ফরিদপুরে আইনজীবীদের ধর্মঘটে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ
ফরিদপুর জেলা সদর থেকে দেওয়ানি ও ফৌজদারি পাঁচটি আদালত ভাঙ্গায় স্থানান্তর প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে আইনজীবীদের ধর্মঘটের প্রথম দিনে ৬১৩টি মামলা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এতে বিচার প্রার্থীদের পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালসহ ১৯টি আদালতে আজ রবিবার বিচারাধীন ৬১৩টি মামলার তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু আইনজীবীদের ধর্মঘট ও আদালত বর্জনের কারণে কোন মামলার কার্যক্রম হয়নি। প্রত্যেকটি মামলায় নতুন তারিখ দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবীদের ধর্মঘটের কারণে কোন বিচারক এজলাসে বসেননি। তারা নিজেদের খাস কামরায় মামলার নতুন তারিখ দিয়েছেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পেশকার আওলাদ হোসেন জানান, ন্যায় বিচারের স্বার্থে এবং বিশেষ বিবেচনায় সবার ক্ষেত্রেই নতুন তারিখ দেওয়া হয়েছে।
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরাম ইউনিয়ন থেকে মামলার হাজিরা দিতে এসেছিলেন আসামি কে এম দিপু খাঁ (৫২)। তিনি বলেন, মুহুরির মাধ্যমে আইনজীবী ও মুহুরিকে টাকা দিয়ে তিনি হাজিরা দিয়েছেন। পরে তাকে জানানো হয়েছে আইনজীবীদের ধর্মঘটের কারণে মামলার কার্যক্রম চলবে না।
ফরিদপুর সদরের আলীয়াবাদ ইউনিয়নের শেফালী বেগম (৩৮) বলেন, আদালতে মামলার দিন ছিল আজ। সকালে এসে আইনজীবিকে ৫০০ টাকা ও মুহুরিকে ১০০ টাকা দিয়েছেন। পরে তাকে জানানো হয় বাড়ি চলে যান আজ আদালত বসবে না।
আসামি ফরিদ মুন্সী (২৫) বলেন, আজ আদালতে হাজিরা আছে বলে সাড়ে আটটার মধ্যে আমাদের আদালতের গারদখানায় এনে রাখা হয়। এখান থেকেই আমাদের আবার নিয়ে যাবে কারাগারে।
আদালত স্থানান্তরের ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. আবু জাফর বলেন, এতে করে আইনজীব এবং বিচারপ্রার্থী সবাই দুর্ভোগে পড়বেন। আর এ কারণেই আইনজীবিরা এর প্রতিবাদ করছে।
তিনি জানান, জেলা জজ জানিয়েছেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরীর ডিও লেটারের কারণে আইন মন্ত্রণালয়ের একজন সচিব এ প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাই করে জানানোর জন্য একটি চিঠি দেন। বিষয়টি এখনও প্রাথমিক অবস্থায় আছে।
সম্প্রতি ফরিদপুর জেলা সদরে অবস্থিত ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন, সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালত ভাঙ্গায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়। ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্যের এক ডিও লেটারের কারণে এ উদ্যোগ নেয় আইন মন্ত্রণালয়।
গত ৪ মার্চ ফরিদপুর জেলা ও দায়রা জজ এ সংক্রান্ত ইতিবাচক মতামত দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। গত ৯ মার্চ বিষয়টি জানাজানি হলে আইনজীবীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
ভাঙ্গায় আগে থেকেই ভাঙ্গা, সদরপুর, নগরকান্দা ও সালথা উপজেলার দেওয়ানী আদালতগুলো চালু ছিল। বর্তমানে ওই উপজেলাগুলোর ফৌজদারি আদালত এবং চরভদ্রাসন উপজেলার দেওয়ানী ও ফৌজদারি দুটি আদালতই ভাঙ্গায় নিয়ে যাওয়ার এ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
Comments