ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কলেজশিক্ষক ১৮ দিন ধরে কারাগারে
আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে ‘বিরূপ’ মন্তব্য করার অভিযোগ এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা একটি মামলায় ১৮ দিন ধরে কুষ্টিয়া কারাগারে বন্দি রয়েছেন পাবনার পাকশী রেলওয়ে কলেজের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাজিবুল আলম। ইতোমধ্যে তাকে একদিনের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানায় দায়ের করা মামলার সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে দুর্বৃত্তদের ভেঙে ফেলা বঙ্গবন্ধুর নির্মাণার্ধীন ভাস্কর্য নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী রেলওয়ে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাদ আহমেদ। তার স্ট্যাটাসটি হলো— ‘ঘরে আশ্রিত পোলাও পায়েস অন্নে পালিত কেউটে সাপের বিষদাঁতে চূর্ণ-বিচূর্ণ জনকের সম্মান। হেফাজতের এই বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে হবে’।
ওই স্ট্যাটাসে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের ভাইকে নিয়ে মন্তব্য করেন একই কলেজের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাজিবুল আলম।
রাজিবুলের ওই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা যুবলীগ নেতা মো. মিজানুর রহমান মিজু। তিনি ওই স্ট্যাটাস ও মন্তব্যের স্ক্রিনশটসহ গত ১৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় শিক্ষক রাজিবুলের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(২)/২৯(১)/৩১(২) ধারায় মামলা করেন।
রাজিবুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এনামুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ওই মামলায় শিক্ষক রাজিবুল হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জামিন পান। জামিনের মেয়াদ শেষে তাকে নিম্ন আদালতে হাজির হতে বলা হয়। আদালতের নির্দেশনা মতে রাজিবুল ১৮ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালতের বিচারক সৈয়দ হাবীবুল ইসলাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ৩ মার্চ শিক্ষক রাজিবুলকে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করীমের আদালতে আনা হয়। সে সময় কুষ্টিয়া মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক, ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান তদন্তের যুক্তি তুলে ধরে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত রাজিবুলের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
কুষ্টিয়া কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক শাহিনুর রহমান জানান, একদিনের রিমান্ড শেষে গত ৬ মার্চ রাজিবুলকে পুনরায় জেলে পাঠানো হয়েছে।
রাজিবুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এনামুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা নিয়ম অনুসরণ করে জামিন আবেদন করব। ফেসবুকে স্ট্যাটাসের কমেন্টে যার কথা বলা হয়েছে, মামলাটি তিনি করেননি। এক্ষেত্রে কলেজশিক্ষক রাজিবুল ন্যায়বিচার পাবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’
রাজিবুলের স্ত্রী আসমা খাতুন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর জামিন চাই।’
মূল পোস্টদাতা সাদ আহমেদের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে শিক্ষক রাজিবুলের করা ওই মন্তব্যটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
Comments