‘বাংলার মেয়ে মমতা’র জবাবে মোদির কণ্ঠে ‘বাংলার ছেলে মিঠুন’

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ‘বাংলার মেয়ে মমতা’ স্লোগানে আলোড়ন তুলছে মমতা ব্যানার্জীর দল তৃণমূল কংগ্রেস। আজ রোববার ব্রিগেড মাঠে এর পাল্টা জবাবে ‘বাংলার ছেলে মিঠুন’ স্লোগানে গর্জে ওঠেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির সভাপতি নরেন্দ্র মোদি।
আজ ব্রিগেড মাঠে বিজেপির সমাবেশেই সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ ও বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী।
বিজেপির সমাবেশে ধুতি-পাঞ্জাবিতে ‘বাঙালিবাবু’ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী। নরেন্দ্র মোদি মঞ্চে পৌঁছানোর আগেই বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নিলেন একসময়কার তৃণমূল নেতা মিঠুন চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নরেন্দ্র মোদি ব্রিগেডের মঞ্চে আসতেই তাকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান মিঠুন চক্রবর্তী।
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মিঠুন তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মিঠুনকে ওই সময় সারদা গোষ্ঠীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও করা হয়। পরে সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি ফাঁস হলে সেখানে মিঠুনেরও নাম জড়ায়। সারদার কাছ থেকে নেওয়া পারিশ্রমিকের অর্থ তদন্তকারী সংস্থা ইডির হাতে তুলে দেন মিঠুন। ইডির কাছ থেকে রেহাই পেয়ে মিঠুন পদত্যাগ করেন, এমনকি রাজনীতিও ছেড়ে দেন তিনি। এ ঘটনার পর তিনি মুম্বাইতে থাকতে শুরু করেছিলেন।
‘আমার নাম মিঠুন চক্রবর্তী, আমি যা বলি তা করে দেখাই’
আজ নরেন্দ্র মোদি সমাবেশে পৌঁছানোর আগেই বিগ্রেডে ভাষণ দেন মিঠুন।
হিন্দি-বাংলা মেশানো বক্তব্যে মিঠুন বলেন, ‘আজকের দিনটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো... আমি যেখানে থাকতাম, সেই জায়গার ঠিকানা লিখতে হতো— জোড়াবাগান থানার পেছনে। কিন্তু সে দিন স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমি জীবনে কিছু করব।’
অন্ধ গলি থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে পৌঁছানোর বিষয়টি সত্যি স্বপ্নের মতো বলে জানান তিনি।
রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মিঠুন বলেন, ‘আর একটা স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম যে, আমি গরিবদের জন্য কিছু করব। আজ মনে হচ্ছে, কোথাও যেন সেই স্বপ্নটা দেখতে পাচ্ছি। এটা হবেই। কারণ স্বপ্ন শুধু দেখার জন্য নয়। তা সফল হওয়ার জন্যই আসে। কেউ যদি হৃদয় দিয়ে দেখে স্বপ্ন সফল হবেই।’
উপস্থিত লাখো জনতার সামনে তিনি হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ‘আমার নাম মিঠুন চক্রবর্তী, আমি যা বলি তা করে দেখাই।’
এদিন নিজেকে গর্বিত বাঙালি বলে উল্লেখ করে মিঠুন বলেন, ‘বাংলায় থাকা সব মানুষই বাঙালি। যারা এখানে বড় হয়েছে তাদের এখানকার সব জিনিসে অধিকার আছে। আর সেই অধিকার কেউ ছিনিয়ে নিতে চাইলে আমাদের মতো কিছু মানুষ রুখে দাঁড়াবে।’
‘আমি জাত গোখরো, এক ছোবলে ছবি’
মিঠুনকে কাছে পেয়ে তার ছবির বিখ্যাত সংলাপ শুনতে চান অনেকেই। তা বুঝতে পেরে তিনি বলেন, “মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে” এই ডায়লগটা চলবে। কিন্তু আমার প্রচার শুরু করার আগে, একটা জিনিস মাথায় রাখবেন। সকলের ভাষণ এক জায়গায় করলে যা দাঁড়ায় তা হলো- “আমি জলঢোড়াও নই, বেলেবোড়াও নই, আমি জাত গোখরো, এক ছোবলে ছবি” এবার এটাই হবে।’
এটিও তার ‘মহাগুরু’ ছবির একটি সংলাপ।
নাটকীয়ভাবে এক দিনের মধ্যেই মুম্বাই ছেড়ে কলকাতা চলে আসা, এক রাতের বৈঠক, লাখো মানুষের সামনে বিজেপিতে যোগদান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উত্তরীয় পরিয়ে অভিবাদন জানানো এবং মোদির ‘বাংলার ছেলে মিঠুন’ স্লোগান- এসব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মিঠুনের নামে বেশ কানাঘুষা চলছে।
Comments