দেশে ১৭ বছরে বিলীন হয়েছে ৬৬ বর্গকিলোমিটার বন

দেশে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে রেইন ফরেস্ট। গত ১৭ বছরে প্রায় ৬৬ বর্গকিলোমিটার বন বিলীন হয়েছে। যা আয়তনের দিকে থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের সমান।

দেশে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে রেইন ফরেস্ট। গত ১৭ বছরে প্রায় ৬৬ বর্গকিলোমিটার বন বিলীন হয়েছে। যা আয়তনের দিকে থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের সমান।

গত মঙ্গলবার রেইন ফরেস্ট ফাউন্ডেশন নরওয়ে’র (আরএফএন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, গত ২০০২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় চার কিলোমিটার করে ক্রান্তীয় রেইন ফরেস্ট ধ্বংস হয়েছে।

২০০১ সালে দেশে ক্রান্তীয় রেইন ফরেস্ট ৯৬৬ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ২০১৯ সালে ৯০০ বর্গকিলোমিটার হয়েছে।

শিল্পায়নের কারণে সারা পৃথিবীতে অন্তত ৬৪ শতাংশ ক্রান্তীয় রেইন ফরেস্ট বিলীন হয়েছে। ২০০২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের সমান আয়তনের রেইন ফরেস্ট ধ্বংস হয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত মানব বসতি, কৃষি সম্প্রসারণ ও বন থকে কাঠ সংগ্রহের কারণে বাংলাদেশে ক্রান্তীয় রেইন ফরেস্ট ধ্বংস হয়েছে।

তারা সেই জায়গায় নতুন করে বনায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, তা না হলে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ গতকাল বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দেশে রেইন ফরেস্ট ধ্বংসের মূল কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত বনজসম্পদ আহরণ। বন ধ্বংসের পাশাপাশি বনায়ন প্রক্রিয়ারও চলছে। কিন্তু, বনায়নের সুফল পেতে সময় লাগবে।’

‘রেইন ফরেস্ট বিলুপ্ত হলে বন্যপ্রাণীরাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘আবাসস্থল হারালে বন্যপ্রাণীদের প্রজননও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

‘এটি বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলবে,’ যোগ করেন তিনি।

বন বিভাগের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মো. রাকিবুল হাসান মুকুল ডেইলি স্টারকে জনিয়েছেন, মূলত শাল বন ও পাহাড়ি এলাকায় বন বিলুপ্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘দেশে প্রতি বছর প্রায় ৯ হাজার হেক্টর করে বন বিলুপ্ত হচ্ছে। তবে একই সময়ে আমরা অনেক এলাকায় বনায়ন করছি।... বন সংরক্ষণে জনগণকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে।’

বন উজাড় হওয়া রোধ ও বনায়নের জন্যে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আরএফএন’র প্রতিবেদন মতে, ২০০২ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতে ৩ হাজার ২৪ বর্গকিলোমিটার, শ্রীলঙ্কায় ৯৯ বর্গকিলোমিটার, ভুটানে ৬৭ বর্গকিলোমিটার ও নেপালে ৩৬ বর্গকিলোমিটার রেইন ফরেস্ট বিলীন হয়েছে।

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সুমাত্রা ও মধ্য আফ্রিকার কঙ্গো বেসিন পর্যন্ত কেবলমাত্র ৩৬ শতাংশ রেইন ফরেস্ট অক্ষত রয়েছে।

ক্রমাগতভাবে রেইন ফরেস্ট ও ক্রান্তীয় বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হলে তা জলবায়ু, খাদ্যব্যবস্থা, পানি সরবরাহ ও জীববৈচিত্র্যের স্থিতশীলতা নষ্ট করবে।

প্রতিবেদনটির লেখক ও সংস্থাটির বিশেষ উপদেষ্টা আন্দ্রাস ক্রগ এক বার্তায় বলেছেন, ‘এক সময়ের বিশাল ও দুর্গম বনভূমিকে মানুষ একটু একটু করে নষ্ট করেছে। বনভূমি কার্বন শোষণ করে পৃথিবীকে শীতল রাখে, বৃষ্টি ঘটায় ও আবাসস্থল সৃষ্টি করে— মানুষ এসব বিষয় গুরুত্ব দেয়নি।’

‘এসবের প্রয়োজনে ক্রান্তীয় রেইন ফরেস্ট আমাদের খুবই প্রয়োজন,’ যোগ করেন তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রজাতি বিলুপ্তির এই সময় ভূদৃশ্যের সৌন্দর্য বাড়ানোর তুলনায় রেইন ফরেস্ট রক্ষা বেশি জরুরি।

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘রেইন ফরেস্ট আমাদের খাবার, পানি ও ওষুধ জোগায়। কার্বন গ্রহণ করে এটি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। বন্যা ও প্রবল ঝড় থেকে আমাদের রক্ষা করে।’

সারা বিশ্বে এখন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পঞ্চাশটিরও বেশি দেশ জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ স্থলজ ও জলজ প্রজাতি রক্ষায় সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।

ক্রগ বলেন, সারা বিশ্বে রেইন ফরেস্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিলীন হওয়ার পরও এখনো যতটুকু টিকে রয়েছে তা রক্ষা ও নতুন বন গড়ে তুলতে সহযোগিতা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সুসংবাদ হচ্ছে যে এখনো ইউরোপের সম-আয়তনের মতো রেইন ফরেস্ট অক্ষত রয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Students besiege HC demanding resignation of 'pro-AL fascist judges'

A group of students marched to the High Court premises to besiege the court, demanding the resignation of "pro-Awami League fascist judges"

1h ago