অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন কতটা সুরক্ষা নিশ্চিত করে?

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ফেইজ-৩ ট্রায়ালের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন ফলাফল প্রকাশিত হয় গত বছরের ৮ ডিসেম্বর। এই ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই মূলত ভ্যাকসিনটি জনসাধারণে প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে এরপর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তারা চারটি ফেইজ-৩ ট্রায়ালের একটি সম্মিলিত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ল্যানসেট জার্নালে। যেখানে তারা দেখিয়েছেন ভ্যাকসিনটির এক ডোজের কার্যকারিতা ও দুটি ডোজের মধ্যবর্তী সময়ের পার্থক্য যা থেকে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যায়।
oxford-vaccine
ছবি: সংগৃহীত

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ফেইজ-৩ ট্রায়ালের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন ফলাফল প্রকাশিত হয় গত বছরের ৮ ডিসেম্বর। এই ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই মূলত ভ্যাকসিনটি জনসাধারণে প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে এরপর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তারা চারটি ফেইজ-৩ ট্রায়ালের একটি সম্মিলিত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ল্যানসেট জার্নালে। যেখানে তারা দেখিয়েছেন ভ্যাকসিনটির এক ডোজের কার্যকারিতা ও দুটি ডোজের মধ্যবর্তী সময়ের পার্থক্য যা থেকে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যায়।

এই ফলাফলকে বিবেচনায় নিয়েই বিশ্ব স্বস্থ্য সংস্থা অক্সফোর্ড বা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যবর্তী সময়ের পার্থক্য নির্ধারণ করেছে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ।

গত ৬ মার্চ ল্যানসেট জার্নালে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ডোজ ও কার্যকারিতার আপডেট নিয়ে একটি কমেন্টারি প্রকাশিত হয়েছে। সেই কমেন্টারিতে প্রকাশিত তথ্য আমাদের দেশে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের প্রয়োগ ও এর থেকে কতটুকু সুরক্ষা পাওয়া যাবে সে বিষয়ে আরও পরিষ্কার ধারণা দেবে।

কার্যকারিতায় পরিবর্তন এসেছে

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের সাম্প্রতিক ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, কোভিড প্রতিরোধে ভ্যাকসিনটির দুই ডোজের গড় কার্যকারিতা ৬৭ শতাংশ। আগে যা ছিল ৭০ শতাংশ। নতুন অ্যানালাইসিস অনুযায়ী দুটি পূর্ণ ডোজ ভ্যাকসিন দিলে গড় কার্যকারিতা হয় ৬৩ শতাংশ। আগে এই সংখ্যাটি ছিল ৬২ শতাংশ। প্রথম ডোজটি অর্ধেক মাত্রায় ও দ্বিতীয় ডোজটি পূর্ণ মাত্রায় দিলে কার্যকারিতা বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ শতাংশে। আগের ফলাফল অনুযায়ী এই অর্ধেক ডোজ/পূর্ণ ডোজে কার্যকারিতা ছিল ৯০ শতাংশ।

দুই ডোজের সময়ের পার্থক্য কার্যকারিতা

নতুন অ্যানালাইসিস অনুযায়ী দুটি পূর্ণ ডোজ যদি দেওয়া হয় ১২ সপ্তাহ পর তাহলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা হয় ৮১ শতাংশ, আগে যা ছিল ৮৩ শতাংশ। তবে দুই ডোজের মধ্যবর্তী সময়ের পার্থক্য যদি ছয় সপ্তাহের কম হয়, সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে গিয়ে হয় ৫৫ শতাংশ। আগে এটা ছিল ৫৩ শতাংশ।

ভ্যাকসিন দেওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি কতদিন থাকে

সাম্প্রতিক ইমিউনোলজিক্যাল ডেটা অ্যানালাইসিসে দেখা যায় যে প্রথম ডোজের ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দিলে রক্তে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা ছয় সপ্তাহের আগে দ্বিতীয় ডোজ দিলে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তার চেয়ে দুই গুণ বেশি। অ্যান্টিবডির এই তারতম্যের কারণেই ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় বুস্টার ডোজটি নিলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বেশি পাওয়া যায়। এ কারণেই যুক্তরাজ্য ১২ সপ্তাহ পরে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দিচ্ছে ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যাকসিনের দুই ডোজের মধ্যবর্তী সময়ের পার্থক্য নির্ধারণ করেছে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ।

এক ডোজ ভ্যাকসিনে সুরক্ষা কতদিন

নতুন ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায় যে ভ্যাকসিনের একটি ডোজ দেওয়ার ২১ দিন পর থেকে কোভিড প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৭৬ শতাংশ যা ৯০ দিন পর্যন্ত বজায় থাকে। এই ৯০ দিনের ভেতরে শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির পরিমাণও তেমন একটা কমে যায় না।

অবশ্য এক ডোজ ভ্যাকসিন ৯০ দিন পর্যন্ত একজনকে সিম্পটমেটিক কোভিড থেকে রক্ষা করলেও, ঐ ব্যক্তির কিন্তু অ্যাসিম্পটমেটিক করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলেও হতে পারে। আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যায় যে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের একটি ডোজ নাক ও গলায় ভাইরাসের উপস্থিতি কমিয়ে ফেলে প্রায় ৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ ভ্যাকসিনটি ব্যক্তিগত সুরক্ষা দেওয়া ছাড়াও কমিউনিটিতে রোগ বিস্তার রোধেও বেশ কার্যকরী।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আক্রান্তের সম্ভাবনা কতটা

প্রথম ডোজ দেওয়ার ২১ দিন ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ১৪ দিন পর থেকেই মূলত ভ্যাকসিনটি সুরক্ষা দেওয়া শুরু করে। এর আগে কেউ করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসলে তার কোভিড হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। আবার প্রথম ডোজ নেওয়ার ২১ দিন পর থেকে কার্যকারিতা ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ জনকে ভ্যাকসিন দিলে ২৪ জনের কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একইভাবে ১২ সপ্তাহ পর ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ নেওয়ার পরও কার্যকারিতা যেহেতু ৮১ শতাংশ, সেহেতু ১০০ জন ভ্যাকসিন গ্রহীতার ভেতরে ১৯ জনের কোভিড হতে পারে।

বাংলাদেশে যেহেতু দুই ডোজের মধ্যবর্তী সময়ের পার্থক্য আট সপ্তাহ, তাই ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ সম্পন্ন করার পরও শতকরা ২৫ জন কোভিডে আক্রান্ত হতে পারে। তবে আশার কথা হচ্ছে ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের কেউই সিভিয়ার কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের ভর্তি হবে না অথবা কোভিডে কেউ মারাও যাবে না। অন্তত ট্রায়াল রিপোর্ট এ কথাই বলছে। করোনা সংক্রমণ থেকে শতভাগ রক্ষা পেতে হলে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও মাস্ক পরতে হবে।

. খোন্দকার মেহেদী আকরাম: এমবিবিএস, এমএসসি, পিএইচডি, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য

তথ্যসূত্র:

১. https://www.thelancet.com/journals/lancet/article/PIIS0140-6736(21)00528-6/fulltext ২. https://www.thelancet.com/action/showPdf?pii=S0140-6736%2821%2900432-3 ৩. https://www.thelancet.com/action/showPdf?pii=S0140-6736%2820%2932661-1 ৪. https://www.thelancet.com/action/showPdf?pii=S0140-6736%2820%2932466-1

আরও পড়ুন:

ভ্যাকসিন নিলেও করোনায় আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে?

ভারতে করোনার নতুন স্ট্রেইন, বাংলাদেশে সতর্কতা জরুরি

৪ সপ্তাহের পার্থক্যে দ্বিতীয় ডোজে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৫৩ শতাংশ, ১২ সপ্তাহে ৮৩ শতাংশ

ভ্যাকসিন নেওয়া এবং না নেওয়া, মানুষ চিহ্নিত হবে দুই দলে

করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হয় না বাংলাদেশের পিসিআর পরীক্ষায়

মত-দ্বিমত ‘করোনাভাইরাসে দ্বিতীয়বার আক্রান্তের সম্ভাবনা নেই?’

ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধা ও বিতর্ক কেন?

Comments

The Daily Star  | English

Nothing wrong if people think new political party needed: Tarique

Only free, fair polls can ensure direct partnership between people and state, says BNP acting chairman

34m ago