২৮ বছরেও হয়নি আর্সেনিক নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা

আর্সেনিকের প্রভাবে হওয়া ত্বকের ক্যানসার। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

দেশে প্রথম আর্সেনিক শনাক্তের পর কেটে গেছে ২৮ বছর। তবে, আজ পর্যন্তও পানিতে এই রাসায়নিক পদার্থের মাত্রা বা তীব্রতা কমেনি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এর চেয়েও খারাপ খবর, এই ২৮ বছরেও আর্সেনিকের তীব্রতা নির্ধারণে কোনো বিস্তৃত গবেষণা হয়নি।

ফলে, দেশে আর্সেনিক রোগীর সংখ্যা সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনো আপডেট তথ্য নেই বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

প্রতি বছর এই নীরব বিষের কারণে কতজন আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত হন বা মারা যান সে সম্পর্কেও সরকারের কাছে কোনো সঠিক তথ্য নেই।

২০১২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পানিতে আর্সেনিক দূষণ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ গণ বিষক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম।

বাংলাদেশে প্রতিবছর আর্সেনিক বিষক্রিয়াজনিত কারণে অন্তত ৪৩ হাজার মানুষ মারা যায় বলে উল্লেখ্য করা হয় ওই বুলেটিনে।

৯০ দশকের শুরুর দিকে নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০৩ সালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চল ছাড়া সারা দেশের নলকূপে আর্সেনিক পরীক্ষা করে।

বাংলাদেশ আর্সেনিক মিটিগেশন ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টের (বিএএমডাব্লিউএসপি) আওতাধীন এই বিভাগ ২৭১ উপজেলায় ৫৭ হাজার ৪৮২টি গ্রামে এই পরীক্ষা করে।

৪৯ লাখ ৫০ হাজার নলকূপের পানি পরীক্ষা করে এর মধ্যে ২৯ শতাংশে আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

আর্সেনিকের এত বেশি উপস্থিতি পাওয়ার পরেও আর কখনো বড় পরিসরে পরীক্ষা করা হয়নি।

তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৯-২০২০ এ বলা হয়েছে, ৬৪ জেলার মধ্যে ৬১ জেলার নলকূপে আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

অধিদপ্তরের গ্রাউন্ড ওয়াটার সার্কেলের সুপারিন্টেনডেন্ট প্রকৌশলী সাইফুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দেশে আর্সেনিকের পরিমাণ ও তীব্রতার পরিবর্তন হয়নি। তবে মানুষ শিখে গেছে কীভাবে দূষিত পানি এড়িয়ে যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন মানুষ সচেতন এবং বিকল্প পানির উত্স ব্যবহার করছে।’

তিনি জানান, আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষার জন্য অধিদপ্তর ২০১২ সালে সারাদেশে সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নের মধ্যে তিন হাজার ২০০ ইউনিয়নে নলকূপ পরীক্ষার প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

এ বছরের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে যোগ করেন তিনি।

এই প্রকল্পের আওতায় আর্সেনিক দূষিত নলকূপগুলো লাল রঙে এবং আর্সেনিকমুক্ত নলকূপগুলোকে সবুজ রঙে চিহ্নিত করা হবে। যে নলকূপগুলোতে দূষিত পানি উঠছে সেগুলো এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিস্থাপন করা হবে বলে জানান সাইফুর রহমান।

আর্সেনিকের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে মানবদেহে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। এর প্রভাবে ত্বকের ক্যানসার হয়। বিশেষত হাত ও পায়ের তালু এবং তলপেটে। এছাড়াও পেটে ব্যথা, ফুসফুস ও মূত্রাশয়ের ক্যানসার হওয়ারও কারণ হয়ে দাঁড়ায় আর্সেনিক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও আর্সেনিকের বিপদ সম্পর্কে মানুষ অনেক সচেতন, তারপরও সমস্যাটি বেশ বড় আকারে বিদ্যমান।

১৯৯৩ সাল থেকে আর্সেনিক নিয়ে কাজ করছেন অধ্যাপক কাজী কামারুজ্জামান। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত কার্যকর জাতীয় আর্সেনিক প্রশমন নীতি রয়েছে। তবে এটি কেবলমাত্র আংশিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে। ‘জীবন বাঁচাতে এই নীতি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর্সেনিক প্রশমন বাংলাদেশের অন্যতম একটি সাফল্য। সমস্যাটি এখনও রয়ে গেছে। তবে ১৯৯৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর্সেনিকজনিত ক্যান্সারে বাংলাদেশে ২ লাখ মানুষের মৃত্যুর যে ভবিষ্যতবাণী করেছিল সে পরিমাণে নেই।’

একুশে পদক বিজয়ী কামারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের এখনও অনেক পথ যেতে হবে। বিশেষত এমন কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে হবে যেখানে আর্সেনিক এখনও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে আছে।’

পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, সমস্যাটি পরিবেশগত এবং এটি এখনও পরিবেশে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এটা সত্য যে আর্সেনিক সম্পর্কে মানুষ সচেতন। সরকারের উচিত এই বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব সহকারে নেওয়া। কারণ এটি একটি নীরব ঘাতক।’

গবেষণার অভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আর্সেনিক আমাদের সমস্যা। তারপরও আমরা গবেষণার জন্য দাতাদের তহবিলের ওপর নির্ভরশীল। এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়।’

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka College, City College students clash at Science Lab; traffic halted

A clash broke out between the students of Dhaka College and City College in the capital's Science Laboratory area today

24m ago