নিহত জেলে মাসুদের বাড়িতে এক মুঠো চালও নেই

টিন-শেড বাড়ির সামনের উঠোনে পাটিতে বসে আছেন কল্পনা আক্তার ঝর্ণা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে বসেই স্বামীর সঙ্গে সংসার জীবনের স্মৃতি প্রতিবেশীদের কাছে আওড়াচ্ছেন। দুইদিন আগে নৌ-পুলিশের গুলিতে তার স্বামী মাসুদ মাল (২৪) নিহত হয়েছেন। তার চার বছরের সংসার জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে।
সন্তান কোলে নিহত জেলে মাসুদের স্ত্রী ঝর্ণা। ছবি: স্টার

টিন-শেড বাড়ির সামনের উঠোনে পাটিতে বসে আছেন কল্পনা আক্তার ঝর্ণা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে বসেই স্বামীর সঙ্গে সংসার জীবনের স্মৃতি প্রতিবেশীদের কাছে আওড়াচ্ছেন। দুইদিন আগে নৌ-পুলিশের গুলিতে তার স্বামী মাসুদ মাল (২৪) নিহত হয়েছেন। তার চার বছরের সংসার জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে।

ঝর্ণার বয়স ১৯ বছর। নিজেদের পছন্দে পারিবারিক ভাবে মাসুদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ঝর্ণার দুই বছরের এক ছেলে আছে। জমানো কোনো টাকা নেই। টাকা ধার নিয়ে ট্রলারে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন মাসুদ। এখন তার বাড়িতে একমুঠো চালও নেই। প্রতিবেশী জেলেদের বাড়ি থেকে আজ ডাল-ভাত এসেছে। অনাগত সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে জোর করে খাচ্ছেন ঝর্ণা। বাকিদের চোখে শুধু কান্না।

খেলনা কিনে বাবা বাসায় ফিরবেন এমনটাই জানে মাসুদের ছেলে আব্দুর রহমান। বাবা আর ফিরবে না এটি বোঝার মতো বয়স হয়নি। প্রত্যেক ঈদে ছেলেকে মার্কেটে নিয়ে গিয়ে নতুন জামাকাপড় কিনে দিতেন। বেড়াতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু এবার বাবা ছাড়াই ঈদ কাটবে। আর গর্ভের সন্তান জন্মের পর জানবে তার বাবা নেই। নিজে পেশায় জেলে হলেও মাসুদ স্বপ্ন দেখতেন সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে সরকারি অফিসার বানানোর।

ঝর্ণা জানান, গত রমজানের ঈদে দামী জামাকাপড় কিনে দিয়েছিলো ছেলেকে। আসন্ন ঈদে বাবা ছাড়া ঈদ কাটবে ছেলের। আর গর্ভে থাকা সন্তান জন্ম নিলে জানবে তার বাবা মৃত। চিকিৎসা খরচ, পুষ্টিকর খাবারের জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। মাসে দুই-তিন বার চিকিৎসকের কাছে যেতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন পড়ে। মাছ বিক্রি থেকে যা আসতো পুরোটাই খরচ হয়ে গেছে। আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি সরকারের কাছে এর বিচার চাই।

নিহত মাসুদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামে। ঘটনার দিন বাবা, তিন ভাই এবং দুই জন প্রতিবেশী মাছ ধরতে ট্রলার নিয়ে বের হয়েছিলেন। মাসুদের বাবা আবুল মাল বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় ইলিশ মাছ শিকার শেষে ট্রলারে করে ফিরছিলাম। চাঁদপুরের মোহনপুরের কাছে পেছন থেকে আমাদের ট্রলারে টর্চের আলো ফেলা হয়। ডাকাত ভেবে ভয়ে আমরা ট্রলার না থামালে এক পর্যায়ে আমাদের লক্ষ্য করে তিনটি গুলি ছোড়া হয়। এরমধ্যে একটি গুলি চালক মাসুদের পায়ে লাগে। ট্রলার থেকে আমিসহ বড় ছেলে ও প্রতিবেশী পানিতে পড়ে যাই। গুলিবিদ্ধ মাসুদের আঘাতের জায়গায় লাথি দেয় তারা। এরপর ট্রলারসহ তিন জনকে আটক করে চলে যায়। পরে জানতে পারি আমার ছেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।

তিনি বলেন, এই সময়ে ইলিশ ধরা অবৈধ এটা কেউ আমাদের জানায়নি।

প্রতিবেশীরা জানান, মাসুদের পরিবারে আমরা প্রতিবেশীরা ভাত ডাল রান্না করে দিয়ে যাচ্ছি। ওরা খুবই গরিব। মাসুদের পরিবারের কাছে প্রশাসনের কেউ সমবেদনাটুকুও জানাতে আসেনি। সহযোগিতার হাতও বাড়ায়নি।

চাঁদপুরের নৌ পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ট্রলারটি থামানোর জন্য বলা হলে তারা পুলিশের ওপর লাঠি, ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। লাঠি দিয়ে আঘাত করে স্পিডবোটকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাদেরকে বাধা দিয়েও থামানো যাচ্ছিল না। আত্মরক্ষায় এক পর্যায়ে শটগান থেকে গুলি ছোড়া হয়।

তিনি জানান, মাসুদের পরিবারকে সহযোগিতার জন্য পুলিশের সদর দপ্তরে জানানো হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা ঘটনায় মামলা হয়েছে। একজন আটক আছে এবং নিহতের ভাই জামিনে আছে।

আরও পড়ুন:

চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে ১ জেলে নিহত

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago