পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর

ভোটের তারিখ ঘোষণা না হলেও পশ্চিমবঙ্গে জমে উঠেছে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। এবারের নির্বাচনে বিজেপি, তৃণমূল ও কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটের ত্রিমুখী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাজ্যটির মুসলিম ভোট।
বিধানসভা নির্বাচনী প্রচারণায় বিজেপি ও তৃণমূল। ছবি: সংগৃহীত

ভোটের তারিখ ঘোষণা না হলেও পশ্চিমবঙ্গে জমে উঠেছে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। এবারের নির্বাচনে বিজেপি, তৃণমূল ও কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটের ত্রিমুখী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাজ্যটির মুসলিম ভোট।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এবার বিধানসভা নির্বাচনে ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মুসলিম ভোট।

ইন্ডিয়া টুডেসহ কয়েকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, এ বছর বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় ৩০ ভাগ ভোটার মুসলমান।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনে যেই জিতুক, ব্যবধান হবে অল্প। ফলে, ২৭ থেকে ৩০ ভাগ মুসলিম ভোটকে এখানে ফলাফল নির্ধারক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

রাজ্যের জেলাগুলোর মধ্যে উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ ও মালদায় মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই তিন জেলা মিলে বিধানসভায় আসন আছে ৪৪টি। এর বাইরে অন্তত সাতটি জেলায় সংখ্যালঘুর ভোটের সংখ্যা বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ১০টি জেলায় ১৫০টি আসনে মুসলিম ভোটাররা নির্বাচনের ফলে প্রভাব রাখবে। 

ভোটবিভাজন 

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ, হিন্দুত্ববাদ ও বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশের মতো বিষয় নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে রাজনীতি চালানো কোনো দলকে মুসলিমরা তো বটেই হিন্দুদেরও বড় অঙ্কে ভোট দেওয়ার নজির কম।

তবে এবারের হিসাব কিছুটা জটিল।

২০১১ সালে বামফ্রন্টের পরাজয় ও তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে মুসলিমদের ভোটব্যাংক অন্যতম ভূমিকা রেখেছিল। তবে এই এক দশকে মুসলিমদের মধ্যে মমতার তৃণমূলের জনপ্রিয়তা কমেছে।

এদিকে, গত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গে উত্থান ঘটেছে দুই মুসলিম নেতা আব্বাস সিদ্দিকী ও আসাদউদ্দিন ওয়াইসির।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন দুই প্রভাবশালী মুসলিম নেতার দল।

ইন্ডিয়া টুডে জানায়, বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিতে কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটে যোগ দিতে পারে পশ্চিমবঙ্গের ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকীর নবগঠিত রাজনৈতিক দল ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’।

অন্যদিকে, ভারতের হায়দ্রাবাদভিত্তিক রাজনৈতিক দল সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) দলের প্রেসিডেন্ট আসাদউদ্দিন ওয়াইসি চাইছেন আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের সঙ্গে জোট করতে।

সমস্যা হলো, গত বছর বিহারের নির্বাচনের পর থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধ বেড়েছে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির।

বিহারের নির্বাচনে এআইএমআইএমের পাঁচ প্রার্থীর নাটকীয় জয় পাওয়ার পর ওই দলের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির বিরুদ্ধে বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়ার অভিযোগ তোলে কংগ্রেস।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কংগ্রেসের নেতারা সরাসরি বলছেন, ওয়াইসির দল মুসলিম ভোট কেটেছে বলেই বিজেপি জোট বিহারে আবার ক্ষমতায় আসতে পারলো।

ফলে, কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটে এআইএমআইএমের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা কম। ওয়াইসি চাইছেন, আব্বাসের দলের সঙ্গে আলাদা জোটে নির্বাচন করতে।

এদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিতে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছে আব্বাস সিদ্দিকীর দল।

আব্বাস সিদ্দিকী কংগ্রেস-বামফ্রন্টের সঙ্গে যোগ দেবেন নাকি ওয়াইসির সঙ্গে আলাদা জোট করবেন- এ নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছে।

আব্বাস সিদ্দিকী বাংলাভাষী মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। আদিবাসী অধিকার নিয়ে কথা বলায় অন্যান্য গোষ্ঠীর মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

অন্যদিকে, শহুরে উর্দুভাষী উচ্চবিত্ত মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় ওয়াইসি।

তারা দুজনই বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ফুরফুরা শরিফে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দী বিজেপি ও তৃণমূল হলেও দুই মুসলিম নেতা যদি সমঝোতায় পৌঁছে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টে যোগ দেয় তবে তৃতীয় শক্তি হিসেবে জোটটি লড়াইয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। 

পরিসংখ্যান যা বলছে 

অতীতে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টে মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও এখন সেটা কমেছে।

লোকনীতি নামের একটি সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের লোকসভার নির্বাচনে রাজ্যে মুসলিম ভোটের ৪০ ভাগ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। ২০১৯ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭০ ভাগ অর্থাৎ মুসলিমদের ভোট তৃণমূলের দিকে কিছুটা বেড়েছে।

ফলে, আব্বাস সিদ্দিকী কিংবা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির পৃথক নির্বাচন মানেই তৃণমূলের অন্তত দুই ডজন আসন অনিশ্চয়তায় পড়া।

পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম জনগোষ্ঠী যারা বিজেপির হিন্দুত্ববাদ বিরোধী তাদের কেউই বিজেপিকে ভোট দেবে না। এখানে তাদের বিকল্প হলো তৃণমূল, কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোট কিংবা আব্বাস-ওয়াইসির মুসলিম জোট।

একটা বড় অংশের ভোট ভাগ হয়ে গেলে লাভ হবে বিজেপির।

তৃণমূলের কাছে মুসলিম ভোট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই কারণে হিন্দুদের মধ্যে দলটির জনপ্রিয়তা কমেছে। এরই সুবিধা নিচ্ছে বিজেপি। ২০১৪ সালে লোকসভায় বিজেপি হিন্দু ভোটের ২১ ভাগ পায়, ২০১৯ সালে পেয়েছে ৫৭ ভাগ।

মমতার অভিযোগ, বিজেপিকে নির্বাচনে জেতাতেই বিজেপি বিরোধীদের ভোট কাটার জন্য মাঠে নেমেছেন মুসলিম দুই নেতা।

এর জবাবে আব্বাস সিদ্দিকী বলেছেন, তৃণমূল তাদের জন্য কিছুই করেনি তাই মুসলিমদের রাজনৈতিক শক্তি দরকার।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আব্বাস সিদ্দিকি বা আসাদউদ্দীন ওয়াইসি নির্বাচনে মমতার জয়ের জন্য উদ্বেগের।

তবে এই দুই মুসলিম নেতার উত্থানের ফলে মমতা ‘মুসলিমবান্ধব’ বলে বিজেপি যে প্রচারণা চালিয়ে আসছে সেটাতে কিছুটা ভাটা পড়বে।

এবারের নির্বাচনে অমিত শাহ’র সামনে এখনও পর্যন্ত শক্তিশালী বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মমতাই। ফলে, ধর্মভিত্তিক ভোটবিভাজনের রাজনীতিতে ভোটাররা কেমন সায় দেবেন সেটিই পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।

আরও পড়ুন-

পশ্চিমবঙ্গে মমতাই থাকবে না বিজেপি আসবে

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago