উন্মোচনের অপেক্ষায় কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর সেই ভাস্কর্যটি

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ছবি: স্টার

কুষ্টিয়া শহরের ভাঙচুর করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন সেটি উন্মোচনের অপেক্ষায় রয়েছে।

জানা গেছে, ভাস্কর্যটি উদ্বোধনের জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। তিনি সময় দিলে যেকোনো দিনই তা উদ্বোধন করা হবে।

বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এটি বঙ্গবন্ধুর অন্য সব ভাস্কর্য থেকে আলাদা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন ও স্বাধীনতা-পরবর্তী তিনটি ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে।

মাহবুব জামাল শামীম জানান, একটি মূল স্তম্ভ তৈরি করে সেখানে বসানো হয়েছে তিনটি ভাস্কর্য। যেখানে প্রথমটিতে বঙ্গবন্ধুকে ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা পাঠরত অবস্থায় উপস্থাপন করা হয়েছে। একইসঙ্গে এর পাদদেশজুড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছয় দফা আন্দোলনে ব্যবহৃত নানা প্ল্যাকার্ড সম্বলিত দৃশ্য। অন্য দুটির একটিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ। এটিই স্তম্ভের মূল ভাস্কর্য। এর পাদদেশে শোভা পাচ্ছে ৭ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। অন্যটিতে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন গ্রহণের ভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। একইসঙ্গে রয়েছে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বাংলা ভাষণের সেই ঐতিহাসিক পোট্রেট। মূল স্তম্ভের চারদিকে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের চারটি খোদাই করা প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে। তার নিচে খোদাই করে লেখা, জাতীয় চার নেতা ‘সেই রক্তের ঋণ কোনদিন ভুলবো না, সেই অবদান’।

পুরো ভাস্কর্যটি লোহার খুঁটি ও চেইন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ভাস্কর্যটিতে এখনো পুলিশি পাহাড়া রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে শহরে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্য স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় কুষ্টিয়া পৌরসভা। ভাস্কর্যটির পরিকল্পনা করেন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার আলী। জায়গা নির্ধারিত হয় পৌরসভার সামনেই শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়। দরপত্রের মাধ্যমে ৩৫ লাখ টাকার এই কাজটি পান ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম। গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে তাকে সাইট বুঝিয়ে দেওয়া হয়। লক্ষ্য ছিল ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে এটি উদ্বোধন করা।

গত ১৩ নভেম্বর বসানো হয় প্রথম ভাস্কর্যটি। এরই মধ্যে ৫ ডিসেম্বর রাতে ওই ভাস্কর্যটিতে ভাঙচুর করা হয়। কুষ্টিয়া শহরেরই একটি কওমি মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থী হাতুড়ি দিয়ে ভাস্কর্যটির ডান হাতের তর্জনী ভাঙে। ক্ষতি সাধন করে মুখাবয়বেও। এ ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়। গ্রেপ্তার হয় ওই দুই শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসাটির দুই শিক্ষক।

এ ঘটনার জেরে কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গত ১৫ মার্চ কাজটি শেষ করে বুঝিয়ে দেন ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম।

কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন। যেকোনো সময় এটি উন্মোচন করা হবে।

কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ ভাস্কর্য নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রই বাঁধা হতে পারেনি। ধন্যবাদ জানাই স্বাধীনতার স্বপক্ষের সেসব দেশপ্রেমিক মানুষদের যারা বঙ্গবন্ধুর এ ভাস্কর্য নির্মাণে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।’

‘আমার ইচ্ছে অনন্য এই ভাস্কর্যটি প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে উন্মোচন করা হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। তিনি যদি সময় দেন, তাহলে ভার্চ্যুয়ালি এটি উন্মোচন করা হবে’, বলেন তিনি।

মামলা

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলার মোট চার আসামি বর্তমানে জেলে রয়েছেন। চার জনই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। দুই শিক্ষার্থী স্বীকার করেছেন যে, তারা ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত। অন্যদিকে দুই শিক্ষক ঘটনা জানার পর ওই দুই ছাত্রকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন।

মামলা-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দুই মাদ্রাসাশিক্ষক আদালতে স্বীকার করেছেন যে, তারা দুই শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন। গত ৫ ডিসেম্বর ঘটনার পরদিন সকালে খাবার খাওয়ার সময় ওই দুই ছাত্র তাদের (শিক্ষকদের) জানান, তারা রাতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে এসেছেন। এমন কথা শোনার পর ওই দুই শিক্ষক তাদের মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যেতে বলেন।

আসামিরা কুষ্টিয়া শহরের জগতি পশ্চিমপাড়া এলাকার ইবনি মাসউদ (রা.) মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্র। তাদের মধ্যে দুই শিক্ষক হলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামের মো. আল আমিন ও পাবনার আমিনপুর থানার দিয়াড় বামুন্দি গ্রামের মো. ইউসুফ আলম। আর দুই শিক্ষার্থী হলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিংপুর গ্রামের মো. আবু বক্কর ওরফে মিঠুন (১৯) ও জেলার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর (গোলাবাড়িয়া) এলাকার সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০)।

উল্লেখ্য, এ ঘটনায় কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দীন বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।

আরও পড়ুন:

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর: ৪ আসামি রিমান্ডে

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর : ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলেন ২ মাদ্রাসা শিক্ষক

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর: রিমান্ড শেষে ২ মাদ্রাসাছাত্র আদালতে

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago