শীর্ষ খবর

কোভিড-১৯: যা জানি, যা জানি না

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ সম্পর্কে আমরা কী জানি এবং কী জানি না?
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ সম্পর্কে আমরা কী জানি এবং কী জানি না?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এক বছর ধরে এই মহামারি বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি ফিউচার। চলতি মাসে প্রকাশিত বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বিশ্লেষণের ফলাফল।

কোভিড-১৯ নিয়ে যেকোনো গবেষণার প্রতিটি ধাপ সাধারণ জনগণ, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বৈজ্ঞানিকরা প্রত্যক্ষ করেছেন একেবারে সামনে থেকে। সাধারণত পূর্ণাঙ্গ গবেষণার ফলাফল দেখে অভ্যস্ত সাধারণ মানুষ জানা-অজানা, কখনো এলোমেলো, আবার কখনো পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দেখে বিভ্রান্ত হয়েছে।

তবে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এভাবেই হয়। কয়েক দফা ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়ে করোনাভাইরাসের সম্পর্কে যতটুকু তথ্য জানা গেছে, ভবিষ্যতে হয়তো আরও পরিবর্তন আসবে। কারণ করোনাভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেমে নেই।

ঘরের বাতাস

ঘরের ভেতরে থাকা বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের সংস্পর্শ থেকে নিজেদের বাঁচানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘর-বাড়ি পরিষ্কার রাখা, মাস্ক পড়া ও নিয়মিত হাত ধোয়ার পাশাপাশি ঘরের ভেতরে বিশুদ্ধ বাতাস নিশ্চিত করাও জরুরি।জানালা যতটা সম্ভব খোলা রাখার চেষ্টা করা উচিত। 

ছবি: এনডিটিভি

মাস্ক

শুরুতে যথাযথ ডেটার অভাবে যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার মাস্ক ব্যবহারের ওপর খুব বেশি জোর দেয়নি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ব্যাপারটি নিয়ে রীতিমতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। কিন্তু, দেখা গেছে যেসব দেশ মাস্ক ব্যবহার করেছে তারা করোনার প্রকোপ থেকে অনেকটাই রক্ষা পেয়েছে।

হাত ধোয়া

লকডাউন ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো এই জরুরি অবস্থায় হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা একবিন্দুও কমেনি। প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের হাতে এই ভাইরাস পাওয়া যায় এবং হাতের মাধ্যমে তা অন্যের মাঝে ছড়াতে পারে।

হাত দিয়ে নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করার অভ্যাসটিও আমাদের বদলাতে হবে। কেননা হাতে এই ভাইরাসের জীবাণু থাকলে নাক, মুখ, চোখ হয়ে তা চলে যেতে পারে শরীরের ভেতরে।

ব্যক্তিভেদে ভাইরাসের প্রভাব

গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব নারীদের চেয়ে পুরুষদের ওপর বেশি পড়ে। এছাড়াও দেখা গেছে, কিছু জনগোষ্ঠীর ওপর এই ভাইরাসের প্রভাব অনেক বেশি পড়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পুরুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পশ্চিম ইউরোপে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মধ্যে ৬৯ শতাংশই পুরুষ। তবে এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি।

মহামারির মধ্যে নারীদের বাইরে কম যাওয়ার প্রবণতা, নারীদের তুলনামূলক কম ধূমপানে আসক্তি থেকে শুরু করে আরও বেশি কিছু বিষয় নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

কিছু মানুষের শরীরে বিশেষ এক ধরণের শ্বেত রক্ত কণিকা বা টি-সেল পাওয়া গেছে, যা করোনা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। 

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি

করোনাভাইরাস ‘শ্বাসযন্ত্রে’সংক্রমণ করলেও এর কারণে ক্ষতি শুধু ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে এটি রক্তবাহী নালী, হৃদপিণ্ড, মগজ, কিডনি, লিভারসহ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে সক্ষম।

করোনার কারণে সৃষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গের এই সমস্যাগুলো চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে কি না সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। 

ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়ায়

কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের শরীরে কোভিড-১৯ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি তারাই এ ব্যাপারে সবচেয়ে কম চিন্তিত। এ ধরণের মানুষ শারীরিক দূরত্ব রক্ষা, হাত ধোয়া, মাস্ক পড়ার মত ব্যাপারগুলো নিয়ে খুবই উদাসীন।

ভ্যাকসিন

বিজ্ঞানীরা প্রচণ্ড চাপের মধ্যেই খুব দ্রুত ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করেছেন। এই দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তারা নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।অধিকাংশ

ভ্যাকসিনের একাধিক ডোজ না নিলে তা কার্যকর না হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেলেও এটা নিশ্চিত যে একটি ডোজ যথেষ্ট নয়। তবে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পড়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই জরুরি। 

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য দাঁড়ানো লাইন। ৭ ডিসেম্বর ২০২০। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

হার্ড ইমিউনিটি

একটি জনগোষ্ঠীর সবার মধ্যেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধের সক্ষমতা অর্জনই হার্ড ইমিউনিটি। মহামারির শুরুর দিকে ‘এ ভাইরাসটিকে অবাধে ছড়াতে দিলেই মানুষের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে’ বলে যে ধারণা ছড়িয়েছে তা একেবারেই ঠিক না। ভ্যাকসিনের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হলে ক্ষতি অনেক কম হবে এবং উচ্চ রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা পাওয়া সম্ভব।

মৃত্যুর হারে ভিন্নতা

দেশ ভেদে মৃত্যুর হারে ভিন্নতার অনেক কারণ রয়েছে। কোন পদ্ধতিতে মৃত্যুর হার গণনা হচ্ছে সেটা বড় ব্যাপার। এটি শুধু কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেই নয়, বরং গণনা পদ্ধতির ভিন্নতা সকল মহামারির ক্ষেত্রেই দেখা যায়।

দুই ধরণের মৃত্যুর হার রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে ‘করোনা টেস্টে পজিটিভ হওয়া’ মানুষের মৃত্যু। এটাকে বলা হচ্ছে ‘কেইস ফ্যাটালিটি রেট’। অপরটি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের হার। এক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষা হয়েছে কি না তা বিবেচ্য নয়। ‘ইনফেকশন ফ্যাটালিটি রেট’নামের এই গণনা পদ্ধতিটি একটি অনুমান নির্ভর সংখ্যা। কারণ এমন অনেক মৃত্যু কোনো সমীক্ষায় আসবে না।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এভিডেন্স বেইসড মেডিসিনের পরিচালক ও মহামারি বিশেষজ্ঞ কার্ল হেনেগ্যান বলেন, ‘কেইস ফ্যাটালিটি রেট চিকিৎসকদের নিশ্চিতভাবে জানায় যে কতজন রোগী করোনায় মারা গেছে। আর ইনফেকশন ফ্যাটালিটি রেট জানায় সম্ভব্য কতজন করোনায় মারা গেছেন।’

মহামারি মোকাবিলার ইতিহাস

২০০৩ সালের সার্স মহামারির সঙ্গে কানাডা ও তাইওয়ান যে যুদ্ধ করেছিল সেই শিক্ষা করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সংক্রমিত ও তাদের চারপাশে যারা ছিলেন তাদেরকে খুঁজে বের করে পরীক্ষা করা, অসুস্থদের আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া।

দূরত্ব বজায় রাখা

১৬০০ শতাব্দীতে সার্ডিনিয়ায় এক চিকিৎসক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিলেন। সে সময় প্লেগের হাত থেকে বাঁচতে যে নির্দেশিকা দিয়েছিলেন তা হুবহু করোনাভাইরাসের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি এটিও বলেছিলেন যে প্রতিটি বাড়ি থেকে একজনের বেশি মানুষ বাজার করার জন্য বের হতে পারবেন না। 

জেদ্দায় কিং আব্দুলআজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের প্রতিষেধক দিচ্ছেন সৌদি চিকিৎসক দলের সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

যা জানি না

যারা দীর্ঘদিন করোনায় ভুগবেন তাদের মধ্যে পরবর্তীতে কী কী প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে?

এর প্রভাব কী ভবিষ্যৎ বংশধরদের ওপর পড়বে?

এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব কী হবে?

পরবর্তী মহামারি

বিবিসি ছয়টি রোগকে পরবর্তী সম্ভাব্য মহামারি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো- নিপা ভাইরাস, মশাবাহিত নতুন কোনো রোগ, উটের করোনাভাইরাস, সোয়াইন ফ্লু, বানরদের মাঝে ছড়িয়ে পড়া ইয়েলো ফিভার এবং অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে যাওয়া বুরুলি আলসার।

মহামারি প্রতিরোধে বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে এগুলো সম্পর্কে গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন।

জলবায়ুর ওপর করোনার প্রভাব

মহামারির শুরুর দিকে বিভিন্ন গ্রিনহাউজ গ্যাস ও অন্যান্য বায়ু দূষণকারী পদার্থের নির্গমন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলেও তা পরবর্তীতে আবারও বেড়েছে। সব মিলিয়ে ২০২০ সালে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হওয়ার পরিমাণ প্রায় ছয় শতাংশ কমে যায়। পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী অনেক দেশের অনেক শহরেই এই দূষণের মাত্রা কমে এসেছে করোনার কল্যাণে।

পরিবেশবাদীরা ধারণা করছেন, বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচলের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ ও যানবাহনের সীমিত চলাচলের কারণে জলবায়ুর ওপর করোনাভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তারা আরও বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নেওয়া ব্যবস্থা মডেল হিসেবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কাজেও ব্যবহার করার বিষয়ে চিন্তা করা উচিৎ।

Comments

The Daily Star  | English
Sakib Jamal. Photo: Crain's New York Business. Image: Tech & Startup

Bangladeshi Sakib Jamal on Forbes 30 under 30 list

Bangladeshi born Sakib Jamal has been named in Forbes' prestigious 30 Under 30 list for 2024. This annual list by Forbes is a compilation of the most influential and promising individuals under the age of 30, drawn from various sectors such as business, technology, arts, and more. This recognition follows his earlier inclusion in Crain's New York Business 20 under 20 list earlier this year.

3h ago