ভারতে করোনা পরিস্থিতি যেভাবে নিয়ন্ত্রণে এলো

ছয় মাস আগেও করোনা মহামারিতে ব্যাপক সংকটের মধ্যে ছিল ভারত। দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ বস্তিগুলোতে লাখ লাখ মানুয়ের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে জায়গা হচ্ছিল না। চিকিৎসকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন।
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ছয় মাস আগেও করোনা মহামারিতে ব্যাপক সংকটের মধ্যে ছিল ভারত। দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ বস্তিগুলোতে লাখ লাখ মানুয়ের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে জায়গা হচ্ছিল না। চিকিৎসকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন।

তবে, দেশটির বর্তমান অবস্থা কিছুটা অন্যরকম। দৈনিক শনাক্তের হার গত সেপ্টেম্বর মাসে ৯০ হাজার হলেও এ বছর ফেব্রুয়ারিতে তা ১০ হাজারে নেমে এসেছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানী দিল্লিতে প্রায় নয় মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোনো মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়নি।

করোনা মহামারি মোকাবিলায় হিমশিম খেলেও ভারত সরকারের তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা ছাড়াই দেশটি চরম সংকট পাড়ি দিয়ে এসেছে। এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে কঠোর লকডাউন করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনলেও ভারতে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা ছাড়াই এটি ঘটেছে। ভারতে এখনো সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ জারি আছে। অতিরিক্ত রোগীতে বোঝাই হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি ভালো করতে উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। দেশটির অর্থনীতি আবারও সচল হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ শুরু হয়েছে এবং জনগণ তাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাপনে ফিরতে শুরু করেছেন।

যেভাবে ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলো

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ভ্যাকসিনের কারণে হয়নি। আগস্টের মধ্যে ৩০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ভারত গণটিকা কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু, ধনী দেশগুলির তুলনায় ভ্যাকসিন কার্যক্রমে ভারত এখনও বেশ পিছিয়ে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইনের ডেটা অনুসারে, এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রতি ১০০ জনে এক জনেরও কম মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০০ জনে ২৭ জন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ জনে ১৯ জনের কাছাকাছি ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন: দেশটির অল্প বয়সী জনগোষ্ঠীর আধিক্য বা শহরাঞ্চলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া।

তবে অনেকেরই ধারণা, সরকারি হিসাবে করোনা আক্রান্তের যে সংখ্যা দেখা যাচ্ছে বাস্তব পরিস্থিতি তার চেয়ে ভিন্ন। দেশটিতে করোনা পরীক্ষার হার কমেছে। এর অর্থ হলো অনেকে আক্রান্ত হলেও তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি করোনা পরীক্ষা করা হতো। সরকারের বায়োমেডিকেল গবেষণা ইনস্টিটিউট ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এই বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ লাখ করোনা পরীক্ষা হয়েছে।

এদিকে, করোনা পরীক্ষা কমলেও পজেটিভ শনাক্তের হার গত জানুয়ারিতে প্রায় ৬ শতাংশ ছিল এবং এখন ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে তা ৫ শতাংশের বেশি।

এ থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, দেশটিতে আক্রান্তের হার কমেনি বরং পর্যাপ্ত সংখ্যক করোনা পরীক্ষাই হচ্ছে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনায় রয়েছে, কোনো দেশে স্বাভাবিক অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা পুনরায় চালু করার আগের দুই সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ৫ শতাংশ বা তার চেয়েও কম হওয়া প্রয়োজন।

ভারতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ কমে যাওয়ায় উদযাপনের চেয়ে সতর্ক হওয়াই বেশি জরুরি। এখনো প্রত্যেকেরই করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। তাছাড়াও, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ভারতেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।

অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিবেদী স্কুল অফ বায়োসায়েন্সের পরিচালক ও ভাইরাোলজিস্ট শহিদ জামিল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভারতে করোনায় আক্রান্তের হার কমে যাওয়ার পেছনে একটি কারণ হতে পারে অ্যান্টিবডি। দেশটিতে বিপুল সংখ্যক মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল এবং তারা আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি পেয়েছেন। তাই তারা এখন সুরক্ষিত।

করোনায় আক্রান্তদের শরীরে অ্যান্টিবডি ও পুনরায় সংক্রমণের সম্ভাবনা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

তবে ভারতের জনবহুল শহরগুলোতে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি থাকার সম্ভাবনা আছে।

গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে যে, মুম্বাইয়ের বস্তিবাসীদের অর্ধেকেরও বেশি ইতোমধ্যেই করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।

জানুয়ারিতে দিল্লি সরকার পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দিল্লির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন।

এছাড়াও, ভারতে তুলনামূলকভাবে তরুণদের সংখ্যা বেশি। এটিও দেশটির ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে করোনার পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্য করেছে। কম বয়সীরা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে হালকা উপসর্গ দেখা যায় এবং তাদের মধ্যে মৃত্যুর হারও কম।

ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারির অনুযায়ী দেশটির অর্ধেক জনসংখ্যা ২৫ বা তার চেয়ে কম বয়সী এবং ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বা তার নিচে।

Comments

The Daily Star  | English

Tigers on brink of heavy defeat in second T20I

Bangladesh skipper Najmul Hossain Shanto won the toss and chose to field first in the second T20I of the three-match series against India in Delhi on Wednesday.

3h ago