মিয়ানমারে অভ্যুত্থান: সামরিক বাহিনীর হুমকি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ

মিয়ানমারের প্রধান প্রধান শহরে বিক্ষোভ করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর হুমকি উপক্ষো করে আজও হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।

আজ দেশটির সামরিক বাহিনীর একটি বিবৃতি প্রচারের সত্ত্বেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বিক্ষোভে অংশ নেন তারা। এতে, বিক্ষোভকারীরা তাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছেন বলে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম এমআরটিভিতে প্রচারিত সামরিক বাহিনীর ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা এখন জনগণকে- বিশেষ করে আবেগপ্রবণ কিশোর ও তরুণদের প্ররোচিত করছে, যেখানে তারা প্রাণহানির শিকার হতে পারেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবিসি জানায়, বিবৃতিতে ‘দাঙ্গা ও নৈরাজ্য’র বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে ‘সহিংসতা এবং উস্কানিমূলক’ নীতি লঙ্ঘনের দায়ে ব্রডকাস্টার পেজগুলো সরিয়ে ফেলার অনুরোধ করা হয়।

গত রোববার সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অন্তত দুইজন নিহত হওয়ার পর সামরিক বাহিনীর এই বিবৃতি এলো। রোববারের ওই ঘটনা গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলমান বিক্ষোভের সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা ছিল।

পুলিশ মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে আজ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে এবং একটি জল কামানের ট্রাককে ঘটনাস্থলের দিকে যেতে দেখা যায়।

গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চলছে।

দেশটির সামরিক নেতারা অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তাকে গৃহবন্দী করে রেখেছেন। সু চির বিরুদ্ধে অবৈধ ওয়াকিটকি রাখা এবং দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের একজন তেত তেত হ্লেয়িং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা সামরিক জান্তা চাই না, আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।’

বিবিসি জানায়, বিক্ষোভকারীরা সামরিক শাসন অবসানের দাবি করে আসছেন। একইসঙ্গে তারা অং সান সু চি ও ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) পার্টির সিনিয়র সদস্যদের মুক্তি চান।

এসব ঘটনায় দেশটির সামরিক নেতাদের ওপর বিদেশি চাপ বেড়েছে।

সর্বশেষ অবস্থা কী?

আজও মিয়ানমারের প্রধান প্রধান শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের পতাকা উত্তোলন করে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। স্থানীয় প্রচার মাধ্যম বিশাল জনতার ছবি টুইট করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সোমবারের বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয় ‘২২২২২ বিপ্লব’। কারণ, এটি ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা আজকের বিক্ষোভকে ১৯৮৮ সালের ৮ আগস্টের ‘৮৮৮৮ গণজাগরণ’ নামে পরিচিত বিক্ষোভের সঙ্গে তুলনা করেন।

১৯৮৮-তে সামরিক বাহিনী সরকার বিরোধী বিক্ষোভের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এতে শত শত বিক্ষোভকারী নিহত হন। অনেকে এই তারিখটিকে মিয়ানমারের একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে মনে করেন।

আজকের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সান সান মাউ রয়টার্সকে বলেন, ‘সবাই যোগ দিচ্ছে। আমাদের এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

আরেক বিক্ষোভকারী এএফপিকে বলেন, ‘আমরা আজ বিক্ষোভে অংশ নিতে এসেছি। যতক্ষণ না আমরা জিতছি, ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাব। আমরা দমন-পীড়ন নিয়ে চিন্তিত। তবুও সামনে এগিয়ে যাব।’

স্থানীয় প্রচার মাধ্যম ফ্রন্টিয়ার-এর সম্পাদক থম্পসন চাউ বিবিসিকে বলেন, ‘আজকের বিক্ষোভকে আগের চেয়ে বড় মনে হয়েছে। অনেক সড়ক ও মহাসড়ক মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। সব জায়গার দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন:

Comments