চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল নির্মাণের প্রতিবাদে ম্রোদের সংহতি সমাবেশ

বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণের প্রতিবাদে সংহতি সমাবেশ করেছে চিম্বুক পাহাড় ম্রো ভূমি রক্ষা আন্দোলন। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণের প্রতিবাদে সংহতি সমাবেশ করেছে চিম্বুক পাহাড় ম্রো ভূমি রক্ষা আন্দোলন। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো— ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা, প্রাকৃতিক সম্পদে প্রথাগত অভিগম্যতা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তার দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ম্রো অধ্যুষিত এলাকায় ম্যারিয়ট হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিল; পার্বত্য জেলা পরিষদ নিরাপত্তা বাহিনীকে যে ২০ একর জমি ইজারা দিয়েছে তা অবিলম্বে বাতিল; আন্দোলনরত জনগোষ্ঠীকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, নানা ধরনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশের প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী পর্যটনসহ উন্নয়নের নামে অবাধ ও পূর্বাবহিত সম্মতি ব্যতিরেকে অন্যান্য সব প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করে অনুরূপ প্রক্রিয়ায় দখলকৃত সব ভূমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘এক সময় আমরা নিজেদের জন্য রক্ত দিয়েছি। এখন তারা তাদের নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচতে চাচ্ছে সেটা কেন হতে দেওয়া হবে না? এই উচ্ছেদ স্বাধীনতা, সংবিধান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পরিপন্থী।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের বনে যদি এভাবে রিসোর্ট হতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা প্রাকৃতির বৈচিত্র্য নাকি শুধু রিসোর্ট রেখে যাব সেটা চিন্তা করতে হবে। বান্দরবানে ইকো রিসোর্ট করার প্রয়োজন নেই, বান্দরবান নিজেই ইকো রিসোর্ট।’

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘ম্রোদের সঙ্গে যা করা হচ্ছে এটি অন্যায়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ১৪টি ভাষা ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে খুবই খারাপ হবে।’

বক্তারা বলেন, সম্প্রতি চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে ম্রো অধ্যুষিত অঞ্চলে বিতর্কিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সিকদার গ্রুপের অঙ্গ সংগঠন আর অ্যান্ড আর হোল্ডিংস লিমিটেডের উদ্যোগে ম্যারিয়ট হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস নামে একটি পাঁচ তারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কারণে চিম্বুক ও নাইতং পাহাড়ে শতাব্দীকাল ধরে জুম চাষ করে আসা ম্রো জনগোষ্ঠী তাদের বসতভিটা, শ্মশান, পবিত্র পাথর, পবিত্র বৃক্ষ, পানির উৎস ইত্যাদি থেকে উচ্ছেদ হবে।

তারা বলেন, এখানে ছয়টি গ্রামের বাসিন্দারা সরাসরি এবং ১১৬টি পাড়ার আনুমানিক ১০ হাজার বাসিন্দা বিভিন্নভাবে স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ১৯৯১-৯২ সালে বাংলাদেশ সেনা ও বিমান বাহিনীর গোলন্দাজ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কারণে বান্দরবানের সুয়ালক ও টংকাবতী ইউনিয়নের তিনটি মৌজা থেকে ৩৮১ ম্রো পরিবারকে উচ্ছেদ হয়। আবার ২০০৬-০৭ সালে একই এলাকা থেকে আরও তিন শতাধিক ম্রো পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। নীলগিরি হিল রিসোর্টস স্থাপনকালে দুই শ ম্রো ও মারমা পরিবারকে উচ্ছেদ হতে হয়।

ইতোমধ্যেই আর অ্যান্ড আর হোল্ডিংস লিমিটেড তাদের প্রস্তাবিত স্থাপনার প্রয়োজনে পাহাড় কাটতে শুরু করেছে। ম্রোদের শ্মশান, পবিত্র পাথর, পবিত্র বৃক্ষ ও পানির উৎসে যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করছে। শুধু তাই নয়, গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি ফুল ঝাড় সংগ্রহ করতে গেলে তাদের হয়রানি করা হয়। প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। ম্রোরা যখন তাদের আবাস ও আবাদভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে ন্যায্য অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদমুখর হলো, তখন প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ তোলা হচ্ছে। সাজানো অনুষ্ঠানে হোটেল ও বিনোদন পার্ক স্থাপনে ম্রো জনগোষ্ঠীর সম্মতি আছে এমন প্রচারণাও চালানো হয়েছে। আমরা এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি— বলেন বক্তারা।

তারা আরও বলেন, আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে পাঁচ দফা দাবি মেনে নেওয়া না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), পার্বব্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), আদিবাসী যুব ফোরাম, আদিবাসী সংগ্রাম পরিষদ সমাবেশে সংহতি জানান।

Comments

The Daily Star  | English
Depositors’ money in merged banks will remain completely safe: Bangladesh Bank

Depositors’ money in merged banks will remain completely safe: BB

Accountholders of merged banks will be able to maintain their respective accounts as before

2h ago