ভাসানচরের পথে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন ব্যবস্থার একাংশ। ছবি: স্টার

এক লাখ রোহিঙ্গার আবাসন ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করতে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দল তিন দিনের সফরে আজ বুধবার ভাসানচরে যাচ্ছে।

আজ সকালে বাংলাদেশ নৌবাহীনির একটি জাহাজে তারা চট্টগ্রাম থেকে ভাসারচরের অভিমুখে রওনা দেন।

ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের সহকারী যোগাযোগ কর্মকর্তা মোস্তফা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সরকারের সহযোগিতায় এই সফরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেটা দেখবেন জাতিসংঘের এজেন্সিগুলোর বিশেষজ্ঞরা।

যোগাযোগ করা হলে তিনি আজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই সফরে ভাসানচরের বর্তমান পরিস্থিতি ও সুযোগ-সুবিধাগুলো দেখা হবে। সেখানে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কী প্রয়োজন সেটা মূল্যায়ন করা হবে এবং এর পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ ও বর্তমানে ভাসানচরে কর্মরত অন্যান্যদের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।’

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে সরকার ইতোমধ্যে কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরিত করেছে। আগামীতে আরও রোহিঙ্গাকে সেখানে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযানের পর পালিয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরে আশ্রয় নেওয়া প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গার জন্য তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

ভূমিধ্বসের ঝুঁকি ছাড়াও মাদকদ্রব্য চোরাচালান, মানব পাচার, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, শরণার্থীদের দলগুলোর মধ্যে বিরোধ এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয় চিন্তা করেই শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে সরকার।

প্রত্যন্ত দ্বীপ ভাসানচরে জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘ। তবে সরকার জানিয়েছে, ইটের তৈরি ১২০টি গুচ্ছ গ্রাম ও ১২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, বন্যা সুরক্ষা বাঁধ, শিক্ষা ব্যবস্থা, কৃষি ও মাছ চাষ, হাসপাতাল ও খেলার মাঠ, সবকিছু মিলিয়ে কক্সবাজার শিবিরের চেয়ে ভাসানচর আবাসন হিসেবে অনেক ভালো জায়গা।

এর প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ জানায়, তারা আবাসন সুবিধা মূল্যায়নের জন্য তাদের একটি দল দ্বীপে পাঠাবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তারা পরিদর্শনের শর্তাদি সরকারকে জানায়।

এরপর পরিদর্শনের বিষয়টি স্থবির হয়ে যায়।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, ভাসানচরে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার জন্য পৃথক ভবনও তৈরি করা হয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রথম দল স্থানান্তর করার পর প্রায় ৪৪টি এনজিও স্বেচ্ছায় সেখানে গিয়ে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া শুরু করে। এক লাখ রোহিঙ্গা স্থানান্তরকরণের পরে কীভাবে তহবিলের ব্যবস্থা করা হবে তা নিয়ে উদ্বেগ ছিল।

সরকার জাতিসংঘকে ভাসানচরে কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানালেও জাতিসংঘ ও দাতা দেশগুলো সেখানকার সুবিধা মূল্যায়নের জন্য একটি স্বাধীন দল পাঠাতে চায়।

সরকার এ জাতীয় দলের প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন করার আবশ্যিকতা দেখেনি, কারণ ভাসানচর আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে, সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য উন্নত ভাবে সুসজ্জিত করা হয়েছে।

যদিও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের কেবলমাত্র মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়, তারপরও তাদের জন্য আবাসন প্রকল্পের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে। রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশ প্রচুর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, পরিবেশগত এমনকি নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর কতটা বোঝা সেটা বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।’

এনজিও কর্মকর্তারা বলেন, ভাসানচর ইস্যুতে যদি জাতিসংঘ ও সরকারের মধ্যে যোগাযোগের কোনো ফাঁক থাকে তবে অবশ্যই তা সমাধান করতে হবে।

আরও পড়ুন: 

রোহিঙ্গাদের অপেক্ষায় ভাসান চর

১ লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচরে নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসছে সরকার?

আবাসন প্রকল্প দেখতে ৪০ রোহিঙ্গা মাঝি ভাসানচরে

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না পাঠাতে আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সুযোগ, সুবিধা ও নিরাপত্তা দেখে রোহিঙ্গারা দলে দলে ভাসানচরে আসবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

তৃতীয় দফায় ভাসানচর পৌঁছেছেন ১৭৭৮ রোহিঙ্গা

Comments

The Daily Star  | English

Political clashes, mob attacks leave 25 dead in July 2025: MSF

The report, based on news from 18 media outlets and verified by rights activists, also noted an alarming rise in mob attacks, recording 51 incidents last month

50m ago