হঠাৎ মধুর ক্যানটিন ছাত্রলীগের দখলে

ঢাবির মধুর ক্যান্টিন সকাল থেকে দখলে রেখে বিভিন্ন স্লোগান দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছবি: স্টার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিন আজ দখল করে রেখেছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা৷ সকাল থেকে দুই শ’র বেশি নেতাকর্মী পুরো ক্যান্টিনে অবস্থান নিয়ে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্লোগান দিয়েছে৷

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় আসার কথা রয়েছে৷ তার আসার বিরোধিতা করে কর্মসূচি ঘোষণা করতে দুপুর ১২টায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছিল বামপন্থী সংগঠনগুলো৷ কিন্তু সকাল থেকে পুরো ক্যানটিন দখলে নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা৷

সাধারণত মধুর ক্যানটিনের ভেতরে পূর্ব পাশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বসেন৷ উত্তর পাশে বসেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা৷ পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে বসেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা৷ আজকের সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে পুরো মধুর ক্যানটিন দখলে রাখেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা৷

দুপুর ১২টায় মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে জায়গা না পেয়ে ক্যানটিনের পশ্চিম পাশের গেটে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রিসহ নয়টি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আধা ঘণ্টার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়৷ পরে বেলা সাড়ে বারটার দিকে পশ্চিম পাশের গেটের সামনে দাঁড়িয়েই সংবাদ সম্মেলন করেন তারা৷ সংবাদ সম্মেলনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন তারা।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘দুপুর ১২টা থেকে মধুর ক্যানটিনে আমাদের সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুরো জায়গাটি দখল করে রেখেছে৷ ছাত্রলীগ শুধু মধুর ক্যান্টিন দখলে রাখছে না, পুরো ক্যাম্পাস এবং হলগুলোতেও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে৷ আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই৷’

জানতে চাইলে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাম ছাত্র সংগঠনগুলো এমন কিছু হয়ে যায়নি যে, তাদেরকে লক্ষ্য করে ছাত্রলীগের আলাদা কর্মসূচি দেওয়ার প্রয়োজন আছে৷ ছাত্রলীগ প্রতিদিনের মতো মধুর ক্যানটিনে স্বাভাবিক কার্যক্রম পালন করেছে৷ বাম ছাত্র সংগঠনগুলো দিন দিন জঙ্গি সংগঠনের পরিণত হচ্ছে৷ তাদের প্রতিহত করতে ছাত্রলীগের প্রয়োজন নেই, সাধারণ শিক্ষার্থীরাই তাদের জঙ্গি কার্যক্রম প্রতিহত করবে৷’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ৷ তিনি মোদির আসার বিরোধিতা করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন৷ ১৯ মার্চ বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ ও মিছিল এবং ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়৷

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একটি ভয়াবহ দুঃসময়ের মধ্যে আমরা আছি। শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনা করার কারণে লেখক মোশতাককে কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। কার্টুন আঁকার কারণে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে কার্টুনিস্ট কিশোরকে। শ্রমিক নেতা রুহুল আমিনসহ এখনো অনেকে কারাবন্দী। মানুষের সমস্ত ধরনের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

তারা আরও বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত শাসকগোষ্ঠী জনগণকে বিচ্ছিন্ন রেখে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের ডাক দিচ্ছে। এই অবস্থায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদির আসার প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিবেকবান মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলো। প্রতিবাদ ঠেকাতে ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার-১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে কর্মসূচি না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যারা কর্মসূচি পালন করবে তাদের রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে দমন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আমরা এর নিন্দা জানাই।

তারা আরও বলেন, ‘ভারতের দাঙ্গাবাজ, সাম্প্রদায়িক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্ত্রীতে আমন্ত্রণ জানানো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। মোদির হাতে গুজরাটের হাজার হাজার মানুষের রক্তের লেগে আছে। গতবছর দিল্লি কিলিংয়ের ঘটনা মোদি সরকারের নির্দেশে ঘটেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক আল কাদেরী জয়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর প্রমুখ৷ সংবাদ সম্মেলন শেষে মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা।

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt backing the wrongdoers?

BNP acting Chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of a scrap trader in front of Mitford hospital due to what he said its silent support for such incidents of mob violence.

6h ago