খেলা

তামিমের ফিফটির ফিফটি, মিঠুনের ঝড়ে বাংলাদেশের লড়াইয়ের পুঁজি

ডানেডিনে প্রথম ম্যাচে মাত্র ১৩১ রানে গুটিয়ে যাওয়ার দুর্দশা থেকে বেরিয়ে ক্রাইস্টচার্চে এবার বাংলাদেশ করল ২৭১ রান।
Tamim Iqbal

শুরুর ধাক্কার পর সৌম্য সরকারের সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে টানলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তুলে নিলেন ওয়ানডেতে পঞ্চাশতম ফিফটি। সেঞ্চুরির আভাস দেওয়া ইনিংস রান আউটে থামলেও মোহাম্মদ মিঠুনের ঝড়ো ফিফটিতে ঠিকই লড়াইয়ের পূঁজি পেয়ে গেল বাংলাদেশ।

ডানেডিনে প্রথম ম্যাচে মাত্র ১৩১ রানে গুটিয়ে যাওয়ার দুর্দশা থেকে বেরিয়ে ক্রাইস্টচার্চে এবার বাংলাদেশ করল  ২৭১  রান। অধিনায়ক তামিম করেন সর্বোচ্চ ৭৮ রান, মিঠুনের ব্যাট থেকে আসে ৫৭ বলে ৭৩ রানের ভীষণ কার্যকর এক ঝড়ো ইনিংস।

অথচ এদিনও শুরুটা ছিল গুমট। জমা হচ্ছিল নিকষ কালো মেঘ। তা কাটিয়ে চ্যালেঞ্জিং স্কোরে যাওয়ায় তৃপ্ত হতে পারে বাংলাদেশ। যদিও হেগলি ওভালের বাইশগজ ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো। ২৭২ রান তাড়া করে জেতা এখন খুব বেশি কঠিন হওয়ার কথা না। ম্যাচ জিততে তাই বোলিং-ফিল্ডিংয়েও সেরাটা করতে হবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের আশার কথা উইকেটে বল কিছুটা গ্রিপ করছে। মোস্তাফিজুর রহমানের পেস আর স্পিনারদের বল এখানে হতে পারে কার্যকর। 

টস হেরে ব্যাট করতে গেলে  নিউজিল্যান্ডের  কন্ডিশনে শুরুটা হয় কঠিন। এবারও তা হলো। লিটন দাস আগের ম্যাচে থিতু হয়ে ফিরেছিলেন। এবার রানের খাতা খুলতে পারেননি। ম্যাট হেনরির বলটাতে একটু বাড়তি বাউন্স ছিল। লিটন শর্ট মিডউইকেটে ফিল্ডার দেখেও পুল করতে গিয়ে বলটা নিচে রাখতে পারেননি। ৪ রানে প্রথম উইকেট হারানোয় শঙ্কা জেগেছিল আগের ম্যাচের পুনরাবৃত্তির।

সৌম্য  নেমে যেভাবে ধুঁকছিলেন তাতে সেই শঙ্কা উবে যাচ্ছিল না। এর আগে নিউজিল্যান্ডে বরাবরই সাবলীল সৌম্যর শরীরী ভাষায় ছিল আত্মবিশ্বাসের অভাব। আরেক প্রান্তে অধিনায়ক তামিম দেন ভরসা। রানের চাকা সচল থাকে তার ব্যাটে। কঠিন সময় পার করে সৌম্যও থিতু হয়ে যান। জমে উঠে দুজনের জুটি। কাইল জেমিসনকে স্ট্রেট ড্রাইভ, জিমি নিশামকে পুল করে সৌম্যও খোলস ছেড়ে বেরুনোর আভাস দেন।

তামিম হেনরিকে এক ওভারে তিন চার মেরেই ছন্দ দেখিয়েছিলেন। তা ধরে রেখে রান আসতে থাকে। বোল্টের বলে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন। জেমিসনের বলে আউট ভেবে ফিরেই যাচ্ছিলেন। তামিমের ফিরতি ক্যাচ লাফিয়ে ধরে উল্লাস করে নিশ্চিত ছিলেন জেমিসন। মাঠের আম্পায়ারের সফট সিগন্যালও ছিল আউট। কিন্তু রিপ্লে দেখতে গিয়ে টিভি আম্পায়ার দেখলেন বল ধরলেও পরে মাটিতে লাগিয়ে দেন জেমিসন।

মিচেল স্যান্টনারকে দেখে আরও আগ্রাসী হতে গেলেন দুজন। স্যান্টনারকে সৌম্য কাট করে চার বের করার পর ড্যারেল মিচেলকে ডাউন দ্য উইকেটে ছক্কায় উড়ান। অতিরিক্ত মারার নেশাই কাল হয়ে যায় তার। স্যান্টনারকে ডাউন দ্য উইকেটে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে হন স্টাম্পিং। এক পর্যায়ে ২৩ বলে ২ করা থেকে বেরিয়ে ৪৬ বলে ৩২ করে থামেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ভাঙ্গে ৮১ রানের জুটি। 

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ফিফটির ফিফটি করার পর তামিম হয়ে যান আরও আগ্রাসী। দ্রুত রান আসতে থাকে তার ব্যাটে। সেঞ্চুরিটা মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ অধিনায়কের একদম পাওনা। অথচ কোন বোলার নয় তার সেঞ্চুরি কাটল রান আউটের দুর্দশা। নিশামের বল হালকা করে ঠেলে রান নিতে ছুটেন মুশফিক। সাড়া দিয়ে পৌঁছাতে পারেননি তামিম। নিশাম ফুটবলের স্কিল কাজে লাগিয়ে পা দিয়ে  আঘাত করেন স্টাম্প।  ১০৮ বলে ১১ চারে ৭৮ তামিমের আউটের সঙ্গে যেন বড় চ্যালেঞ্জিং পূঁজির পথেও লাগে ধাক্কা।

মুশফিক যখন নামেন তখন ছিল কেবল রান বাড়ানোর তাড়া। এমন অবস্থায় বলে-রানে ভারসাম্য রাখতে মুশফিক কিছুটা ভুগছিলেন। কিছুটা বাড়তি ডটবলের চাপ বাউন্ডারিতে কমান। কিন্তু পুরোটা পুষিয়ে দেওয়ার আগে ফিরতে হয়েছে তাকে। ৪১তম ওভারে স্যান্টনারের বল পেটাতে গিয়ে ক্যাচ যায় মিড অনে। ৫৯ বল খেলে ৩৪ করেন মুশফিক।  মোহাম্মদ মিঠুন শুরু থেকেই সাবলীল। বল নষ্ট না করে রান আনতে থাকেন তিনি। ৪৩ বলে ছক্কা মেরে পুরো করেন ফিফটি। মুশফিকের সঙ্গে ৫১, মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৬১ রানের  আরও দুই জুটিতে অবদান তারই বেশি। 

শেষের ঝড়ের প্রত্যাশা ছিল আরেকজনের ব্যাটে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ঠিক সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। ৪৮তম ওভারে জেমিসনের বলে ক্যাচ উঠিয়ে ফেরার সময় তার রান ছিল ১৭ বলে ১৬।

মিঠুন আর হাল ছাড়েননি। একদম শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন। ইনিংসের শেষ বলেও মেরেছেন বাউন্ডারি। তার ৫৭ বলে ৬ চার, ২ ছক্কার ইনিংসটাই বাংলাদেশের লাইফলাইন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭১/৬  (তামিম ৭৮, লিটন ০, সৌম্য ৩২, মুশফিক ৩৪, মিঠুন  ৭৩*, মাহমুদউল্লাহ ১৬, শেখ মেহেদী ৭, সাইফুদ্দিন ৭*   ; বোল্ট ১/৪৯, হেনরি ১/৪৮, জেমিসন ২/৩৬, নিশাম ০/৭৩, স্যান্টনার ২/৫১, মিচেল ০/৮) 

Comments

The Daily Star  | English

Quake triggers panic, no damage reported

The magnitude 5.6 quake that struck the country in the morning triggered widespread panic, but there was no report of major casualties or damages

2h ago