কোভিড হাসপাতালের সামনে ছাত্রলীগের আনন্দ র‍্যালি, গণজমায়েত

নারায়ণগঞ্জে ৯ মাস পর করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা যখন আবারও ঊর্ধ্বমুখী তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহরে বিশাল র‍্যালি বের করেছে। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই নারায়ণগঞ্জের কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের সামনে আজ বুধবার কয়েক হাজার নেতাকর্মী বাদ্য-বাজনা নিয়ে উল্লাস, গণজমায়েত ও আনন্দ র‌্যালি করে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। তাদের জমায়েত চলাকালে হাসপাতালের ভেতর থেকে তত্ত্বাবধায়ক বাইরে এসে আয়োজকদের নিষেধ করলেও নেতাকর্মীরা মানেনি।
নারায়ণগঞ্জের খানপুরে কয়েক হাজার নেতাকর্মী বাদ্য-বাজনা নিয়ে উল্লাস, আনন্দ র‍্যালি ও গণজমায়েত করে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জে ৯ মাস পর করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা যখন আবারও ঊর্ধ্বমুখী তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহরে বিশাল র‍্যালি বের করেছে। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই নারায়ণগঞ্জের কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের সামনে আজ বুধবার কয়েক হাজার নেতাকর্মী বাদ্য-বাজনা নিয়ে উল্লাস, গণজমায়েত ও আনন্দ র‌্যালি করে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। তাদের জমায়েত চলাকালে হাসপাতালের ভেতর থেকে তত্ত্বাবধায়ক বাইরে এসে আয়োজকদের নিষেধ করলেও নেতাকর্মীরা মানেনি।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ আনন্দ র‌্যালির আয়োজন করে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বুধবার বিকেল ৩টা থেকে শহরের খানপুর এলাকায় কোভিড হাসপাতালের সামনের সড়কে ভুভুজেলাসহ নানা ধরনের বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে। একের পর এক স্লোগান, বাদ্য-বাজনায় ছাত্রলীগের কর্মীরা উল্লাস করতে শুরু করে। তাদের অর্ধেকের বেশি নেতাকর্মীর মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

এক পর্যায়ে নেতাকর্মীরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঢুকে মিছিল করতে থাকলে করোনাসহ সাধারণ রোগীদের আসা যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালে। 

বিকেল ৪টায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসমাঈল রাফেল ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দুর নেতৃত্বে হাসপাতালের সামনে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে আনন্দ র‌্যালি বের হয়। এসময় তাদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘এসব ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বললেও তারা রোগীদের যাতায়াতের জন্য রাস্তা ছাড়েনি। প্রায় ১ ঘণ্টা রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’ 

নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের (কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল) তত্ত্বাবধায়ক আবুল বাশার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এজন্য সভা, সমাবেশ এগুলো করা ঠিক না। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। আজকেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুই জন মারা গেছেন।’

হাসপাতালের সামনে ছাত্রলীগের সমাবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারা সমাবেশ করেছে সেটা জানি না। তবে আমি নিজে গিয়ে তাদের এখানে সমাবেশ করতে নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা কেউ আমার কথা রাখেনি। হাসপাতালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এভাবে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে সমাবেশ করলে রোগীদের সমস্যা হয়। তাছাড়া এটি করোনা হাসপাতাল এখানে আমরাই পিপিই পরে রোগীদের সেবা দেই। সেখানে এভাবে সমাবেশ করা ঠিক হয়নি। এতে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজকে এ বিষয়ে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক ব্যবহার করে সবাইকে র‌্যালিতে আসার জন্য আমরা আগেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছি। সবাই মাস্ক পরে আসে। তবে গরমে ঘামে মাস্ক ভিজে গেলে আমরাসহ অনেকেই মাস্ক ফেলে দিই। তাছাড়া সবার মাস্ক ছিল, কেউ কেউ গরমে থুতনিতে বা গলায় ঝুলিয়ে রাখে।’

হাসপাতালের সামনে সমাবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েকশ নেতাকর্মীর সমাগম উপলক্ষ্যে ও সংক্ষিপ্ত প্রোগ্রাম হওয়ায় ওই জায়গায় করা হয়। তবে কেউ হাসপাতালের ভেতরে মিছিল করেনি। কয়েকজন এমনিতে ভেতরে যেতে পারে সেটা জানা নেই। আর হাসপাতালের প্রধান গেইট বন্ধ হয়নি। তাছাড়া হাসপাতালের সামনে বাদ্য-বাজনা বন্ধ রাখা হয়। যখন মিছিল বের হয় তখনই বাদ্য-বাজনা বাজানো হয়।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নিষেধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমাদের কোন নিষেধ করেনি। তার সঙ্গে আমার কোন দেখা হয়নি।’

উল্লেখ্য জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮২ জনের। যা গত ৯ মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত।

এছাড়া কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত দুই জন ও সন্দেহভাজন করোনা রোগী দুই জন মারা গেছেন। এছাড়াও হাসপাতালের আইসিইউতে ৬ জন চিকিৎসাধীন। 

বিকেলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতন করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।’

Comments