প্রবাস

জাপানে ভার্চুয়ালি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস

করোনা মহামারি কারণে চলতি বছর জাপানে ভার্চুয়ালি পালিত হয়েছে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আমন্ত্রিত অতিথিদের অংশগ্রহণে আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি সকালে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসে অনলাইন প্লাটফর্মে ভার্চুয়ালি এই আয়োজন করা হয়।

করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এবং জাপান সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূতাবাস এ বছর অনলাইনে শহীদ দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

সকালে ভাষা শহীদদের স্মরণে দূতাবাসের অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে দূতাবাস প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সংগীত বাজানোর মাধ্যম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন রাষ্ট্রদূত। তারপর ভাষাশহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এরপর দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে আলোচনা অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ।

এ সময় তিনি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে মিশে আছে ভাষা আন্দোলন ও একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি। একুশ এখন বিশ্বের মানুষের কাছে সংগ্রাম ও মর্যাদার প্রতীক। একুশ আমাদের প্রেরণা, একুশ আমাদের শিক্ষা দেয় অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার।’

রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য শেষে অনলাইন আলোচনায় অংশ নেন জাপান বাংলাদেশ সোসাইটির (জেবিএস) প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে। তিনি জানান, জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে জেবিএস আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সেক্রেড হার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মাসাকি ওহাসি বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে বাংলায় আলোচনা করেন।

এ ছাড়া, ভিডিও বার্তায় জাপানিজ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেসকোর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ইয়োশিয়াকি ইশিদা এই অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান।

তোশিমা সিটির মেয়র ইউকিও তানাকো ভিডিও বার্তায় বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস জাপানিদের মাতৃভাষার কথা মনে করিয়ে দেয়। তোশিমা সিটি টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশ দলকে আতিথেয়তা দেবে।

এরপর জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারাও অনলাইন আলোচনায় অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। জাপানি নাগরিক, প্রবাসী বাংলাদেশিসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অতিথি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

দুতাবাসের আয়োজন ছাড়াও বরাবরের মতো টোকিওর স্থায়ী শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। তবে, করোনার কারণে এবছর প্রবাসীদের আয়োজন অনেকটাই সীমিত আকারে এবং কিছুটা বিচ্ছিন্নভাবে পালিত হয়। এর অন্যতম কারণ ছিল, একুশের প্রভাতফেরি আয়োজন না করা নিয়ে দূতাবাসের প্রজ্ঞাপন জারি। 

গত ৯ ফেব্রুয়ারি টোকিও’র বাংলাদেশ দূতাবাসের অনলাইন নোটিশ বোর্ডে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়- টোকিওতে চলমান জরুরি অবস্থার কারণে এ বছর ইকেবুকুরো নিশিগুচি পার্কে স্থাপিত শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পার্কে যেতে চান, সেক্ষেত্রে জাপান সরকার নির্দেশিত আইন ও বিধিবিধান (স্বাস্থ্যবিধিসহ) মানতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

সীমিত আকারে অনেকটা বিচ্ছিন্নভাবে পালিত হলেও প্রবাসীদের উপস্থিতির কমতি ছিল না। কারণ, মহান শহীদ দিবস বাঙালির আত্মমর্যাদার দিবস, মাথা নত না করার দিবস। তাই সকাল থেকেই শহীদ মিনার প্রাঙ্গন প্রবাসীদের পদচারণায় মুখরিত হতে থাকে। হাতে পুস্পস্তবক এবং মুখে কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি...।’

তবে, সময় নিদিষ্ট বা সীমিত না থাকায় এবং রোববার ছুটির দিন হওয়ায় প্রবাসীরা দিনভর ইকেবুকুরোতে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন।

উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাপান সরকার ঘোষিত রাজধানী টোকিওসহ ১০টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বর্তমানে জরুরি অবস্থা চলছে। যা আগামী সাত মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে।

[email protected]

 

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago