‘উচ্চস্বরে চুপ করো বলে রেসকোর্সে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন বঙ্গবন্ধু’

৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে স্বাভাবিক একটি দিন। সকাল থেকেই বাড়ির আশপাশে কর্মীদের ভিড়। চলছে আলাপ-আলোচনা। কথা বলার বিষয়টি ছিল একই, রেসকোর্সের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মঞ্চে গিয়ে কী বলবেন বঙ্গবন্ধু।

লাখ লাখ মানুষের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হবে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে যা বলবেন তার কোনো পূর্ব প্রস্তুতি নেই দেখে এ নিয়ে আশপাশের নেতা-কর্মীরাও একে অপরের সঙ্গে কথা বলছিলেন।

কিন্তু শেখ মুজিবের চোখে-মুখে কোনো দুশ্চিন্তার ছাপ ছিল না। ছিল না কোনো আলাদা প্রস্তুতি। ছিল না সাদা কাগজে কোনো খসড়া বক্তব্য লিখে তা বার বার পড়ার দৃশ্য। যেভাবে তিনি স্বাভাবিক দিন কাটাতেন সেভাবেই ছিল সবকিছু।

চেয়ারে বসে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সংবাদ আসলো সাত-আট জন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। ভাষণে কোন কথাগুলো বলতে হবে এসবসহ নানা কথা বলছিলেন তারা। বিরক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু উচ্চস্বরে বললেন, ‘শাট আপ’ (চুপ করো)। এরপর বললেন, ‘লিভ মি এলোন’ (একা থাকতে দাও)।

এ বলে তিনি রেসকোর্সে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করলেন।

কথাগুলো বলছিলেন, তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন। তখন প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার সরকারি দায়িত্ব পান মহিউদ্দিন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হলে তখনো প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। বর্তমানে মহিউদ্দিন মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

বঙ্গবন্ধুর না জানা ঘটনার ‘নীরব সাক্ষী’ হিসেবে নিজেকে দাবি করে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কতো মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তবে, প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ৭ মার্চের ভাষণ ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ওই দিন প্রতিদিনের মতো একটি স্বাভাবিক দিন হিসেবে ছিল তার কাছে। নানা রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এসেছিলেন সেদিন। বঙ্গবন্ধু ভাষণে কী বলবেন তা নির্ধারণ করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।’

‘রেসকোর্স ময়দানে যাওয়ার পথেও বঙ্গবন্ধু হাসি-খুশি ছিলেন। জনগণকে সাহস দিতে হবে, আবার শান্তও রাখতে হবে।’

মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভাষণ দেওয়ার সময় সবাইকে মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আমার কানে, তার পিছনে থাকার জন্য বললেন। আমি কোনো “লিখিত কাগজ” দেখিনি। একটানা বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বক্তৃতা শুনতে শুনতে শরীর শিউরে উঠছিল। কীভাবে হাততালি এসে পড়েছিল আমি জানি না। একসময় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।’

‘যখন সেসব স্মৃতি মনে পড়ে তখন বুকের ভেতর চাপা কষ্ট হয়। মরে যেতে ইচ্ছে করে। সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে সেসব স্মৃতি মনে পড়ে যায়, তাই গণমাধ্যম এড়িয়ে চলি’, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

9h ago