আশুগঞ্জে বাঁধ ভেঙে ২ শতাধিক বিঘা জমির ফসল নষ্ট
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল-ধরখার হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আগরতলা পর্যন্ত মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের খালের উপর নির্মিত ক্রসবাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে করে প্রায় দুই শতাধিক বিঘা রোপা ইরি ধানের জমি তলিয়ে গেছে।
বাঁধ ভেঙে ফলন হওয়া সরিষা ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও অনেক পুকুর-জলাশয়ে চাষ করা মাছ ভেসে গেছে পানির তোড়ে।
আজ মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষা সোহাগপুর এলাকার এই ক্রসবাঁধটি ভেঙে যায়।
আশুগঞ্জ পুরাতন রেলগেট এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) পলাশ অ্যাগ্রো ইরিগেশন (স্থানীয়ভাবে সবুজ প্রকল্প নামে পরিচিত) প্রকল্পের কুলিং রিজার্ভার পুকুরটি ভরাটের ফলে আয়তন কমে যাওয়া এবং মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজে সেচ খাল-ড্রেন ভরাট ও ভেঙে ফেলার কারণে খাল ছোট হয়ে যাওয়ায় পানির চাপে বাঁধটি ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা।
সেচ প্রকল্পের প্রধান সুইচ বন্ধ করে খালে পানির প্রবাহ কমিয়ে বাঁধটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, আজ দুপুরে হঠাৎ করে সোহাগপুর এলাকায় খালের উত্তর পাশের একটি অংশ ভেঙে গিয়ে তীব্র স্রোতে ফসলের মাঠে পানি ঢুকতে শুরু করে। এসময় ড্রেনের পাশের জনৈক জলফু মেম্বারের একটি বালির ভিটি ও গাছপালা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং অন্তত দুই শতাধিক বিঘা রোপা ইরি ধান ও পাকা সরিষা ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। পানির স্রোতের সঙ্গে ব্যাপকভাবে বালি যাওয়ায় জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সেচ প্রকল্পের আশুগঞ্জ উপজেলার রেলগেইট এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের পুকুরটি ছিল প্রধান রিজার্ভার। গত বছর এ পুকুরটির প্রায় ৭৫ শতাংশ ভরাট করে ফেলে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। ফলে রিজার্ভার পুকুরের আয়তন কমে যাওয়ায় পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
আশুগঞ্জ নদী বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজে মহাসড়কের পাশে প্রায় ১১ কিলোমিটার ড্রেন-খাল ভরাট ও ভেঙে ফেলা হয়েছে। আগে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট প্রশস্ত ড্রেন-খাল দিয়ে সেচের পানি প্রবাহিত হলেও এখন তা কমে কোনো কোনো স্থানে চার থেকে পাঁচ ফুট নালায় পরিণত হয়েছে। অপ্রশস্ত ড্রেন-নালা বালুতে ভরাট হয়ে এর গভীরতা কমে যাওয়ায় পানির চাপে তা ভেঙে যায়।
চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর, আশুগঞ্জ, সরাইল ও নবীনগর উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান এবং প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে জানুয়ারির ১৫ তারিখে সেচের পানি অবমুক্ত করা হয়। পানি অবমুক্ত করার সময় ড্রেন দিয়ে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহিত না হওয়া বালিতে ড্রেন ভরাট হয়ে সেচ কাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের সেই আশঙ্কাই সত্য হল।
সোহাগপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আরমান সিকদার বলেন, ‘ক্রসবাঁধ ভেঙে আমার মোট ১৪ বিঘা জমি তলিয়ে গেছে। এসব জমিতে ইরি ধান ও সরিষা ছিল।’
নাছির মিয়া নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘আমার ছয় বিঘা সরিষা ক্ষেত তলিয়ে গেছে। জলফু মেম্বারের বাড়ির অর্ধেক পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে মাসুদ মিয়ার চাতালকলেরও।’
বিএডিসি উপসহকারি প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় অনেক কৃষকের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘কৃষকদের বড় ধরণের ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের অভ্যন্তরে সেচ প্রকল্পের প্রধান সুইচ গেটে পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পানি কমে গেলে ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হবে।’
Comments