মাদক পাচার রোধ: এনআইডি সার্ভারের অ্যাক্সেস পাচ্ছে না কুরিয়ারগুলো

প্রতীকী ছবি

কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহারের মাধ্যমে বেশকিছু চক্র বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে মাদক পাচার করছে। তা সত্ত্বেও কুরিয়ার সার্ভিসগুলো যাতে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারে প্রবেশের মাধ্যমে পণ্য প্রেরকের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারে, সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার।

গত ২৮ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) উপদেষ্টা কমিটির ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এ প্রস্তাব রেখেছিল ডিএনসি।

ডিএনসি বলেছে, কুরিয়ার ও কার্গো সার্ভিসগুলোকে এনআইডি সার্ভারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া দরকার।

কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলোর মাধ্যেমে বাইরে পাঠানো প্যাকেটগুলোতে কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য আছে কি না, তা জানতে শনাক্তকরণ ডিভাইসের মাধ্যমে স্ক্যান করার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি।

তবে, বিদেশে মাদক পাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পোস্টাল ও কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে পণ্য প্রেরকের পুরো নাম, ঠিকানা, ছবি, এনআইডির ফটোকপি সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছে কমিটি।

চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি দেওয়া এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ডিএনসি মহাপরিচালক ও বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলো বলছে, তারা পণ্য প্রেরকের তথ্য সংরক্ষণ করছেন। কিন্তু, প্রেরক যে এনআইডির ফটোকপি দিচ্ছে, সেটি আসল নাকি নকল, তা যাচাই করা তাদের পক্ষে কঠিন। তাই কুরিয়ারের মাধ্যমে মাদক পাচার রোধে এনআইডি সার্ভারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাফিজুর রহমান পুলক জানান, তিনি ডিএনসিসহ কিছু সরকারি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং তাদের জানিয়েছেন যে, আন্তর্জাতিকভাবে মাদক পাচার রোধে তাদের এনআইডি সার্ভারে প্রবেশের অনুমতি প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে পণ্য প্রেরকের এনআইডির ফটোকপি, ঠিকানা ও ফোন নম্বর সংরক্ষণ করছি। কিন্তু, কোনো সমস্যা দেখা দেওয়ার পর এনআইডি যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায় সেটি নকল ছিল।’

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কুরিয়ার কোম্পানির মাধ্যমে বিদেশে মাদক পাচার করা হচ্ছে— গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পরই এ প্রস্তাবনাগুলো প্রস্তুত করেছিল ডিএনসি।

তাদের দাবি, চোরাকারবারিরা মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়ার বেশকিছু দেশে মাদক পাচার করছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, পাচারকারীরা প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে এসব মাদক নিয়ে আসে এবং বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে এসব মাদক অন্য দেশে পাচার করে।

ডিএনসি কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের জুন থেকে পরবর্তী পাঁচ মাসে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে পাঠানোর জন্যে উড়োজাহাজে তোলা ১৪টি চালান জব্দ করেছেন। তারা ওইসব চালান থেকে ২১ হাজার ৬১৪ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছেন এবং এ ঘটনায় নয়টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর জন্যে বুক করা প্রায় সাড়ে ১২ কেজি অ্যাম্ফেটামিন ও মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর জন্যে বুক করা ৩৯ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এরপরই কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলোকে এনআইডি সার্ভারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার উদ্যোগ নেয় ডিএনসি।

ডিএনসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তারা দেখেছেন যে, প্রেরকেরা পণ্যের ভুয়া তথ্য দেয় এবং প্রেরক ও প্রাপকের ভুয়া নাম-ঠিকানা দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, এ বিষয়গুলো বিবেচনা করেই গত ২৮ ডিসেম্বরের বৈঠকে কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলোকে এনআইডি সার্ভারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন ডিএনসি মহাপরিচালক।

বৈঠকে মহাপরিচালক সব বিমানবন্দর, স্থল-নৌবন্দরে মাদক শনাক্তকারী ডিভাইস স্থাপন ও ডগ স্কয়াড মোতায়েন করার প্রস্তাবও রেখেছিলেন।

বৈঠকের সূত্র অনুযায়ী, ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় এনআইডি সার্ভারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া ও মাদক শনাক্তকারী ডিভাইস স্থাপনের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে, ডগ স্কয়াড মোতায়েনের প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা অগ্রসর হয়।

ডিএনসি মহাপরিচালক মো. আহসানুল জাব্বার মঙ্গলবার জানান, ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র খাতিরে উপদেষ্টা কমিটি কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে এনআইডি সার্ভারে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে পণ্য প্রেরকের পুরো নাম, ঠিকানা, ছবি ও এনআইডির ফটোকপি সংশ্লিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিকে পাঠাতে হবে।’

এনআইডি সার্ভারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব আবার করবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এ নিয়ে পরে চিন্তা করব।’

পোস্টাল, কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানি ও রপ্তানি কার্গোর ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মাদক শনাক্তকারী ডিভাইস ব্যবহারের প্রস্তাবটি আমরা আবারও করব।’

Comments

The Daily Star  | English

Rampal fouling 2 Sundarbans rivers

The Rampal power plant began operation in late 2022 without an effluent treatment plant and has since been discharging untreated waste into the Pasur and Maidara rivers next to the Sundarbans.

6h ago