কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগ: সেশন কোর্টে আবেদন করার নির্দেশ

র‌্যাব হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ দিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে হাজির করার আবেদন মহানগর দায়রা ও জজ আদালতে জমা দিতে বলেছেন আমলি আদালত। আজ রোববার দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবু বকর সিদ্দিক এ আদেশ দেন।
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। ছবি: সংগৃহীত

র‌্যাব হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ দিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে হাজির করার আবেদন মহানগর দায়রা ও জজ আদালতে জমা দিতে বলেছেন আমলি আদালত। আজ রোববার দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবু বকর সিদ্দিক এ আদেশ দেন।

আদালত বলেন, উচ্চ আদালতে দরখাস্ত পাঠানোর এখতিয়ার আমলি আদালতের নেই। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে দরখাস্তটি মহানগর দায়রা ও জজ আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

এদিন ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিমের আদালতে কিশোরের রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়। একই আদালতে আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া নির্যাতনের অভিযোগ এনে কিশোরকে হাজির করার আবেদন জমা দেন। মহানগর হাকিম আবেদনটি শুনানির জন্য আমলি আদালতে পাঠান।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৬ মে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর র‌্যাব-৩ এর সদস্যদের হাতে গ্রেপ্তার হন। লালমাটিয়ার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে কয়েকজন র‌্যাব সদস্য তাকে অমানসিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। ফলে তিনি দুই কানের ভেতরে ও বাম পায়ে আঘাত পান। ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন অনুযায়ী যা সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অপরাধ।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কিশোর শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং তাকে টর্চার করা হয়েছে। তার রিমান্ড শুনানির আর সুযোগ নেই। তাকে আদালতে উপস্থিতই করা হয়নি, আসামির অনুপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির সুযোগ নেই। আমরা অভিযোগ করেছিলাম, সে (কিশোর) আমাদের হেফাজতে নেই। তাহলে কিশোরকে সেশন কোর্টে পাঠানো হোক। তার পক্ষে আমরা অভিযোগ উত্থাপন করব। অভিযোগটি আমলি আদালতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বলা হয়, উচ্চ আদালতে আবেদন পাঠানো এখতিয়ার নেই। আবেদনটি আমরা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে উঠিয়ে নিয়েছি, সেশন কোর্টে ফাইল করবো।’

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপপরিদর্শক ও মামলাটির নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আফছর আহমেদ কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন।

আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, আহমেদ কবির কিশোর ও মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে রাষ্ট্রবিরোধী ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কার্টুন বা ব্যাঙ্গ চিত্র এঁকে সুনাম ক্ষুণ্ন করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অভিযোগ রয়েছে। মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আসামিরা ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে জনগণের মধ্যে মিথ্যা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির উদ্দেশ্যে অপপ্রচার করে আসছিলেন। ফেসবুক পেইজ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান এবং বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল।

মামলাটির নিরপেক্ষ তদন্তে আই অ্যাম বাংলাদেশ ফেসবুক পেইজটির অ্যাডমিন-এডিটর কারা, পেইজটি কারা পরিচালনা করেন, তাদের পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের উদ্দেশ্য কী তা জানতে আসামিদের উপস্থিতিসহ জিজ্ঞাসাবাদ একান্ত প্রয়োজন।

এ ছাড়া, আসামিদের হেফাজত থেকে মামলার এজাহার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডিজিটাল আলামত, বাদীর স্ক্রিনশট দেওয়া বিভিন্ন ফেসবুক আইডি নিয়ন্ত্রণে নিতে এবং আসামিরা মেসেঞ্জার, গ্রুপ মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে যেসব লোকদের সঙ্গে চ্যাট করেছে সেসব অ্যাপসের ইনবক্স চেক করে মামলার গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল তথ্য উদঘাটনে আসামিকে তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।

এর এক দিন পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর হয়।

গত বছরের মে মাসে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে রাজধানীর কাকরাইল ও লালমাটিয়া থেকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। কিশোর ও মুশতাকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ কিশোর, মুশতাক ও রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পুলিশ জানায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাকি সাত আসামি— সাংবাদিক তাসনীম খলিল, সাংবাদিক সাহেদ আলম, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, জুলকারনাইন সায়ের খান, আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার বিদেশে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি।

সাইবার ট্রাইব্যুনাল গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পুনঃতদন্তের আদেশ দেন।

আরও পড়ুন

কার্টুনিস্ট কিশোরের রিমান্ড নামঞ্জুর

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago