টিকাদান কার্যক্রমের স্বেচ্ছাসেবীরা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনা টিকাদান কেন্দ্রে মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি টিকা নিতে ঢুকতে না ঢুকতেই স্বেচ্ছাসেবী রুবিনা আক্তার হাসিমুখে তার দিকে এগিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘স্যার আপনি ভ্যাকসিন কার্ড এনেছেন?’
Volunteer.jpg
সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আমরান হোসেন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনা টিকাদান কেন্দ্রে মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি টিকা নিতে ঢুকতে না ঢুকতেই স্বেচ্ছাসেবী রুবিনা আক্তার হাসিমুখে তার দিকে এগিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘স্যার আপনি ভ্যাকসিন কার্ড এনেছেন?’

কার্ডটি পেয়ে রুবিনা তাকে ফর্ম পূরণের নির্ধারিত ডেস্কে নিয়ে গেলেন। ফর্ম পূরণ হলে তাকে ওয়েটিং রুম দেখিয়ে সেখানে অপেক্ষা করার অনুরোধ করলেন রুবিনা।

সেখানে লাইনে অপেক্ষারত আরেকজনকে বললেন, ‘টিকা দেওয়ার জন্য আপনার নাম শিগগিরই ডাকা হবে।’

স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) স্বেচ্ছাসেবী।

বাংলাদেশ সরকারের করোনা টিকাদান কার্যক্রমে চার হাজার ২০০ তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োজিত আছেন। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী এসব স্বেচ্ছাসেবীদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। রুবিনা তাদেরই একজন।

দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া করোনা টিকা কার্যক্রমে সারাদেশের এক হাজারেরও বেশি টিকাদান কেন্দ্রে কাজ করছেন এই স্বেচ্ছাসেবীরা। এজন্য খাওয়া-দাওয়া আর যাতায়াত বাবদ কিছু টাকা পান তারা।

তবে, রুবিনার কাছে বিষয়টা কাজের চেয়েও বেশি কিছু। তার মতে, এটা ‘তার তারুণ্যের সর্বোত্তম ব্যবহার’ ও গর্বের বিষয়।

গত বৃহস্পতিবার ঢামেকের টিকাদান কেন্দ্রে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সেবাদানের মাধ্যমে আমরা খুব ভালো একটা সময় কাটাচ্ছি।’

রেড ক্রিসেন্টের ঢাকা জেলা ইউনিটের সদস্য রুবিনা জানান, পড়াশোনা অনলাইনে হওয়ায়, তারা স্বেচ্ছাসেবী কাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই তারা কাজ করে আসছেন।

এই সংবাদদাতা কার্যক্রম দেখতে ঢাকা শহরের একাধিক টিকাদান কেন্দ্রে যান। কেন্দ্রগুলোতে স্বেচ্ছাসেবীরা খুব ব্যস্ততার মধ্যে থাকলেও, তাদের সব কাজ বেশ গোছানো।

রিসিপশন ডেস্কের স্বেচ্ছাসেবীরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের সহায়তা করেন। কাউকে ডেস্কের দিকে এগিয়ে আসতে দেখলেই তরুণ এই স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের উষ্ণভাবে স্বাগতম জানান।

ফর্ম পূরণ করা থেকে শুরু করে প্রয়োজনে টিকাদান বুথ পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবীরা সহযোগিতা করছেন। সবাই তাদের কাছে সমান গুরুত্ব পাচ্ছে।

তবে, বয়স্ক ও বৃদ্ধদের জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা আরও আন্তরিক। হুইলচেয়ার নিয়ে এগিয়ে যান তাদের জন্য এবং দিনের তালিকা অনুযায়ী টিকা গ্রহীতার তালিকা থেকে নাম যাচাই করে তাদের টিকাদান বুথে নিয়ে যান।

টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না, তা পর্যবেক্ষণে স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের পরবর্তী ৩০ মিনিট পাশের একটি রুমে নিয়ে যান। কোনো সমস্যা দেখা না গেলে, স্বেচ্ছাসেবীরা টিকাগ্রহীতাকে তার স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেন।

হিসাববিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত হোসেন রাব্বি বলেন, স্বেচ্ছাসেবীর এই কাজ তার জন্য আশীর্বাদ।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ঢাকা জেলার যুব বিভাগের প্রধান রাব্বি বলেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ সবার হয় না। মানুষকে সাহায্য করতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।’

মিরপুর ইনস্টিটিউশন অব সাইন্স ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফিয়া উলফার কাছে স্বেচ্ছাসেবীর এ কাজ যথেষ্ট আনন্দের।

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) টিকাদান কেন্দ্রের ৮ নম্বর বুথে কাজ করছিলেন তিনি। সেসময় এই সংবাদদাতাকে তিনি বলেন, ‘দিনশেষে টিকা নেওয়ার পরে মানুষের হাসিমুখ আমাকে আনন্দ দেয়।’

মিরপুরের পল্লবী থেকে টিকা নিতে আসা হালিমুর রহমান স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তা পেয়ে অত্যন্ত খুশী। তিনি বলেন, ‘আমি মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে টিকা নিতে পেরেছি। সব কিছু খুব গোছানো। স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা প্রশিক্ষিত আর খুব যত্নবান। সবসময় তারা পাশেই ছিলেন এবং টিকা নিতে অপেক্ষায় থাকা লোকদের সঙ্গে গল্প করছিলেন।’

বিডিআরসিএস কর্মকর্তাদের মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) সহযোগী হিসেবে সারাদেশে ১৪ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত আছেন।

কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সব উপজেলায় এক হাজারেরও বেশি টিকাদান কেন্দ্রে চার হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে গেলে, স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যাও বাড়ানো হবে বলে জানান তারা।

বিডিআরসিএস’র যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের পরিচালক ইমাম জাফর শিকদার বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা প্রতিদিন আমাদের অবাক করে দিচ্ছে। তহবিলের ঘাটতি থাকায়, আমরা প্রয়োজনীয় সবকিছু দিতে পারি না। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তিনি জানান, ডিজিএইচএসের কাছ থেকে রেড ক্রিসেন্ট কোনো আর্থিক সহায়তা নেয় না।

বিডিআরসিএস ১৯৭৩ সালের ৩১ মার্চ রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ২২ দ্বারা গঠিত হয়।

ডিজিএইচএসের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘কোভিড-১৯ শুরু হলে জরুরিভাবে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবীরা আমাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন।’

‘এখন তারা আমাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করছেন। আমরা তাদের সহযোগিতার জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ’, যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Pro-Awami League journalist couple arrested

The indiscriminate arrests and murder charges

Reckless and unsubstantiated use of murder charges will only make a farce of the law, not bring justice to those who deserve it.

7h ago