উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশি: অর্থমন্ত্রী
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে রপ্তানিতে যে ক্ষতি হবে, লাভ তার চেয়ে বেশি হবে বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
আজ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর এক ভারচুয়াল ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা যা হারাবো পাব তার চেয়ে অনেক বেশি।’
তিনি বলেন, অনেকে বলেছেন ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি কমে যাবে। তারা যেভাবে বলছেন এটা ঠিক নয়।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন এভাবে—‘আমরা ১০০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হারালাম, এর মধ্য ৭৫ মিলিয়ন ডলার আমাদের ইনপুট হিসাবে আমদানি করতে হয়। ফলে কম হলে ওই ২৫ মিলিয়ন ডলার হারাব।’
তিনি বলেন, কিন্তু গ্রাজুয়েশনের ফলে আগের সমস্যা যা ছিল থাকবে না, আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের অর্থনীতিসহ সবাই লাভবান হবে। আগে যারা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করেছে তারা সবাই লাভবান হয়েছে। আমরাও লাভবান হব।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (ইউএন সিডিপি) তাদের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা করে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করেছে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও জলবায়ু ভঙ্গুরতা এই তিনটি মানদণ্ডেই বাংলাদেশ যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী দুই বছরের প্রস্তুতি পর্ব শেষে ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও শুল্কমুক্ত রপ্তানি, সহজ শর্তে বিদেশি ঋণ সুবিধার মতো ক্ষেত্রগুলোতে বাড়তি দুই বছর সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের বাড়তি দুই বছর সময় চাওয়ার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে আমার সর্বশেষ সফরে সাইডলাইনে সিডিপি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। অনেক কষ্ট করে একটা দেশ এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েশনের পর্যায়ে পৌঁছায়। গ্রাজুয়েশন করার পর যদি সুযোগ সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয় এবং যদি কোনো দেশ তা চালিয়ে যেতে না পারে তবে আগের অবস্থায় ফিরে আসার একটা অবস্থা তৈরি হয়। এই জন্যই এলডিসি থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতে বাড়তি দুই বছর সময় চাওয়া হয়েছে।
এই উত্তরণে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে বিদেশিরা বিনিয়োগ নিয়ে আগে ভয়ে থাকতেন। এলডিসি থেকে উত্তরণে তাদের মধ্য থেকে সেই ভয়টা কেটে যাবে। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। ফলে দেশের অর্থনীতি দিন দিন শক্তিশালী হবে।
উদাহরণ দিয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এখন বড় এলসি খুলতে গেলে অন্য বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে খুলতে হয়। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে দেশের ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি এলসি খোলা যাবে। তিনি বলেন, এখন বিদেশীরা দেশে বিনিয়োগ করতে ভয় পায়, কিন্তু গ্রাজুয়েশন হলে এই ভয় থাকবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে জাতিসংঘের সিডিপি জানায় যে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছে। এলডিসি থেকে বের হতে সিডিপির পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি পেতে হয়। সেই অনুযায়ী চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিডিপি তাদের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা করে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করেছে।
Comments