ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে: সামিয়া রহমান

অ্যালেক্স মার্টিন নামে যার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে, সেই নামে কেউ নেই বলে দাবি করেছেন সামিয়া। তিনি বলেন, তাকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি ন্যায়বিচার পাননি। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে ও উচ্চ আদালতে যাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে সামিয়া রহমানসহ উপস্থিত অন্যান্যরা। ছবি: স্টার

অ্যালেক্স মার্টিন নামে যার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে, সেই নামে কেউ নেই বলে দাবি করেছেন সামিয়া। তিনি বলেন, তাকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি ন্যায়বিচার পাননি। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে ও উচ্চ আদালতে যাবেন।

আজ সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, যে অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, যার পরিচয় (শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যালেক্স মার্টিন পরিচয়ধারী) দিয়ে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস থেকে চিঠি এসেছে, সেই অ্যালেক্স মার্টিন বলেই তো ওই জার্নালে কেউ নেই এবং তারা এ ধরনের চিঠি পাঠায়নি। শিকাগো জার্নালের এডিটর নিজে এটি স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে তিনি জার্নালের সম্পাদকের সঙ্গে তার নিজের একটি মেসেঞ্জার কনভারসেশনের স্ক্রিনশট সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের দেন।

তিনি দাবি করেন, যে লেখাটির জন্য তিনি অভিযুক্ত, সেটি তিনি লিখেননি, কোথাও পাবলিশ হওয়ার জন্য জমা দেননি। তিনি আরেকজন অভিযুক্ত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তি পাওয়া ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি মারজান নিজেও ট্রাইবুনালের কাছে স্বীকার করেছে। তবুও আমাকে কেন শাস্তির আওতায় আনা হলো? এটি ষড়যন্ত্র।

সামিয়া রহমান বলেন, ‘লেখাটি যে আমার নয়, সেটি জানিয়ে তৎকালীন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের কাছে লেখাটি প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিলাম ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। ডিনের সেটি সিন্ডিকেটে তোলার কথা ছিল, কিন্তু তিনি কেন তুলেননি? বরং সাত মাস ঝুলিয়ে রেখে ২০১৭ সালে উপাচার্য আরেফিন স্যারকে ভিসির পদ থেকে সরানোর দুদিন পর তিনি বলেন, এবার তিনি বিষয়টি সিন্ডিকেটে তুলবেন। শিকাগো জার্নাল থেকে চিঠি এসেছে।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটি কয়েকবছর আগের বিষয়। এখন এতকিছু মনে নেই। তা ছাড়া, তদন্ত কমিটিও আমাকে ডাকেনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার নিজস্ব নিয়মে এগিয়েছে। তদন্ত কমিটি হয়েছে, সিন্ডিকেটে গেছে, আমি আমার কাজ যথাযথভাবে সবসময় করে এসেছি। এখন এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’

সামিয়া রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যে প্লেইজারিজমের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, সেটির সঙ্গে জড়িত থাকার দালিলিক প্রমাণ ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত দিতে পারেনি। ট্রাইবুনালের সুপারিশ মওকুফ কমাতে পারে সিন্ডিকেট। কিন্তু যে অভিযোগের প্রমাণ তারা পায়নি, সেটা কীভাবে বাড়িয়ে শাস্তির মুখোমুখি করে?

তিনি বলেন, ‘ঘটনাটা প্রথম জানতে পারি ২০১৬ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে আমেরিকা যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে বসে। ডিন অফিসের প্রথম ফোনের মাধ্যমে জানানো হয়, আমার আর মারজানের নামে একটি লেখার হার্ডকপি ও সফটকপি নাকি ডিন অফিস হারিয়ে ফেলেছে। একইসঙ্গে একটা লেখার হার্ড ও সফটকপি কীভাবে হারায়? সবচেয়ে বড় কথা, তাদের আমি জানাই আমি কোনো লেখা জমা দেইনি। তারা বারবার বলে মারজান একটি লেখা জমা দিয়েছিল। আমি মারজানকে তাৎক্ষণিকভাবে ফোন দিলে সে জানায়, ২০১৫ সালে তাকে দেওয়া অনেক আইডিয়ার মধ্য থেকে একটি লেখা সে লিখে জমা দেয়, আবার রিভিউয়ার নাকি সেটি গ্রহণও করেছেন। আমি তাকে বকাবকি করি, আমাকে না দেখিয়ে জমা দেওয়ার জন্য। সে বলে রিভিউয়ারও নাকি অ্যাকসেপ্ট করে ফেলেছে। আমি খুব অবাক হই, আমাকে না দেখিয়ে ডিন অফিস কেন লেখাটি প্রসিড করলো। মারজানকে আমি আমেরিকা থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত লেখাটি স্থগিত রাখতে বলি। কিন্তু আমি আমেরিকায় থাকা অবস্থায়ই লেখাটি পাবলিশড হয়ে যায়, আমি জানতে পর্যন্ত পারিনি।’

সামিয়া রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আমি বিভিন্ন সময় নানা ধরনের আইডিয়া দিয়েছি। আর্থিক সাহায্য চাইলে সাহায্য করেছি। চাকরি চাইলে চাকরি দিয়েছি। মারজানকেও আমি বিভিন্ন সময় আইডিয়া দিয়েছিলাম। কিছু কাজও করেছিলাম আগে। তবে, বিতর্কিত প্রবন্ধটি আমাকে না জানিয়ে, না দেখিয়ে আমার নির্দেশনা অমান্য করে মারজান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পাদকীয় বোর্ডে জমা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোনো ধরনের লেখা প্রকাশের আগে সম্পাদকীয় বোর্ড সভা করে সেটি প্রকাশের যোগ্য কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৭ সালের আগের দু-তিন বছর এ ধরনের কোনো বোর্ডই বসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা লেখা যে কেউ চাইলেই ছাপাতে পারেন না। প্রথমে সেটা ডিন অফিসে স্বাক্ষর করে জমা দিতে হয় হার্ড ও সফট কপিসহ, তারপর সেটা যায় এডিটরিয়াল বোর্ডের কাছে, তারপর রিভিউয়ারের কাছে। রিভিউয়ার যদি কোনো মেজর বা মাইনর সংশোধনের কথা বলেন বা বাতিল করেন, সেটা যায় এডিটরিয়াল বোর্ডের কাছে। তারপর অথর সংশোধন করতে দেওয়া হয়। অথর সংশোধনের পর আবার সেটি যায় এডিটরিয়াল বোর্ডের কাছে। যদি তারা ছাপার যোগ্য মনে করেন, তবে প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি যেখানে এডিটোরিয়াল বোর্ডের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কথা বলেছে, সেখানে তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, হাইকোর্টের আইনজীবী তুরিন আফরোজ প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English

Country must be back in business without delay

Amid worker unrest and insecurity in the industrial sector, entrepreneurs and bankers have urged the new administration to focus on rebuilding confidence in the economy.

2h ago