বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকায় ৭ মাস আটকে রাখা হয়েছিল ৬০৪ শ্রমিককে

মহামারিতে দীর্ঘ প্রায় সাত মাস খনি এলাকায় আটকে রাখা ৬০৪ জন শ্রমিক রোববার রাতে জোর করে বেরিয়ে গেছেন। শ্রমিকরা আজ ফুলবাড়ী শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
ফুলবাড়ী শহরে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: স্টার

মহামারিতে দীর্ঘ প্রায় সাত মাস খনি এলাকায় আটকে রাখা ৬০৪ জন শ্রমিক রোববার রাতে জোর করে বেরিয়ে গেছেন। শ্রমিকরা আজ ফুলবাড়ী শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

রোববার রাত সোয়া ৮টার দিকে খনি এলাকা থেকে বের হয়ে আসেন শ্রমিকরা। এতে কয়লা উৎপাদন কমে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম।

জানা গেছে, লকডাউনের কারণে গত বছরের ২৬ মার্চ কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরে চীনা শ্রমিকরা সীমিত আকারে উৎপাদন শুরু করেন। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ পরীক্ষার পর এক হাজার খনি শ্রমিকের মধ্যে ৬০৪ জনকে দিয়ে তিন শিফটে উৎপাদন শুরু করে খনি কর্তৃপক্ষ। গত সাত মাস এই শ্রমিকদের আর খনি এলাকা থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি।

আব্দুর রহিম নামের একজন শ্রমিক ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘৬০৪ খনির শ্রমিক অমানবিক পরিবেশে থাকতেন। বেশ কয়েকজনসহ আমি থাকতাম একটি বাথরুমে।’

গত সাত মাসে অনেক শ্রমিকের আত্মীয়স্বজন মারা গেলেও তাদের বাড়িতে যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগে প্রতিদিন শ্রমিকরা খনির কাজ শেষে বাড়ি ফিরতেন। মহামারির অজুহাতে শ্রমিকদের আটকে রাখা হয়েছিল।’

খনির পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রোববার বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা আলোচনা করেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি, জেলা পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিদ কায়সার রিয়াদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

কিন্তু শ্রমিকদের দাবির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় বিক্ষোভ চালিয়ে যান ভেতরের শ্রমিকরা। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন বাইরের শ্রমিকরা। একপর্যায়ে রোববার রাত সোয়া ৮টায় খনির প্রধান ফটকের পকেট গেট খুলে ৬০৪ জন শ্রমিক বের হয়ে আসেন। শ্রমিকরা বেরিয়ে আসায় কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়।

সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় শ্রমিকরা ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে প্রায় এক হাজার শ্রমিক ফুলবাড়ী শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা নুর ইসলাম বলেন, পার্শ্ববর্তী মধ্যপাড়া পাথর খনিসহ দেশের সব প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সেখানে কাজ চলছে। কিন্তু বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিকদের দীর্ঘদিন ভেতরে বন্দী রাখা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত নিতে খনি কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করায় শ্রমিকরা বের হয়ে এসেছেন।

তাদের দাবি, খনিতে লকডাউন প্রত্যাহার করে শ্রমিকদের সবাইকে ভ্যাকসিন দিয়ে কাজে নিযুক্ত করতে হবে; খনির প্রধান ফটক উন্মুক্ত করতে হবে; সকল শ্রমিকের প্রফিট বোনাসসহ বকেয়া বেতন ভাতা ও উৎসব ভাতা পরিশোধ করতে হবে; শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এই দাবি না মানা পর্যন্ত কাজ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেন শ্রমিকরা।

এ ব্যাপারে কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, এখানে বিধিনিষেধ মেনেই কাজ করতে হবে।

শ্রমিকরা বের হয়ে আসায় উৎপাদন ব্যহত হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।

অন্যদিকে, খনির নিরাপত্তা কর্মকর্তা সৈয়দ ইমাম হাসান বাদী হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে সোমবার মামলা করেছেন। এই মামলায় পুলিশ পাঁচ জন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে। 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago