ছবি হাতে হাতিরঝিলে মা, মিললো ১ মাস আগে নিখোঁজ ছেলের মরদেহের সন্ধান

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে প্রায় এক মাস আগে সাদমান সাকিব রাফি নামে ২৩ বছর বয়সী এক যুবক নিখোঁজ হয়েছিলেন। এরপর থেকে প্রতিদিনই রাফির মোবাইলে তার পরিবারের সদস্যরা ফোন করতেন। গত ২৮ জানুয়ারি রাফির সিম চালু পাওয়া যায়। এক নারী ফোন রিসিভ করেন।
Rafi_23Feb21.jpg
সাদমান সাকিব রাফি | ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে প্রায় এক মাস আগে সাদমান সাকিব রাফি নামে ২৩ বছর বয়সী এক যুবক নিখোঁজ হয়েছিলেন। এরপর থেকে প্রতিদিনই রাফির মোবাইলে তার পরিবারের সদস্যরা ফোন করতেন। গত ২৮ জানুয়ারি রাফির সিম চালু পাওয়া যায়। এক নারী ফোন রিসিভ করেন।

তিনি জানান, হাতিরঝিল এলাকায় ঝাড়ু দেওয়ার সময় তিনি সিমটি কুড়িয়ে পেয়েছেন। এ ঘটনার দুই ঘণ্টা পরে তিনি আবার সিমটি বন্ধ করে দেন। রাফির পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি থানায় জানানো হলে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই নারীর অবস্থান শনাক্ত করেন এবং পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে রাফির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই নারী জানান, তিনি রাফি নামে কাউকে চেনেন না।

নিখোঁজ ছেলের সন্ধানে মনোয়ারা হোসেন নিজেই হাতিরঝিলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি ছেলের ছবি হাতে হাতিরঝিলে আসেন। সেখানে পথচারী ও ফেরিওয়ালাদের রাফির ছবি দেখিয়ে তিনি জানতে চান— কেউ তার ছেলেকে দেখেছেন কি না। এই কাজে পুলিশের সাহায্য নিতে তিনি হাতিরঝিল থানায় গিয়েছিলেন।

পুলিশ তাকে জানায়, ১৪ জানুয়ারি তারা হাতিরঝিল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। ময়নাতদন্তের পরে দীর্ঘ দিন মরদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পড়েছিল। গত ১১ ফেব্রুয়ারি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ হিসেবে মরদেহটি দাফন করেছে।

মনোয়ারা হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পুলিশ আমাকে ছবি দেখায়। লাশটা পানিতে ছিল, ফুলে গিয়েছিল। তারপরও ছবিতে কিছুটা মিল পাওয়া যায়। এরপর আমাকে জুতা দেখায়। জুতা দেখেই আমি চিনতে পারি, এটা আমার ছেলের জুতা। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম আমার ছেলেকে কোথায় দাফন করেছে আমরা এখনো জানি না। যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি আগামীকাল আসবেন।’

‘পুলিশের ধারণা ছিল আমার ছেলে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে গেছে। অথচ ১৩ জানুয়ারি আমার ছেলে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। আমি বারবার বলেছি, আমার ছেলে জঙ্গি হতে পারে না। আমার ছেলের তো আত্মহত্যাও করবে না। আমার প্রশ্ন, আমার ছেলেকে কারা-কেন হত্যা করল’— বলেন মনোয়ারা হোসেন।

তিনি আরও বলেন, ‘হাতিরঝিলে এক পাশে লাশ পাওয়া গেছে, অন্য দিকে সিম পড়েছিল। সিম চালুর কথা জানানোর পরেও প্রশাসন খুঁজে দেখেনি, আমার ছেলের সিম কীভাবে হাতিরঝিল এলাকায় গেল।’

মনোয়ারা হোসেন বলেন, ‘তিন ভাই-বোনের মধ্যে রাফি সবার ছোট। তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সৌদি আরবে। তিন বছর আগে রাফি মালয়েশিয়ার এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আসার পরে করোনা পরিস্থিতি কারণে সে আর ফিরে যেতে পারেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাফির তেমন বন্ধু ছিল না। ঢাকা শহরও ভালো মতো চিনতো না।’

ছেলে নিখোঁজ হওয়ায় মনোয়ারা হোসেন ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ১৩ জানুয়ারি সকালে রাফি কাউকে কিছু না বলেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।

হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন-অর-রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মনোয়ারা হোসেন তার ছেলের মরদেহ শনাক্ত করেছেন। ১৪ জানুয়ারি হাতিরঝিল থেকে আমরা অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছিলাম। ময়নাতদন্তের পরে দীর্ঘ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে মরদেহ ছিল। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।’

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago