আলাস্কার বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনা প্রতিনিধিদের তুমুল বাকযুদ্ধ
আলাস্কায় উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে বাইডেন প্রশাসন ও চীনা কর্মকর্তারা বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।
আজ শুক্রবার বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে চীন আক্রমণের জন্য উসকানি দিচ্ছে বলে আলাস্কায় ওই বৈঠকে চীনা কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে, মার্কিন কর্মকর্তারা জানান- চীনের এই আলোচনায় আসার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ‘অতিরঞ্জিত কথাবার্তা বলে নিজের সুবিধা হাসিল করা।’
গত কয়েক বছর ধরে এই দুই পরাশক্তির কূটনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে বেইজিংয়ের বিরূপ আচরণের মতো বিতর্কিত বিষয়গুলো উত্থাপন করেন।
আলাস্কার বৃহত্তম শহর অ্যাংকরেজে উত্তেজনাপূর্ণ এ বৈঠকে অংশ নেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান।
অন্যদিকে চীনের পক্ষে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ ইয়াং জিয়াচি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ে আলোচনায় অংশ নেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ব্লিংকেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এ বৈঠকে জিনজিয়াং, হংকং ও তাইওয়ানের ঘটনা, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চালানো সাইবার হামলা এবং মিত্রদের ওপর অর্থনৈতিক জবরদস্তিসহ চীনের বিভিন্ন উদ্বেগজনক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী।’
‘তাদের এসব কর্মকাণ্ডের প্রত্যেকটাই বিশ্বকে স্থিতিশীল রাখার জন্যে প্রয়োজনীয় আইন শৃঙ্খলার জন্য হুমকিস্বরূপ,’ যোগ করেন তিনি।
এর জবাবে ইয়াং অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র অন্যায়ভাবে সামরিক শক্তি ও আর্থিক আধিপত্যকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য দেশ দমন করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার নামে এটি আসলে সাধারণ বাণিজ্যিক বিনিময়কে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে এবং একইসঙ্গে এর মাধ্যমে অন্যান্য দেশকে তারা উসকে দিচ্ছে চীনকে আক্রমণ করতে।’
ইয়াং আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবস্থা খুবই খারাপ এবং সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে।
এর জবাবে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভান বলেন, ‘ওয়াশিংটন চীনের সঙ্গে বিরোধে যেতে চায় না। কিন্তু, আমরা সবসময় আমাদের দেশের জনগণ ও মিত্রদের স্বার্থ রক্ষায় নীতিমালাগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লড়তে থাকব।’
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনাটি এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে।
বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘চীনের প্রতিনিধিদলের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তাদের এখানে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করা। তারা প্রকৃত আলোচনার বিষয়বস্তুকে অবজ্ঞা করে অতিরিক্ত নাটুকেপনা এবং লোকদেখানো কথাবার্তায় বেশি আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, পূর্বপরিকল্পিত আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী। এ ধরণের অতিরঞ্জিত কূটনৈতিক পরিবেশনাগুলো তাদের নিজ দেশের দর্শকদের জন্যই বেশি উপযুক্ত।’
পরবর্তীতে নিজ দেশের গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে চীনের কর্মকর্তারা দাবি করেন, চীন নয়, যুক্তরাষ্ট্রই উদ্বোধনী বক্তব্যের প্রটোকল ভঙ্গ করেছে। তাদের অভিযোগ, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র নীতির ওপর ভিত্তিহীন আক্রমণ চালিয়েছে।’
এর আগে, কয়েকটি বিবৃতিতে বাইডেন প্রশাসন নির্দিষ্ট কিছু ইস্যুতে চীনের কড়া সমালোচনা করেছেন। এও জানিয়েছেন যে তারা বেইজিং এর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।
চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ককে তারা গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের একটি ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
অন্যদিকে, চীনও তাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়গুলোতে ছাড় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এখন দেখার বিষয় যে, এই দুই পরাশক্তি একত্রে কাজ করার জন্য কিছু বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একমত হতে পারে কি না।
Comments