জঙ্গি নাশকতা নয়, পরিত্যক্ত শেল থেকে গাইবান্ধায় বিস্ফোরণ: র‌্যাব

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বিস্ফোরণের সঙ্গে জঙ্গি বা নাশকতার পরিকল্পনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বিস্ফোরণের সঙ্গে জঙ্গি বা নাশকতার পরিকল্পনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরায় র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘গতকাল বিকেল ৪টার দিকে গোবিন্দগঞ্জের মেকুরাই নয়াপাড়া গ্রামে কাসেম মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিনের বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পর র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে খায়রুজ্জামান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘র‌্যাব তদন্তে নিশ্চিত হতে পেরেছে যে, এটি কোনো জঙ্গি হামলা ছিল না। ওই ঘটনায় মেকুরাই নয়াপাড়া গ্রামে কাসেম মিয়ার ছেলে বাড়ির মালিক বোরহান উদ্দিন, একই গ্রামের অহেদুল মিয়া ও মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিড়াডাঙ্গা গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে রানা মিয়া নিহত হয়েছে। ঘটনায় একজনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাব গ্রেপ্তার করে খায়রুজ্জামানকে।’

খায়রুজ্জামানের জবানবন্দি ও সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ঘটনা সম্পর্কে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, ‘কিছুদিন আগে বগুড়ার মোকামতলায় একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছিল। সেখানে কেয়ারটেকার ছিলেন হাবিব। মাটি খনন করতে গিয়ে সেখান থেকে মর্টার শেলটি উদ্ধার হয়। হাবিবের কাছ থেকে সেটা স্থানীয় বোরহান ও খায়রুজ্জামান সংগ্রহ করে বোরহানের বাসায় রাখে। এটা মোট পাঁচজন জানতেন।’

‘অহেদুল মিয়া প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিস, স্বর্ণ মুদ্রা ও ম্যাগনেট জাতীয় জিনিস বিক্রি করতেন বলে এলাকায় পরিচিতি আছে। অহেদুলই জানিয়েছিল, ওই রকেট সদৃশ বা মর্টার শেলটি মূল্যবান হতে পারে। নিহত রানা একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। তার এসব কাটাকাটি সম্পর্কে জ্ঞান ছিল। বোরহান উদ্দিন, খায়রুজ্জামান ও রানা গোবিন্দগঞ্জ বাজার ধরে ধারালো সামগ্রী ক্রয় করে বোরহানের বাসায় যায়। কিন্তু তাদের কারিগরি জ্ঞান না থাকলেও তারা সেটি কাটাকাটি করার চেষ্টা করেন। এ সময় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মর্টার শেলটি বিস্ফোরিত হয়। তাৎক্ষনিকভাবে নিহত হন তিন জন। হাবিব ও খায়রুজ্জামান দূরে থাকায় বেঁচে যান,’ যোগ করেন তিনি।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে র‌্যাবের তদন্তে প্রতীয়মান হয় যে, এটি কোনো জঙ্গি হামলা ছিল না। লাভের আশায় স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় এটি করতে চেয়েছিলেন তারা। অর্জিত মুনাফা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল বলে জানিয়েছেন গ্রেপ্তার খায়রুজ্জামান।’

খায়রুজ্জামান ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং তাকে আইনগত প্রক্রিয়ায় গোবিন্দগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হবে বলে জানায় র‌্যাব।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হলেও র‌্যাব মূল ঘটনা স্পষ্ট করেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, গোবিন্দগঞ্জে জঙ্গি হামলা বা নাশকতার কোনো আগাম তথ্য ছিল না। আর এতে কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাও নেই।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই মর্টার শেলটি মাটির নিচে ছিল। কোন দেশ তৈরি বা এটি কেমন ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল তা জানার চেষ্টা করতে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে।’

Comments