বইমেলা: ছুটির দিন ছাড়াও লোক সমাগম বাড়ছে
‘করোনা বাড়ছে, মেলা হবে না’। ‘হলেও মানুষ আসবে না’। এইসব নেতিবাচক কথা মাড়িয়ে মহান একুশে মেলা শুরু হয়েছে এবং ছুটির দিন ছাড়াও মানুষের সমাগম বাড়ছে। বলা যায় ধীরে ধীরে জমে উঠছে বইমেলা।
মেলা মাঠে গিয়ে দেখা গেল এমন দৃশ্য। আজ সোমবার বিকাল ৩টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে স্টলের সামনে বিভিন্ন বয়সী পাঠকরা ভিড় করেছেন। এর মাঝে কেউ কেউ বসে আছেন জলাধারের পাশের ফাঁকা বেঞ্চে। দারুণ বাতাস, উপভোগ্য সময়। আবার কেউ কেউ বইয়ের স্টলের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। কেউ আবার বন্ধু-বান্ধবীসহ প্রিয় লেখকের বই কিনে বাসায় ফিরছেন।
দেখা হলো বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানালেন, মেলায় প্রথমে এসে ঘুরি আর বুকলেট সংগ্রহ করি, তারপর শেষের দিকে পরিবারসহ এসে বই সংগ্রহ করি। এতে সময় বেছে যায়।
গাইবান্ধা থেকে মেলায় আসা আতিফ ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন কলেজ বন্ধ, তাই খারাপ লাগছিল। এই সুযোগে এক বন্ধুকে নিয়ে বইমেলায় চলে এসেছি। এখন ভালো লাগছে।’ তার হাতে দেখা গেলো রকিব হাসানের রহস্য উপন্যাস।
সময় প্রকাশনীর প্রকাশক ফরিদ আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মেলার পরিসর বড় হওয়ায় খুব ভিড় দেখা যায় না, মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। ফাঁকা ফাঁকা হয়ে নিজের মতো করে ঘুরে বই দেখছেন। আমরা এটাই চেয়েছিলাম। তাছাড়া প্রথম দিকে মানুষ একটু কমই থাকে, ধীরে ধীরে বাড়ে।’
সময় থেকে কতগুলো নতুন বই আসছে জানতে চাইলে বলেন, ‘৬০টি নতুন বই আসবে। প্রায় ৪০টি প্রকাশিত হয়েছে, আসবে আরও ২০টি। এর মধ্যে “স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জনইতিহাস” দশ খণ্ডের একটি সিরিজ করছি। এটি আমাদের এবারের মেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আশা রাখি পাঠক আমাদের আয়োজনের সঙ্গে থাকবেন।’
মেলার নতুন বই: কবিতা ২৩টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ১৭টি, উপন্যাস ১১টি, গল্প আটটি, জীবনী চারটি, শিশুসাহিত্য তিনটি, ইতিহাস, ভ্রমণ এবং চিকিৎসা-স্বাস্থ্যবিষয়ক দুটি করে, প্রবন্ধ, রাজনীতি, বিজ্ঞান ও সায়েন্স ফিকশন একটি করে এবং অন্যান্য বই রয়েছে পাঁচটি। এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: জনক আমার, নেতা আমার’ (চারুলিপি), আনিসুজ্জামানের ‘মহামানবের সাগরতীরে’ (প্রথমা), গোলাম মুরশিদের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাংস্কৃতিক পটভূমি’ (অবসর) উল্লেখযোগ্য। চার দিনে মোট বই এসেছে ২৪০টি।
‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন মুম রহমান, মন্দিরা এষ এবং বিধান রিবেরু।
মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। আলোচনায় অংশ নেন কল্যাণী ঘোষ, বুলবুল মহলানবিশ এবং আশরাফুল আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রামেন্দু মজুমদার।
লিটলম্যাগের অভিযোগ
বইমেলায় স্টলের অবস্থান নিয়ে গত তিনদিন ধরে সবচেয়ে জোরদার অভিযোগ উঠেছে লিটলম্যাগ চত্বর থেকে। গতকাল সন্ধ্যায় সব স্টল বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করে লিটলম্যাগ চত্বর।
চত্বরের প্রকাশকদের অভিযোগ, যেখানে সব স্টল ও প্যাভিলিয়নের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বড় জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে, একই মেলায় লিটলম্যাগের জন্য খুপরি বানিয়েছে। বই রাখার সংকট। পেছনে খোলা, নিরাপত্তাহীনতা। এটি অত্যন্ত অবমাননাকর ও অন্যায়।
তাদের তীব্র প্রতিবাদে আজ দাবি মেনে নিয়ে নতুন জায়গায় দেবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে লিটলম্যাগ চত্বরের আহ্বায়ক আমিনুর রহমান সুলতান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা সবসময় তারুণ্যের মতের সঙ্গে আছি। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিই। ফলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত চত্বরের পাশে লিটলম্যাগ স্টল সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
কবি ও ‘শালুক’ সম্পাদক ওবায়েদ আকাশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকালই নতুন জায়গায় স্থানান্তরের কাজ করার কথা থাকলেও আজ বিকাল থেকে শুরু করা হয়েছে। স্টল নির্ধারণে টালবাহানা বেমানান। কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর এমন করে। কেন আমরা বার বার বলব। তবে এবার তারা দাবি মেনে নিয়েছেন। ভবিষ্যতে এমন করলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে।’
Comments