কিংবদন্তির মৃত্যু নেই

মিরা নায়ারের অস্কার জয়ী সিনেমা ‘সালাম বম্বে’-এর একটি মিড লং শটে ভারতের ইরফান খান রাস্তার পাশে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন। এই সামান্য সময়ের পর্দা উপস্থিতির মাধ্যমে সিনেমায় আগমন তার। কিংবদন্তির শুরু কীভাবে হয়েছিল সেটা আর মুখ্য বিষয় থাকেনি, সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি কীভাবে কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন ইতিহাসে স্থান পেয়েছে সেগুলো। যেমনটি ইরফানের পূর্বসূরি প্রতিবেশী বাংলাদেশের এ টি এম শামসুজ্জামান অভিনয় শুরু করেছিলেন পেপার বিক্রেতার সহকারী হিসেবে একটি গানে। কোনো ডায়লগও ছিল না তার অভিষেক সিনেমায়। ১৯৬৮ সালের ‘এতটুকু আশা’ সিনেমার ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’ গানের একটি ক্লোজ শটে নিজের ঠোঁট কাঁপিয়ে অভিনেতা হিসেবে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান থেকে এ টি এম শামসু্জামান হয়ে ওঠা কিংবদন্তি এই শিল্পী।
এ টি এম শামসু্জামান। ছবি: সংগৃহীত

মিরা নায়ারের অস্কার জয়ী সিনেমা ‘সালাম বম্বে’-এর একটি মিড লং শটে ভারতের ইরফান খান রাস্তার পাশে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন। এই সামান্য সময়ের পর্দা উপস্থিতির মাধ্যমে সিনেমায় আগমন তার। কিংবদন্তির শুরু কীভাবে হয়েছিল সেটা আর মুখ্য বিষয় থাকেনি, সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি কীভাবে কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন ইতিহাসে স্থান পেয়েছে সেগুলো। যেমনটি ইরফানের পূর্বসূরি প্রতিবেশী বাংলাদেশের এ টি এম শামসুজ্জামান অভিনয় শুরু করেছিলেন পেপার বিক্রেতার সহকারী হিসেবে একটি গানে। কোনো ডায়লগও ছিল না তার অভিষেক সিনেমায়। ১৯৬৮ সালের ‘এতটুকু আশা’ সিনেমার ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’ গানের একটি ক্লোজ শটে নিজের ঠোঁট কাঁপিয়ে অভিনেতা হিসেবে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান থেকে এ টি এম শামসু্জামান হয়ে ওঠা কিংবদন্তি এই শিল্পী।

আন্তর্জাতিক সিনেমা দিয়ে শুরু এবং মুম্বাইয়ের মতো বিশাল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার সুবাদে এঙ্গ লি এর ‘লাইফ অফ পাই’ অথবা রিতেশ বাত্রার ‘লাঞ্চবক্স’ দিয়ে ইরফান খান বিশ্ব কাঁপিয়েছেন। ধুকে ধুকে মরতে থাকা বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে বেড়ে ওঠা এটিএম শামসুজ্জামানের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, তিনি এমন পরিচালক এবং ছবি পাননি যা দিয়ে বিশ্ববাসীকে জানান দিবেন, এই পৃথিবীতে তার সময়ে যে দু’চারজন বিরল অভিনয় শিল্পী জন্মেছেন তাদেরই একজন তিনি।

এ টি এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে আমার শুধুমাত্র একবার দেখা হলেও আলোচনা বেশ দীর্ঘ ছিল। প্রায় ২০ বছর আগের সেই আড্ডা ছিল টেলিভিশন সিরিজ নির্মাণ নিয়ে। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য ড্রামেডির গল্প ভেবেছিলেন তিনি। কোরবান আলী ও তার পরিবারের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড। প্রতি পর্বে থাকবে আলাদা আলাদা গল্প। যতদূর মনে পড়ে, ‘কোরবান আলীর রোজ নামচা’ নাম দিতে চেয়েছিলেন। কোরবান আলি চরিত্রে তিনি নিজে অভিনয় করবেন, শর্ত ছিল চ্যানেলের। বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক সময়ের জনপ্রিয় প্রযোজক আবু তাহের আমার সঙ্গে ওনার সংযোগ ঘটিয়েছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়েছিল দুই আবু তাহেরের সঙ্গে মিলে আমি অর্থাৎ আমরা তিন জন এই চিত্রনাট্য লিখব।

নির্মাতা হিসেবে এটা আমার প্রথম টিভি সিরিজ হওয়ার কথা ছিল। এর আগে আমি কয়েকটি টেলিভিশন ফিকশন বানিয়েছিলাম। পরবর্তীতে কাজটা আর হয়নি। সারজীবনের জন্য তার সঙ্গে কাজ করতে না পারার আফসোস আমার থেকে যায়। সেদিনের আলোচনায় আমি বুঝেতে পেরেছিলাম তার সেন্স অফ হিউমার এর সঙ্গে সেন্স অফ বিউটির কী দুর্দান্ত সমন্বয়। চিত্রনাট্যের সেট আপ, কনফ্রন্টেশন এবং রেজুলেশন বিষয়ে তার পাণ্ডিত্য অসাধারণ। তিনি শুধু সেরা অভিনেতা নন- একাধারে গল্পকার, চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক। তার সঙ্গে কাজ করা মানে আমাদের মতো নবীনদের জন্য সত্যিকার অর্থেই সেরা শিক্ষা। সেই সুযোগ আর হয়ে ওঠেনি বলে আমার দুঃখটা বেশি।

কিংবদন্তির মৃত্যু নেই। তিনি বেঁচে থাকবেন তার অভিনীত চরিত্রে- যেমন নয়ন মনির মোড়ল, সূর্যদীঘল বাড়ির জোবেদ ফকির, গেরিলার তসলিম সর্দার, দায়ী কে-এর কদম আলী এবং অসংখ্য ছবির অন্যান্য চরিত্র হয়ে। স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার লেখা গল্পে, তৈরি করা চরিত্র ও দৃশ্যে।

আরও পড়ুন:

Comments