‘৪২ বছরের পথচলা সঙ্গীকে হারালাম’
সংগীতপ্রিয় মানুষের খুব পরিচিত নাম জানে আলম। কালজয়ী গান দিয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি। গতকাল পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন জানে আলম। সদ্যপ্রয়াত শিল্পীকে স্মরণ করেছেন- সংগীত শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফকির আলমগীর, গীতিকার হাসান মতিউর রহমান এবং সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ।
আমি খুব কষ্ট পেয়েছি: ফেরদৌস ওয়াহিদ
জানে আলমের সাংস্কৃতিক মূল্যায়ন যদি করি তাহলে বলব- আমি, আজম খান, পিলু মমতাজ, ফিরোজ সাই, ফকির আলমগীর এবং তিনি- কেউ কারো চেয়ে কম নয়।
গান পাগল মানুষ ছিলেন জানে আলম। গান ভালোবাসতেন। কেবল মাত্র দোয়েল প্রডাক্ট করে অনেক শিল্পীকে প্রমোট করেছিলেন। তার হাত ধরে অনেক শিল্পী উঠে এসেছেন।
১৯৭২ সালে আমি ও ফিরোজ সাই জামালপুর সুগার মিলে একটি গানের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। জানে আলম নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই স্মৃতি কখনোই ভুলতে পারব না।
এছাড়া, স্বাধীনতার পর পর জোনাকি হলে, বলাকা হলে গানের অনুষ্ঠান করি। জানে আলম এগুলোর ব্যবস্থা করেছিলেন। তখন তিনি ছিলেন সৌখিন অর্গানাইজার। টাকার আশায় তিনি এসব করেননি। গান ভালোবেসে করেছেন। তখন আমরা গান করে টাকার আশা করতাম না। যারা যাত্রাপালা করত তারা টাকা পেত।
অথচ, ৫ টাকা টিকিটের বিনিময়ে গানের ব্যবস্থা হয়েছিল। এসব ব্যবস্থার জন্য জানে আলম চির দিন আমার মনে গেঁথে থাকবেন। কাল রাতে যখন তার মৃত্যুর খবর শুনেছি তখন খুব কষ্ট পেয়েছি।
আমরা একসঙ্গে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। আমাদের স্মৃতির শেষ নেই। তার অবদানের কথা ভুলব না। একটি কথা বলি, জানে আলম, আমি এবং সমসাময়িক আমরা কেউই টাকার কথা ভেবে গান করিনি। সেজন্য বলব, সাংস্কৃতিক মূল্যায়ন করলে তার অবদান আমাদের চেয়ে কম না। আমরা কেউ আগে আসছি গানে, কেউ পরে আসছি। কিন্তু, তার অবদান অস্বীকার করা যাবে না।
আমার পারিবারিক সব অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নিতেন: ফকির আলমগীর
আমার ও আমার পরিবারের সঙ্গে জানে আলমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আমার পারিবারিক সব অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করতেন। তিনি সদালাপী ছিলেন। তার সুন্দর ব্যবহারের জন্যই সারাজীবন মনে রাখব। মাইজভান্ডারিসহ লোকগান পরিবেশন করতেন জানে আলম। তার খ্যাতি ছিল অনেক।
আবার অনুষ্ঠান আয়োজনও করতেন একটা সময়ে। দোয়েল নামে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ছিল তার। সেখান থেকে অনেক শিল্পীর অ্যালবাম বের হয়েছে। অডিও প্রকাশনা জগতে দোয়েল দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তিনি। এজন্য অনেকের কাছে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে একজন পপ শিল্পী হিসেবে জানে আলম ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাকে হারিয়ে আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আমরা যারা পপ সংগীতের যাত্রা শুরু করেছিলাম- যার ধারাবাহিকতায় আজকের ব্যান্ড সংগীত। এক্ষেত্রে তিনি পরবর্তী পর্যায়ে সংগীত সংগ্রহ করে ও পরিবেশন করে অনেক অবদান রেখেছিলেন।
একটি গন্ধমের লাগিয়া আল্লাহ বানাইছে দুনিয়া ছিল তার হিট গান। আরও হিট গান আছে। এই গানটি দিয়ে সবার মন জয় করেছিলেন।
৪২ বছরের পথচলার সঙ্গীকে হারালাম: হাসান মতিউর রহমান
জানে আলমের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ৪২ বছরের। সুদীর্ঘ ৪২ বছরের পথচলায় অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে তার সঙ্গে। অসংখ্য কাজ করেছি আমরা। তাকে হারিয়ে খারাপ লাগছে। ৪২ বছরের পথচলার সঙ্গীকে হারালাম।
জানে আলমকে নিয়ে একটি কথাই বলব- তিনি ছিলেন অসম্ভব ভালো মানুষ। অসম্ভব বিনয় ছিল তার। মানুষকে সম্মান করতে জানতেন।
ব্যক্তিগত জীবনে কোনোরকম কুটিলতা ও জটিলতা ছিল না। কাউকে নিয়ে মন্দ বলার অভ্যাস ছিল না। মানুষকে ভালোবাসতেন। মানুষকে বড় করে দেখতেন। মানুষের গুণটাকে প্রকাশ করতেন। মানুষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন ।
৪২ বছরের পথচলার মানুষটির সঙ্গে আর দেখা হবে না। ভাবতেই কষ্ট লাগে।
একটি গন্ধমের লাগিয়া গানটির নতুন কম্পোজিশন আমি করেছিলাম: ফরিদ আহমেদ
জানে আলমের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দোয়েলের হয়ে অনেক কাজ করেছিলাম। ১৯৯২ সাল থেকে শুরু। বেবি নাজনীনের সলো অ্যালবামের গানের কম্পোজিশন আমার করা ছিল। এছাড়া খালিদ হাসান মিলু, এন্ড্রু কিশোরসহ অনেক নামি শিল্পীর গান আমি করেছিলাম তার কোম্পানির হয়ে।
তার বিখ্যাত গান একটি গন্ধমের লাগিয়া রিমেক হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। নতুন আয়োজনে হয়েছিল গানটির। মিউজিক কম্পোজিশন আমার ছিল।
সত্যি কথা বলতে গায়ক হিসেবে নয়, প্রযোজক হিসেবেই তার সঙ্গে আমার কাজ বেশি হয়েছে। তিনি পেশাদারী ছিলেন এবং সার্বিক সহযোগিতা করতেন।
তিনি ফোক গানই বেশি করতেন। ফোক গানের সফল শিল্পী ছিলেন।
Comments