমৃদ্ধ ভাষা এখনো যোগ্য হয়ে ওঠেনি। তার ফলে দেখি, মানবিক বিষয়গুলো হয়তো মাতৃভাষায় চর্চা হচ্ছে; কিন্তু বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, কারবারি বিষয়, গবেষণা প্রভৃতি পরিচালনা করা হয়ে ওঠেনি।'

সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ভাষাসংগ্রামী ও রবীন্দ্র গবেষক আহমদ রফিক।

তিনি বলেন, ঢাকায় রাষ্ট্রভাষার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে যে তরুণসমাজ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, সেখানে তাদের কোনো ভয় ছিল না। ভীতি ছিল না। কোনো লোভ কিংবা বৈষয়িক চিন্তা ছিল না। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সর্বস্তরে মাতৃভাষা বাংলা চালু করা। এ আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে যায় দ্রুত তরুণসমাজের জন্য।

ভারতের কবি ও সাংবাদিক সৈয়দ হাসমত জালাল বলেন, ‘অনেকেই ভারতের একমাত্র হিন্দি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এটা একেবারে ঠিক না। কারণ, আমাদের সংবিধানে যতগুলো ভাষা আছে, প্রতিটি ভাষাই রাষ্ট্রভাষা। ইদানীং হিন্দিকে অন্য রাজ্যের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলা ভাষার কারণে এশিয়া সাহিত্যে প্রথম নোবেল পায়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে বাংলা ভাষা ভারতে অন্য উচ্চতায় রয়েছে। কিন্তু বাংলা ও বাংলা সংস্কৃতিকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মেলনটি এ জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বীর প্রতীক মেজর জেনারেল (অব.) মাসুদুর রহমান, বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবেদা সুলতানা, নুরুন আখতার, আহমেদ হেলাল, মুক্ত আসরের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আবু সাঈদ, কলকাতা ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

প্রথম অধিবেশনে আলোচনার বিষয় ছিল ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ’। এতে অংশ নেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, নজরুল সংগীতশিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুভ্র দত্ত।

আজ শনিবার দ্বিতীয় দিনে থাকছে তিনটি অধিবেশন। সন্ধ্যা সাতটায় ‘প্রমিত বাংলা: নিখিল বাঙালির লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা’ নিয়ে আলোচনা। এতে অংশ নেন রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক ড. স্বরোচিষ সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা।

রাত সাড়ে আটটায় ‘গণমাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রসার’ নিয়ে আলোচনা করবেন মঞ্চ ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব খ ম হারুন, নজরুল সংগীতশিল্পী বুলবুল মহালনবীশ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে শিল্পী রহমান। রাত সাড়ে নয়টায় ‘আদিবাসী ভাষা: মাতৃভাষা শিক্ষা, চর্চা ও বাস্তবায়ন’ নিয়ে আলোচনা করবেন গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, শুভ্র জ্যোতি চাকমা ও হাসিনুল ইসলাম। 

সম্মেলনের সহযোগিতায় আছে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটি ও স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন।

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

3h ago