মিঠুনের নকশাল থেকে তৃণমূল হয়ে বিজেপি যাত্রা

বিজেপির সমাবেশে মিঠুন চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত

নকশাল আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন জীবনের শুরুতে। বামফ্রন্টে যোগ না দিলেও ছিলেন তাদের ঘনিষ্ঠজন। পরিচিতিও ছিলেন বামপন্থী হিসেবেই। হঠাৎ করেই ২০১৪ সালে তিনি যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল তাকে রাজ্যসভার সদস্যও করে। সর্বশেষ তিনি যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।

বলিউড, টালিউড ও ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়ক মিঠুন চক্রবর্তীর রাজনৈতিক আদর্শগত স্থিরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও আসন্ন ভারতের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তিনি যে মমতা ব্যানার্জির শক্তিশালী প্রতিপক্ষ এ নিয়ে সন্দেহ নেই।

গত রোববার ব্রিগেড ময়দানে বিজেপির সমাবেশে মিঠুন চক্রবর্তীর অভিষেক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতির মাঠে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। তৃণমূল তো বটেই, বাম-কংগ্রেস জোটও তাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনায় মেতেছে।

‘ওটা আমার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল’

ভারতের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতা মিঠুন তার অভিনয় জীবন শুরুর আগে ১৯৬০ এর দশকে নকশাল আন্দোলনের অংশ ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক ক্রীড়া মন্ত্রী ও সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মিঠুন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে পাইপগানের সময় নকশালদের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে মিঠুনকে তার বাবা কলকাতা ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন।

এরপর পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে অভিনয়ের ডিগ্রি অর্জন শেষে অ্যাকশন ও নাচ দিয়ে তারকা হিসেবে বক্স-অফিসে ঝড় তোলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে বোম্বাই চলচ্চিত্র শিল্পের কর্মীদের সহায়তার জন্য আয়োজিত হোপ কনসার্টের অনুরূপ কলকাতার ‘হোপ ৮৬’ কনসার্ট আয়োজনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মিঠুন।

মূলত সুভাষ চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর থেকেই বাম দল থেকে দূরে সরে যান মিঠুন।

তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সাল থেকে দলটির একনিষ্ঠ সমর্থক হয়ে উঠেন মিঠুন চক্রবর্তী। ‘বোন’ মমতার হাত ধরে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মিঠুন তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভায় দায়িত্ব পালন করেন। সেসময় তিনি সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন।

২০১৬ সালে স্বাস্থ্যজনিত কারণ দেখিয়ে রাজ্যসভার পদ ছাড়েন মিঠুন। এরপর ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকেও দূরে সরে যান।

পিআরএস লেজিসলাটিভ রিসার্চের তথ্য মতে, রাজ্যসভার সদস্য থাকাকালীন তিনি পার্লামেন্টে কখনো কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেননি, কোনো বিতর্কে অংশ নেননি এবং পার্লামেন্টে তার উপস্থিতি ছিল ১০ শতাংশ।

গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটটিনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মিঠুন বলেন, ‘এখন সবাই জানতে চাইবে, আমি কেন বিজেপিতে? আমি অতিবাম রাজনীতি করেছি, কিন্তু থাকিনি। তৃণমূলের সাংসদ ছিলাম। আমি বলবো না অন্য কেউ ভুল ছিল। বরং আমি বলব, ওটা আমার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।’

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে আমার একটা স্বপ্ন ছিল, গরিবের জন্য কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রী আজ বলেছেন, গরিবের জন্যই কাজ করবেন। আমার মনে হয়, এই দলটা ভাবছে গরিবের জন্য। আমার লক্ষ্য সেটাই, ওই মানুষগুলোর জন্য কাজ করা। তার জন্য আমাকে কারো হাত ধরতেই হবে।’

মিঠুন আরও বলেন, ‘আমাকে স্বার্থপর ভাবতেই পারেন অনেকে। কিন্তু আমি গরিব মানুষের স্বার্থটা আগে দেখব। এখানে কৈলাস জি, দিলীপ দা’রা দীর্ঘদিন কাজ করছেন। আর এখন সেই সময় এসেছে, যখন বিজেপি এ রাজ্যে সরকার গড়বেই। আর সোনার বাংলা গড়ার পর আমি সব থেকে গর্বিত মানুষ হবো।’

বিজেপির তুরুপের তাস মিঠুন

মমতা ব্যানার্জিকে হারাতে দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয় একজন বাঙালী মুখ খুঁজছে বিজেপি। ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলিকে বিজেপি দলে টানার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে বেশ আগে থেকেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল।

সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে একই তালিকায় আছেন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আইকন প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের জন্মবার্ষিকীতে প্রসেনজিৎ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। গত মাসে নিজের মুম্বাইয়ের বাসায় আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। সেসময় তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল।

অবশেষে সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় মোদির দল যেন ‘ট্রাম্প কার্ড’ খুঁজে পেল। তাকেই মমতার বিপরীতে মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী করা হতে পারে বলে গুঞ্জন চলছে।

বিজেপির বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, আগামী ১২ মার্চ থেকে দলের পক্ষে প্রচারণায় নামবেন মিঠুন। মূল আসন নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর পক্ষে তিনি প্রচারণা চালাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নন্দীগ্রাম থেকে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে মিঠুনের। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটেও শুভেন্দুর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে তাকে জিতেছিলেন মিঠুন। এবারও নন্দীগ্রামে মমতাকে হারাতে শুভেন্দুর পক্ষে মিঠুন প্রচারণা চালাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ছেলে মহাক্ষয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর বিরোধীদের সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তীর ছেলে মহাক্ষয়।

২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মহাক্ষয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, প্রতারণা ও জোর করে গর্ভপাতের অভিযোগ দায়ের করেছেন এক নারী।

অভিযোগপত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, ২০১৫ সালে ওই নারীকে বাড়িতে ডেকে পানীয়র মধ্যে কিছু মিশিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন মহাক্ষয়। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহাক্ষয় তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন ওই নারী।

মিঠুন চক্রবর্তীর স্ত্রী, মহাক্ষয়ের মা যোগিতা বালির বিরুদ্ধেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ওই নারী।

তৃণমূল ও বামফ্রন্টের নেতারা বলছেন, ছেলেকে ওই ধর্ষণ মামলা থেকে বাঁচাতে ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদ পেতে চাইছেন মিঠুন। এ কারণেই আবারও রং পাল্টেছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

7h ago