অর্থনীতি সচলে ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’
কয়েক মাসের লকডাউন, সীমান্ত চলাচল বন্ধ ও ব্যক্তিগত ঘোরাঘুরির স্বাধীনতা কমে যাওয়ার পর মহামারির এই পর্যায়ে ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ ধারণাটি কয়েকটি দেশে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানায়, বাহরাইন ও চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক ভ্রমণ চালু করতে ও অর্থনীতি বাঁচাতে নিজেদের মতো করে সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া চালু করেছে।
বেশ কয়েকটি দেশে যেসব নাগরিকরা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাদেরকে ডকুমেন্ট বা সার্টিফিকেট দেওয়ার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে।
‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ বলতে এমন একটি সার্টিফিকেট বোঝায়, যেখানে কেউ ভ্যাকসিন নিয়েছেন কি না, সেইসব বিস্তারিত লেখা থাকে। কোনো প্রতিষ্ঠানের সই ও সিল থাকা সার্টিফিকেট অথবা স্মার্টফোনের কিউআর কোডের আকারেও ভ্যাকসিন পাসপোর্ট হতে পারে।
অর্থনীতিকে পুনর্জীবিত করতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও সীমান্ত খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট একটি আকর্ষণীয় ধারণা।
তত্ত্ব অনুযায়ী, ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এমন প্রমাণ দেখানোর ক্ষমতা বৈশ্বিক এই মহামারিতে একটা পরিবর্তন ঘটাতে পারে। পর্যটন নির্ভর দেশগুলো যেসব দর্শনার্থীরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাদের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের ভয় ছাড়াই বাণিজ্য শুরু করতে পারবে।
তবে বাস্তবতা হলো, এই ধরনের দলিলগুলোর ক্ষেত্রে গোপনীয়তা লঙ্ঘন ও বৈষম্য তৈরির সম্ভাবনা আছে। সম্ভবত এটি কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের যে প্রচেষ্টা, সেটিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই নিজেদের মতো করে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বা সার্টিফিকেট ব্যবহার করতে শুরু করেছে।
ইসরায়েল একটি সরকার-অনুমোদিত সার্টিফিকেট তৈরি করেছে, যা ‘গ্রিন পাস’ নামে পরিচিত। যাদের কাছে ‘গ্রিন পাস’ আছে, তারা ভ্যাকসিন পেয়েছেন এবং তাদেরকে ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত বলে বিবেচনা করা হবে।
স্মার্টফোনেও এই ধরনের পাসের ডিজিটাল কপি রাখা যেতে পারে। এটির মেয়াদ সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন দেওয়ার পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত থাকবে। যাদের কাছে গ্রিন পাস আছে তারা জিম, রেস্তোরাঁ বা থিয়েটারের মতো জায়গায় যেতে পারবেন।
ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট থাকলে আইসোলেশন ছাড়াই বিদেশে ভ্রমণের মতো সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়ার সার্টিফিকেট আছে এমন নাগরিকরা ওই তিন দেশের মধ্যে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারবেন।
চীনও নিজেদের মতো করে ভ্যাকসিন পাসপোর্টের নিজস্ব সংস্করণ প্রবর্তন করেছে। ওই সার্টিফিকেটে করোনা পরীক্ষার ফল ও ভ্যাকসিনের বিস্তারিত জানা যাবে।
বাহরাইনও একইরকম একটি প্রক্রিয়া চালু করেছে। অন্যদিকে, ডেনমার্ক ও সুইডেনও তাদের নিজস্ব করোনা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেটের একটি ডিজিটাল সংস্করণ নিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর ফলে গরমের ছুটিতে ইউরোপীয়দের ভ্রমণ সহজ হবে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, অর্থনীতি ফেরাতে ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ একটি ভালো ধারণা হলেও কম ভ্যাকসিন পাচ্ছে যেসব দেশ, তাদের নাগরিকদের সঙ্গে এটি একটি বৈষম্যমূলক আচরণ।
যুক্তরাজ্যের নফিল্ড কাউন্সিল অন বায়োএথিক্স চেয়ারম্যান ডেভ আরচার্ড আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ভ্রমণ থেকে শুরু করে সিনেমা হল, থিয়েটার ও রেস্তোরাঁগুলোতে প্রবেশের মতো বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য এই ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হতে পারে।’
তবে, ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এক ধরনের ‘বৈষম্য’ তৈরি করতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তিনি জানান, এই ধারণাটি বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে এমন একটি সমাজ তৈরি হতে পারে, যেখানে জনসাধারণের কোথাও প্রবেশ করতে কিংবা দেশের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের মতো বিষয়গুলোতেও ভ্যাকসিন পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে। এতে করে সমাজে বৈষম্য বাড়তে পারে।
Comments